প্রকাশিত: ২০/০৪/২০১৭ ৭:১৯ এএম

নিউজ ডেস্ক ::
সীমাহীন কলড্রপে মোবাইল গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের বারবার নির্দেশ দেয়ার পরেও কলড্রপের ক্ষতিপূরণ ফেরত দিচ্ছে না গ্রাহকদের। কলড্রপের ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে গত বছরের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। প্রায় এক বছর আগে অপারেটরদের এ নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। কিন্তু অপারেটররা বিটিআরসির নির্দেশ উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তারা গ্রাহকের কলড্রপের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ বাস্তবায়ন করার বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন এক কোটি ৮০ লাখ মিনিট কলড্রপ হচ্ছে। অপারেটররা দিনে কলড্রপ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা বা ‘টকটাইম’ ফেরত দেয়ার নির্দেশটি বাস্তবায়ন করার জন্য মোবাইল অপারেটরদের গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু জুনের মধ্যে অপারেটররা এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। সম্প্রতি বিটিআরসি কলড্রপের ক্ষতিপূরণ নিয়ে অপারেটরদের আবার চিঠি দিয়েছে। এবারের চিঠিতে বলা হয়েছে, কলড্রপের ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ছয়টি অপারেটরের দিনে মোট কলের সংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটি মিনিট। এর মধ্যে গড় কলড্রপের হার ১ শতাংশ। এ হিসাবে প্রতিদিন কলড্রপ হচ্ছে এক কোটি ৮০ লাখ মিনিট। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখ। এতে গ্রাহকপ্রতি কলড্রপের হার শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। অপারেটররা বলছে, ইন্টার-কানেকশন এক্সচেঞ্জের (আইসিএক্স) ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণেও কলড্রপ হচ্ছে। এর বাইরে ফাঁকা স্থানে হঠাৎ উঁচু ভবন নির্মাণ এবং থ্রিজি নেটওয়ার্ক কার্পেটিংয়ের কারণেও কলড্রপ হচ্ছে। কলড্রপ একদম হবে না এ কথা বলা যাবে না। নেটওয়ার্কের কারিগরি ত্রুটি কখন দেখা দেবে তা বলা যাবে না। যে কোন সময় এ ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তখন কম বেশি কলড্রপ হবে। আইটিইউর বেঁধে দেয়া নিয়মেও কলড্রপ স্বীকৃত। বিটিআরসি বলছে, কলড্রপ হতে পারে। তবে এটা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কলড্রপ হলে গ্রাহক টাকা বা সমপরিমাণ টক টাইম ফেরত পান। বিশ্বের অনেক দেশেই এ নিয়ম চালু আছে। আমরা কলড্রপের টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে অপারেটরদের বলে যাচ্ছি। কিন্তু তারা নানা কারণ দেখিয়ে এটা বাস্তবায়ন করছে না। বিটিআরসি বলছে অপারেটরদের দেয়া হিসাবের বাইরে অনেক বেশি কলড্রপ হচ্ছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি আইটিইউয়ের (আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) নীতিমালার বাইরে কতগুলো কলড্রপ হয় তা মনিটর করবে। যদি আইটিইউয়ের নীতিমালার বাইরে কলড্রপ হয় তাহলে অপারেটরকে ওই টাকা বা টক টাইম গ্রাহককে দিতে হবে। কল ড্রপের বিষয়ে মোবাইল গ্রাহকরা সিরিয়াস, মন্ত্রণালয়ও সিরিয়াস। বিটিআরসির কোয়ালিটি অব সার্ভিসের ওপর সজাগ থাকতে হবে। যে কোন গ্রাহক কলড্রপের বিষয়ে বিটিআরসিতে মোবাইল ফোন, টেলিফোন, ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি আপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়টি অপারেটররা কোনভাবেই মেনে নেয়নি। বৈঠকে রাজি হলেও বাস্তবে অপারেটররা কোন কাজই করেনি। পরে প্রতি কলড্রপে এক মিনিট করে ক্ষতিপূরণ দিতে অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। এতেও কোন কাজ হয়নি।

সম্প্রতি বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মুহমুদ বলেন, কলড্রপের জন্য গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ আছে। কিন্তু অপারেটররা এটা বাস্তবায়নে নানা তালবাহানা করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের আবার চিঠি দেয়া হবে। তাদের সঙ্গে বসে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা হবে।

কলড্রপ নিয়ে মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রতিবন্ধকতায় কলড্রপের বড় কারণ। যেমন ঢাকার একটি স্থানে গ্রাহক বেড়ে গেছে কিংবা বড় বড় উঁচু দালান ওঠার কারণে উন্নত সেবা ধরে রাখতে সেখানে আরও বেশি বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) বসানো প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে বিটিএস বসানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যায় না। এখন বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা, এমনকি সরকারী অফিসের কর্মকর্তারাও বিটিএস বসানোর জন্য ভবনের ছাদ ব্যবহার করতে দিতে চান না। আবার যেখানে স্থান পাওয়া যায়, সেখান থেকে পুরো এলাকায় বৃত্তাকারে সমমানের নেটওয়ার্ক সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে কলড্রপ হচ্ছে। আবার ইন্টার-কানেকশন এক্সচেঞ্জে ত্রুটির কারণে কলড্রপ হয়। এ এক্সচেঞ্জ পৃথক লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। একইসঙ্গে ট্রান্সমিশন কেবল একবার কাটা পড়লে সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেই নেটওয়ার্ক ঠিক করতে দু-তিন দিন পর্যন্ত সময় নেয়। এ সময় বিচ্ছিন্ন হওয়া বিটিএসের পরিবর্তে বিকল্প বিটিএস দিয়ে সেবা দিতে হয়। এতে নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে যায়। তখন কলড্রপ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে কম সক্ষমতার হ্যান্ডসেট ব্যবহারের কারণেও হয়। কারণ কম ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যান্ডসেট পূর্ণ ক্ষমতায় নেটওয়ার্ক গ্রহণ করতে পারে না। শব্দবিষয়ক ফিচার ভাল না হওয়ায় গ্রাহক ভাল শব্দ শোনেন না।

সূত্র জানিয়েছে, অপারেটররা নানা অজুহাতে গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কলড্রপের টাকা ফেরত দিলেও একমাত্র বাংলাদেশেই কলড্রপের টাকা ফেরত দেয়ার কোন নাম নেই। যদিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কলড্রপের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বললেও অপারেটররা মন্ত্রীর বক্তব্যেরও কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না।

পাঠকের মতামত

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...