প্রকাশিত: ১৩/০৩/২০১৮ ৮:০৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৩১ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
বল পূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অন্তত ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশে। মিয়ানমারে নির্যাতনকারী সেনাদের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে এ যাত্রায় প্রায় ৭লক্ষ রোহিঙ্গা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। তাদের আশ্রয় ও রক্ষা করতে গিয়ে বিপন্ন এশিয়ান প্রজাতির অন্তত ৩৮টি হাতি বর্তমানে উদ্বাস্তু প্রায় দিনযাপন করছে। এসব হাতিগুলো গত কয়েকমাস ধরে আবাস স্থল হারিয়ে,চলাচলের প্রতিবন্ধকতায় পড়ে চরম খাদ্য সংকটের কবলে পড়ে ভবঘুরের ন্যায় উম্মাতাল হয়ে পড়েছে। হাতিগুলোর হামলায় ইতিমধ্যে কুতুপালং ও বালুখালীতে প্রাণ হারিয়েছে ১২ জন মানুষ। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা ও শতাধিক সেবা সংস্থার আগ্রাসনে হাতি সহ এলাকার অসংখ্য বন্য প্রাণী বর্তমানে চরম দুরাবস্থার মুখে পড়ে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষন বিদগণ জানিয়েছেন।

গত ৩ মার্চ বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস উদযাপন উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা পর্যায়ের একটি আলোচনা সভা উখিয়া উপজেলা হল রুমে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার একরামুল ছিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির বলেন,রোহিঙ্গা ইস্যুতে বন বিভাগ খুবই অস্বস্থিতে রয়েছে। সরকার রোহিঙ্গাদের আবাসন সুবিধার জন্য তিন হাজার একর বন ভূমি বরাদ্ধ দিয়েছে। তবে ইতিমধ্যে ৫ হাজার একরের অধিক বনাঞ্চল ও ভূমি রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা দখল করেছে। এ বাড়তি দখল প্রক্রিয়া দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসব ভূমির প্রায় সব টুকু বন বিভাগের হলেও বন বিভাগের তদারকির ব্যবস্থা বা সম্পৃক্ততা রাখা হয়নি। এতে বন বাগান উজাড়, পাহাড় কেটে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন গঠানো, প্রাকৃতিক বন জঙ্গল নিধন প্রতিরোধে বন বিভাগ এগিয়ে গেলে সংশ্লিষ্টরা উপর মহলের দোহাই দিয়ে থাকে। অথচ এ সংক্রান্ত বৈধ অনুমতি পত্র তারা দেখাতে পারে না।

কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ উদ্বাস্তু শিবিরের অবস্থান উখিয়ার কুতুপালং থেকে বালুখালী মেঘা ক্যাম্প।এখানে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ রোহিঙ্গার অবস্থান।এ কারনে সংলগ্ন এলাকায় বিচরনকারী বন্য হাতি সহ অসংখ্য বন্য প্রাণী জীববৈচিত্র্য বর্তমানে কঠিন দুঃসময় অতিবাহিত করছে। এ ভাবে চলতে থাকলে এসব বন্য প্রাণীর অনেক গুলো অস্থিত্বহীন হয়ে পড়ার আসংখ্যা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিপন্ন প্রায় এশিয়ান প্রজাতির হাতিগুলো নানা প্রতিকূলতায় হারিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের কক্সবাজারের কলাতলী থেকে উখিয়ার ইনানী হয়ে টেকনাফ নেছারপার্ক সদর পর্যন্ত বিস্তৃত পাহাড় পর্বত, জঙ্গল এলাকায় বর্তমানে ৩৮টির মত হাতি রয়েছে। ৭০-৮০ দশকে এ অঞ্চলে এর তিনগুণ হাতি ছিল। বিস্তীর্ণ এ বনাঞ্চল ছিল প্রাকৃতিক বন। এখানে ঘন বন, অসংখ্য জাত-প্রজাতির গাছপালায় ভরপুর ছিল। সেখানে হাতি, বাঘ, হরিণ, চিতাবাঘ, মেছোবাঘ সহ অসংখ্য প্রজাতির স্তন্য ও সরীসৃপ প্রাণী ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে বনাঞ্চল উজাড় হওয়া, এক শ্রেণী শিকারীর লোলুপ দৃষ্টির কারনে বর্তমানে জীব প্রাণী বৈচিত্র্যের সংকট কাল চলছে।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে ৫ হাজার একর বন ভূমির উপর রোহিঙ্গা ও এনজিও গুলো অবস্থান করছে। এরা প্রতিনিয়ত পাহাড় ও গাছ কেটে বন ভূমির বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। আগামী বর্ষাতে এখানে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেটিভ ন্যাচার-আইইউসিএন এর প্রকল্প সমম্বয়কারী হাসিব মোঃ ইরফান উল্লাহ বলেন,তিন বছর পূর্বে হাতি গণনা করা হয়েছিল উল্লেখিত বনাঞ্চলে। তখন সর্বোচ্চ ৪৫টির মত হাতির বিচরন ছিল। বর্তমানে ৩৮টির মত হাতির অবস্থান ধারনা করা হচ্ছে। উখিয়ার হাতির নিরাপদ আবাস ও বিচরন স্থল, করিডোর বর্তমানে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় স্থল ও সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর নানা স্থাপনা হওয়াতে তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বন্য হাতি গুলো মাঝে মধ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠে তখন যা পায় তার উপর হামলা চালাই। এ স্বল্প সময়ে ১০ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন স্থানীয় গ্রামবাসী হাতির আক্রমনে প্রাণ হারিয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিপুল পরিমাণের সম্পদ ও শত শত ঘরবাড়ি।

