প্রকাশিত: ২৯/০২/২০২০ ৯:২৯ এএম

প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে গত প্রায় দুই বছরে মিয়ানমারকে এক লাখ ২৩ হাজার ৯১৯ জন রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ এ পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার ৩৩৬ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার। গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) দপ্তর থেকে এ তথ্য মিলেছে।

জানা গেছে, পরিচয় নিশ্চিত হওয়া রোহিঙ্গারাও মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিরতে রাজি নয়। মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ বাড়লেও কবে নাগাদ সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তা কেউই বলতে পারছেন না। তা ছাড়া মিয়ানমার যে ধীরগতিতে পরিচয় যাচাইয়ের কাজ করছে তাতে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
আরআরআরসির দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢল নামার আগে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’সহ এ সংখ্যা ৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৮ (জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের হিসাব অনুযায়ী)।

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিরও আহ্বান জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাশ গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য ভারতের মানবিক সহায়তার পঞ্চম চালান হস্তান্তর করেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য ভারত মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে। সেদিনই নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের বৈঠক শেষে দুই দেশের যৌথ ঘোষণায় রাখাইন পরিস্থিতি স্থান পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় মিয়ানমার সরকারের নেওয়া সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলোর প্রতি ভারত তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রতি ভারত সমর্থন জানিয়েছে। ভারত বলেছে, প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত, স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একসঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে বলে ভারত আশা করছে। মিয়ানমার আবারও রাখাইন পরিস্থিতিকে জটিল হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি এই জটিলতা অনুধাবনের জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা সামনে রেখে রাখাইন রাজ্যে উন্নয়নের জন্য অন্তত ছয়টি চুক্তি হয়েছে। এরই মধ্যে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য ২৫০টি বাড়ি নির্মাণ করেছে ভারত। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সামনে রেখে সেখানে নেওয়া ভারতীয় প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি ও নেপিডো।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, ভারত দ্রুত, টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পক্ষে। ভারত মনে করে, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়েই এ সংকটের সমাধান।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত আছে। জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ড. মুলার গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি ঘোষণা দেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে জার্মানির উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিত থাকবে।

রোহিঙ্গা জেনোসাইড ও নিপীড়নের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) জবাবদিহির মুখে পড়ছে মিয়ানমার। গাম্বিয়ার পর মালদ্বীপ আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরূদ্ধে মামলায় বাদীপক্ষ হওয়ার জন্য আবেদন করার ঘোষণা দিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র মতে, আগামী দিনগুলোতে আরো কিছু দেশ এই মামলায় যুক্ত হতে পারে।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্ল্যাশেলেট গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে আলোচনায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ অন্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের মূল কারণগুলো সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...