প্রকাশিত: ১৩/০২/২০১৮ ৯:২৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৬:৩৯ এএম

নিউজ ডেস্ক::
বহুল প্রতীক্ষিত চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক তথা ফোরজি চালু হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি। এর দুই দিন আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক কর্তৃপক্ষের হাতে ফোরজি লাইসেন্স তুলে দেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তাদের মধ্যে সবার আগে ফোরজি সেবা চালু করতে চায় বাংলালিংক।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ক্লাবে স্পেক্ট্রাম (তরঙ্গ) নিলাম শেষে ফোরজি লাইসেন্স তুলে দেওয়ার ঘোষণা আসে। সেখানে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘লাইসেন্স হাতে পেলেই অপারেটররা ফোরজি সেবা দিতে পারবে।’
তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠান শেষে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক অস ঘোষণা দেন, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ফোরজি সেবা চালু করবেন তারা।
অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ফলি বলেন, ‘আমরা লাইসেন্স পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ফোরজি সেবা চালু করবো।’
গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী। ফলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন এইচডি ভিডিও ও লাইভ টিভি স্ট্রিমিং আর ঝকঝকে ভিডিও কল এবং অতি দ্রুত গতিতে যে কোনও কিছু ডাউনলোড করতে পারবেন। গ্রামীণফোনের আধুনিক নেটওয়ার্ক উপভোগের জন্য থ্রিজি সিম পরিবর্তন করে ফোরজি সিম নিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ই নিজেদের মূল কথা বলে উল্লেখ করেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী। তিনি জানিয়েছেন, গ্রাহককে মানসম্মত সেবা দিতে গ্রামীণফোন গত বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো উন্নত করেছে। তার ভাষ্য, ‘ফোরজির প্যাকেজ কী হবে তা আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো। আর ফোরজির গাইডলাইনে যা উল্লেখ থাকবে সেই অনুযায়ী গতি নিশ্চিত করা হবে।’

এদিকে দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটর ফোরজি চালুর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তাদের ফোরজি সিম বিক্রি শুরু হয়েছে অনেকদিন হলো। গ্রাহকরা সিম রিপ্লেস করতে গেলেও দেওয়া হচ্ছে ফোরজি সিম।

অপারেটরগুলো ইতোমধ্যে ‘টেস্ট রান’ হিসেবে ফোরজি সফলতা পেয়েছে। সেই হিসেবে বাংলালিংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ফোরজি সেবা চালুর শুরুতে ঢাকা ও খুলনায় গ্রাহকদের সেবা দিতে চায় অপারেটরটি।

মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ফোরজি চালুর দিনক্ষণ ঘোষণা না দিলেও তারাও যে কোনও সময় সেবা দিতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে। অপারেটরটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির (কমিউনিকেশন অ্যান্ড করপোরেট রেসপনসিবিলিটি) বলেন, ‘আমরা আরও উন্নত মানের ফোরজি সেবা নিয়ে আসছি।’

গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের পাশাপাশি ফোরজির লাইসেন্স পেতে সিটিসেল আবেদন করলেও তরঙ্গ নিলামে অংশ নেয়নি। তরঙ্গ না থাকায় সিটিসেল ফোরজি চালু করতে পারবে না এই শর্তে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে অপারেটরটি। ফলে চূড়ান্ত পর্যায়ে লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকসহ চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর।

ফোরজি দিয়ে কী হবে জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, মানুষ কিন্তু কথা বলার চেয়ে ডাটার (ইন্টারনেট) ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। গোটা পৃথিবীই ডাটার ওপর পরিচালিত হচ্ছে। এখন ডাটা অনেক দামি, কিন্তু তা ধীরগতির। ইন্টারনেট থেকে কিছু ডাউনলোড করতে গেলে অনেক সময় লাগে। ফোরজি এলে এসব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতির পেছনে ডাটার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। তার কথায়, ‘এই যে আইটিভিত্তিক শিল্প, তা কিন্তু ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করেই অগ্রসর হয়। যত বেশি গতি পাওয়া যাবে এই শিল্প খাতের পরিধি তত বেশি বাড়বে। ফোরজি এলে মোবাইল ফোনে যে কোনও কনটেন্ট দ্রুত ডাউনলোড করতে পারবো। এখন কিন্তু তা পারি না।’

বিটিআরসি’র একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ফোরজি এলে ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা বাড়বে। ফলে মোবাইল ইন্টারনেটের গতিও বৃদ্ধি পাবে অনেকাংশে। একইসঙ্গে মোবাইল ফোনের সেবার মান (ভয়েস ও ইন্টারনেট) অনেক ভালো হবে।’

ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘ওটিটি (ওভার দ্য টপ) সেবা তথা যোগাযোগভিত্তিক অ্যাপগুলোর কোয়ালিটি অব সার্ভিস অনেক ভালো হবে। ভাইবার, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপে কথা আরও পরিষ্কার শোনা যাবে, ছবি হবে ঝকঝকে। টেলিমেডিসিন সেবাও হবে আরও উন্নত। যে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও দ্রুত গতির হবে।’

অনলাইনভিত্তিক সরকারি সেবাগুলো আরও ভালোভাবে পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বিটিআরসি’র এই কর্মকর্তা। যে কোনও কিছু দ্রুত ডাউনলোড করা ও অ্যাকসেস করার ক্ষেত্রে সময় অনেক বাঁচবে বলেও তিনি মনে করেন।

এছাড়া মোবাইল ওয়েব সেবা, আইপি টেলিফোনি, গেমিং সেবা, এইচডিটিভি, হাই-ডেফিনেশন মোবাইল টিভি, ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন (থ্রিডি টিভি) ও ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা পাওয়া যাবে ফোরজির মাধ্যমে।

গত ২৯ নভেম্বর সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ঘোষণা দেয়, নতুন বছরে দেশবাসীর জন্য উপহার হতে যাচ্ছে ফোরজি। এই সেবার সংশোধিত গাইডলাইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পরেই এ ঘোষণা আসে।

সেই সময় জানানো হয়— ফোরজির গতি হবে ২০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। যদিও পরে এই গতিও সংশোধন করা হয়েছে। তবে ফোরজির গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড গতি ১৬ এমবিপিএস। বাংলাদেশে ফোরজির ডাউনলোড গতি ১ এমবিপিএস থেকে শুরু করে এর ১ হাজার ২৪ গুণ, অর্থাৎ ১ জিবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে।

ফোরজি কী
লং টার্ম ইভোল্যুশনকেই (এলটিই) চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক বা ফোরজি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই নেটওয়ার্কে সেকেন্ডে ২ মেগাবাইট থেকে ৪০ মেগাবাইট পর্যন্ত গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে। ফোরজি হলো ইন্টারনেট গতির ক্ষেত্রে বড় একটি পর্যায়। তাত্ত্বিকভাবে এর ডাউনলোড গতি ১০০ এমবিপিএস থেকে ১ জিবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে।

অন্যদিকে যে নেটওয়ার্ক সেকেন্ডে কমপক্ষে ২০০ কিলোবাইট তথ্য স্থানান্তর করতে পারে সেটাই থ্রিজি নেটওয়ার্ক। থ্রিজিতে অনলাইন টিভি, হাই ডেফিনেশন ভিডিও, ভিডিও কলিং, ভিডিও গেমসগুলো ডেভেলপ হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, একজন থ্রিজি ব্যবহারকারী ইন্টারন্টে সেকেন্ডে ১৪ মেগাবাইট গতি পেলে তিনিই ফোরজিতে ১ জিবিপিএস পর্যন্ত গতি পাবেন।

পাঠকের মতামত

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...