প্রকাশিত: ১৩/০৯/২০১৮ ৮:১৭ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমার সেনা,বিজিপি ও সশস্ত্র রাখাইন উগ্রপন্থির নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা স্থায়ী বসবাসের সুযোগে দিন দিন বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পুর্বশত্রুুতার জের, অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ, আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদকসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে তারা। রোহিঙ্গাদের এমন আচরণ ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। সুত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধে অপরাধ ক্রমাগত বাড়ছে। গত এক বছরে রোহিঙ্গাদের হাতে ২২ জন রোহিঙ্গা খুনসহ ৪ শতাধিক অপরাধ লিপিবদ্ধ হয়েছে উখিয়া-টেকনাফে। খুন, মাদক, অস্ত্র প্রদর্শনসহ রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধে শঙ্কিত স্থানীয়রাও। মাত্র এক বছরের মাথায় এভাবে অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি চিন্তিত প্রশাসনও। সর্বশেষ গত সোমবার সন্ধ্যায় উখিয়ার সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একরামূল ছিদ্দিক কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে মদ,গাজা, হেরোইন সেবন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে ৭জনকে সাজা প্রদান করেছে। এরা হলেন- কেফারত উল্লাহ (২৮),ফজল করিম (৩২),নুর উদ্দিন (২৭),শাকের (২২) জয়নাল উদ্দীন (৩৫)ও জাকের(২০)। এরা সবাই রোহিঙ্গা। গত ৩ সেপ্টেম্বর সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের চাকমারকুলের পাহাড়ি এলাকা থেকে গলাকাটা ৩ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন-উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পের সৈয়দ হোসেনের ছেলে নুরে আলম (৪০), কুতুপালং ‘ডি’ ব্লকের জামাল হোসেনের ছেলে মোঃ আব্দুল খালেক (২০) ও ‘ই’ ব্লকের আবদুল গফুরের ছেলে মোঃ আনোয়ার (৩৩)। এরপর ওই দিন বিকেলে উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় নিখোঁজ আরও ৩ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা হলেন- বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-ব্লকের বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, জামাল হোসেন ও মো. সোলাইমান। এছাড়া (৩১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. আবু ইয়াছির (২২) নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হন। এর আগে ১৯জুন উখিয়ার বালুখালী-২ ময়নারঘোণা আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা নেতা আরিফ উল্লাহকে (৪৫) গলা কেটে হত্যা করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে বালুখালীর তাজনিমারঘোনা আশ্রয়শিবিরের মাঝি (নেতা) মোঃ ইউসুফকে।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলম ও তৈয়ুব উল্লাহ বলেন, নিহত আরিফ উল্লাহ ও মোঃ ইউসূফ উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। রোহিঙ্গাদের স্বপক্ষে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে কথা বলে তারা ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও তাদের সুসম্পর্ক ছিল। মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু রোহিঙ্গা জঙ্গিরা তাদের এই উত্থানকে সহ্য করতে পারছিল না। এ জন্য তাঁকে হত্যা করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে গত এক বছরে ২২জন রোহিঙ্গা বিভিন্ন দ্বন্ধের জেরে খুন হয়েছে বলে তারা জানান। তারা আরো বলেন, মিয়ানমারে থাকাকালীন নিজেদের মধ্যে যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয় তা বাংলাদেশে আসার পর ক্রমাগত প্রকাশ পাচ্ছে। এ অপরাধ দমনে দ্রুত প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান এসব রোহিঙ্গা নেতারা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সার্বিকভাবে নিরাপত্তার জন্য হুমকি। সামনে জাতীয় নির্বাচন, এতে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ভঙ্গ করে কিনা, বাইরের কোনো গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপ্রীতিকর ঘটনা জন্ম দেয় কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত প্রশাসনের। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে সমস্ত অপরাধ কর্মকান্ড ঘটছে তা দমনে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সজাগ রয়েছে। আর খুন, খারাবির সাথে জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...