প্রকাশিত: ২৪/০৫/২০২২ ১২:৫৫ পিএম

রেজাউল করিম চৌধুরীঃ
গত দুই দিন ধরে কক্সবাজার সফররত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (এইচসি) মিঃ ফিলিপ গ্রান্ডির সাথে কথা বলার জন্য যারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ।

প্রথমেই আমরা হতাশা প্রকাশ করতে চাই যে, মিয়ানমার সরকারকে তার নাগরিকদেরকে ফিরিয়ে নিতে বা তাঁদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বাধ্য করার বিষয়ে জাতিসংঘ এবং এর বড় সদস্য দেশগুলির কাছ থেকে রাজনৈতিক চাপ এখনো খুবই অপ্রতুল। দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর একটি পরিকল্পনা রয়েছে এবং ইতিমধ্যে সরকার কক্সবাজারে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রায় ৭০টি প্রকল্পে ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন, আমরা বাংলাদেশি এবং কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ এর সুবিধা নিতে চাই। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনকেই একমাত্র স্থায়ী সমাধান মনে করি; এক্ষেত্রে অন্য কোনো বিকল্প চিন্তার সুযোগ নেই। আমরা উল্লেখ করতে চাই যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আমরা যেমন ১৬ কোটি মানুষের জন্য খাবার যোগাড় করতে পারলো, প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ১০ লাখ শরণার্থীকেও খাওয়াতে পারবো।

আমাদের সম্পদ, কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সম্পদ ঝুঁকিতে পড়েছে। এই সংকট সমাধানে আমরা দুটি সহজ কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপের প্রস্তাব করতে চাই- প্রথমত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, কারণ প্লাস্টিকের অনেক বিকল্প রয়েছে। প্লাস্টিক আমাদের জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। দ্বিতীয়ত: অগভীর এবং গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার বন্ধ করা। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমাদের বিশুদ্ধ পানীয় জল সংরক্ষণ করতে হবে। উখিয়ায় ইতিমধ্যে নলকূপ স্থাপনের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে তুলনামূলকভাবে গভীরে পানি খুঁজতে হচ্ছে বললে আমরা জানতে পারছি। এ সমস্যা সমাধানে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহারের উপর, বিশেষ করে নাফ নদীর পানি ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে।

এইচসি ফিলিপ গ্র্যান্ডি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ধারণাকে উৎসাহিত করতে, ভূ-পৃষ্ঠের পানির ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মিঃ জোহানেসের সাথে আলোচনা করেছেন।

দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় সবুজায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সফলতার জন্য আমরা জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থা এবং সব ধরনের এনজিওকে ধন্যবাদ জানাই। আলোচনায় কক্সবাজারে কর্মরত প্রায় সব দাতাসংস্থার প্রতিনিধি, সেক্টর প্রধানবৃন্দ এবং আইএসসিজি সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর উপস্থিত ছিলেন। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে তারা আমাদের কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন।

আমি প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছি এবং স্থানীয়দের কাছে কীভাবে সেই প্রযুক্তিগত দক্ষতা স্থানান্তর করা যায় জানানোর জন্য অনুরোধ করেছি, কারণ রোহিঙ্গা কর্মসূচি ব্যবস্থাপনায় কক্সবাজারে বেশ কয়েকজন বিদেশি কাজ করছেন। স্থানীয় হিসাবে, আমরা এইগুলিকে সুযোগ হিসাবে বিবেচনা করি, এবং এই কারণেই আমরা স্থানীয়করণের জন্য অনুরোধ করতে চাই। এই স্থানীয়করণ স্থানীয়দের এবং স্থানীয় সংস্থাগুলির সক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করবে এবং আশা করি একদিন তারা স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগে সাড়াদান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব প্রদান করবে। স্ট্র্যাটেজিক এক্সিকিউটিভ গ্রুপ স্থানীয়করণ টাস্ক ফোর্স এবং ২০২০ এবং ২০২১-এর জন্য স্থানীয়করণের রোডম্যাপ তৈরি করেছে। LTF এর নেতৃত্বে ছিল UNDP এবং IFRC। আমি আশা করি ISCG এই রোডম্যাপ বান্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে এবং রোডম্যাপ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করবে।

কক্সবাজার এমন একটি জেলা যেখানে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় স্থানীয় সুশীল সমাজ সংগঠন বৃদ্ধির প্রবণতা কম। আমরা বিশ্বাস করি যে স্থানীয় নাগরিক সমাজ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মানবাধিকার ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক মর্যাদাকে সম্মান করার সর্বোত্তম ক্ষেত্র। আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে বিশেষ তহবিল বI পুল ফান্ডের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে একটি সক্রিয় ও সচেতন নাগরিক সমাজ রয়েছে এবং এই ধরনের তহবিলে নাগরিক সমাজের গণতান্ত্রিক মালিকানা রয়েছে, তাই আমরা এই বিষয়ে কারো কোনও একচেটিয়াত্ব দেখতে চাই না।

রেজাউল করিম চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...