বন সম্পদ, বন্য প্রাণী সংরক্ষন সংশ্লিষ্টদের মতামতের সাথে সরজমিনে দেখা গেছে আরো খারাপ পরিস্থিতি। বালুখালী, কুতুপালং, হাতির ডেরা, জুমের ছড়া, মধুর ছড়া, লম্বাশিয়া পুরো এলাকাটি বেষ্টিত রয়েছে একাধিক পাহাড়ি ছড়া ও খাল নিয়ে। এসবের সবটি ছিল বনাঞ্চল, বনায়ন, মাঝারি জঙ্গল।

স্থানীয় মধুর ছড়া এলাকার আব্দুল লতিপ (৬০) জানালেন, হাতিরা অত্যাধিক গরম বা বেশী তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। তাই প্রায় সহনীয় ও এলাকাতে ঘুরেফিরে কখনো একা, কখনো দল বেধে দিবা রাত্রি বন্য হাতিগুলো ঘুরে বেড়ায়। তবে দিনের চেয়ে রাতের বেলায় হাতির বিচরন বেশী।

কুতুপালং এলাকার বকতিয়ার মেম্বার জানান, এখানকার হাতি ও মিয়ানমারের হাতি গুলোর মধ্যে বেশ সম্পর্ক। অনেক সময় হাতির সংখ্যা কম বেশী হয়। কারন উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্রর উত্তর পাশে কুতুপালং হয়ে কেটনাফ সড়কের উপর দিয়ে যুগ যুগ ধরে বন্য হাতির দল চলাফেরা করে আসছে। মূলত এটিই হাতির চলাচলের পথ বা করিডোর।

এখানে বন বিভাগের এ সম্পর্কিত সাইনবোর্ড ও রয়েছে। এ করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের হাতিরা রীতিমত এপার ওপার যাতায়াত করত। কুতুপালং এ করিডোরের এ স্থান থেকে মিয়ানমারের দূরত্ব সর্বোচ্চ ৫ কি:মিটার পাহাড়ি ও জঙ্গলাকীর্ণ। পরিডোর বন্ধ করে জাতিসংঘ শরনার্থী সংস্থা গড়ে তুলেছে শরনার্থী ট্রানজিট ক্যাম্প। এনজিও এমএসএফ ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি করেছে বিশাল বনাঞ্চল ঘিরে হাসপাতাল। বন্য হাতি গুলো যেমন আবাস ও বিচরন স্থল হারিয়ে ফেলেছে তেমনি খাদ্য সংকটে পড়ে করিডোর বন্ধ হওয়ায় মিয়ানমারের দিকেও যেতে পারছে না।

এ অবস্থায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে অবরুদ্ধ ও উদ্বাস্তু প্রায় বন্য হাতির দল আরো উম্মাতাল হয়ে বেপরোয়া ভাবে ভয়ংকর আচরন করতে পারে বলে স্থানীয় লোকজন ও বন বিভাগের দাবি।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...