প্রকাশিত: ৩০/১০/২০১৯ ১২:১১ পিএম

সারাবাংলা:
জুয়াড়ির প্রস্তাবের তথ্য গোপনের জন্য সাকিব আল হাসানকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। জানা যায়- সাকিবকে তিনবার ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মি. আগরওয়াল নামের একজন জুয়াড়ি। সাকিবের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার পরপরই লাইমলাইটে চলে আসে এই জুয়াড়ির নাম।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের কালো তালিকায় থাকা কে এই জুয়াড়ি? সাকিবের সঙ্গে তার কিভাবে পরিচয়? কি কথা হয়েছিল সাকিবের সঙ্গে? সারাবাংলাডটনেটের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই জুয়াড়ির পরিচয়সহ অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্যই।

মি. আগরওয়াল একজন ভারতীয় জুয়াড়ি। তার আসল নাম ভিক্রম আগরওয়াল। মূলত সাকিবের এক পরিচিত ব্যক্তি আগরওয়ালকে তার নাম্বারটি দেন। এরপরেই এই ভারতীয় নাগরিক হোয়াটসঅ্যাপে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।

আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (আকসু) তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে- মোট তিনবার সাকিবকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আগরওয়াল। তার সব প্রস্তাবই প্রত্যাক্ষান করেন সাকিব এমন তথ্যই আছে আকসুর কাছে।

বিজ্ঞাপন
ফিক্সিংয়ের কারণে বেশ কয়েকবার ভারতে গ্রেফতার হয়েছিলেন আগরওয়াল। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী- ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএলে) ফিক্সিংয়ের অভিযোগে বেশ করে কাঠগড়ায় যেতে হয়েছে আগরওয়ালকে। আইসিসির কালো তালিকায় অনেক উপরেই আছে এই জুয়াড়ির নাম। এর আগে ২০১৩ সালের ‍জুনে নাটকীয়ভাবে ফিক্সিংয়ে দায়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা বিন্দু দারা সিং ও ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এন শ্রীনিবাসনের জামাতা গুরুনাথ মায়াপ্পান। দু’জনই ফিক্সিংয়ের সঙ্গে আগরওয়ালের জড়িত থাকার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

সারাবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, আগরওয়াল ভারতের চেন্নাইয়ের একজন হোটেল ব্যবসায়ী। চেন্নাই শহরে দুটি হোটেল আছে তার। ১২৯ কক্ষের ব্যবসায়িক হোটেল ফরচুন সিলেক্ট পামস ও পাঁচতারকা হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু। রাতারাতি কোটিপতি হওয়া এই জুয়াড়ি ভিভিএ হোটেল প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান ও আইটিসি হোটেল গ্রুপের সদস্য।

দেশটির পুলিশসূত্রে জানা যায়, ভিক্রম আগরওয়াল রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মাধ্যমে হোটেল ব্যবসায় পা রাখেন। এবং রাতারাতি তার ভাগ্যবদল হয়। এরপরই জুয়াড়ি চক্রে জড়িয়ে পড়েন। বুকি হয়ে আগরওয়াল অনেকসময় ভিক্টোর পরিচয়েও বিভিন্ন খেলোয়াড়, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

পাঠকদের সুবিধার্থে আকসুর তথ্যানুযায়ী সাকিবের সঙ্গে আগরওয়ালের কথোকপথনের ১৬টি তথ্য দেয়া হলো নিচে:

তথ্য এক: ঘটনার শুরু ২০১৭ সালের নভেম্বরে। ৪ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ডায়নামাইটের হয়ে বিপিএল খেলেন সাকিব আল হাসান। ঘটনাগুলোও তখন থেকেই ঘটতে শুরু করে।

তথ্য দুই: সাকিব জানতেন তার এক পরিচিত ব্যক্তি মি. আগরওয়াল নামের এক ফিক্সারকে তার টেলিফোন নাম্বার দিয়েছেন। আর ওই মি. আগরওয়াল কেবল সাকিবের নয়, তার পরিচিত ওই ব্যক্তির কাছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে যত ক্রিকেটার খেলছেন সকলের কন্ট্যাক্ট নাম্বার চেয়েছিলেন।

তথ্য তিন: ২০১৭ এর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মি. আগরওয়ালের উষ্কানিতে তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কিছু মেসেজ আদান প্রদান করেন সাকিব আল হাসান। এই কথপোকথনের এক পর্যায়ে আগরওয়াল সাকিবের সঙ্গে দেখা করতে চান।

তথ্য চার: ২০১৮ এর জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বাংলাদেশেই একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করা হয়। সেই সিরিজ চলাকালেও সাকিব ও আগরওয়ালের মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে কথপোকথন হয়।

তথ্য পাঁচ: ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি আগরওয়াল সাকিবকে এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়ায় অভিনন্দন জানান। এবং পরপরই তিনি আরও একটি বার্তা পাঠান, তাতে লেখেন ‘কাজটি আমরা এখনই করবো, না কি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। ‘Do we work in this or i wait till the ipl’।

তথ্য ছয়: এই ‘Work’ শব্দটি দিয়ে আগরওয়াল বুঝাতে চেয়েছিলেন, সাকিব যেনো তাকে ম্যাচের ভেতরকার তথ্য দেন।

তথ্য সাত: আগরওয়ালের তরফ থেকে পাওয়া এসব বার্তা বা প্রস্তাবের বিষয়গুলো আকু তথা অন্য দুর্নীতি বিরোধী কর্তৃপক্ষকে জানাননি সাকিব।

তথ্য আট: ২০১৮ এর ২৩ জানুয়ারি আগরওয়ালের কাছ থেকে আরেকটি মেসেজ পান সাকিব। এতে লেখা ছিলো ‘ভাই এই সিরিজে কী কিছু আছে? ‘ Bro anything in this Series?’

তথ্য নয়: আকুকে সাকিব নিশ্চিত করে জানান যে, মি. আগরওয়ালের এই অনুরোধটিও ছিলো তিনি যেনো চলমান ত্রী-দেশিয় সিরিজের ভেতরকার খবর তাকে দেন।

তথ্য দশ: এবারেও মি. আগরওয়ালের তরফ থেকে ভেতরকার তথ্য পাচারের এই অনুরোধের বিষয়টি আকু কিংবা অন্য কোনও দুর্নীতি বিরোধী কর্তৃপক্ষকে জানাননি সাকিব আল হাসান।

তথ্য এগারো: ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সাকিব সানরাইজারস হায়দ্রাবাদের পক্ষ হয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে খেলেন।

তথ্য বারো: সেদিনও মি. আগরওয়ালের কাছ থেকে সাকিব হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পান, যাতে তিনি একজন সুনির্দিষ্ট খেলোয়াড় ম্যাচটিতে খেলবেন কিনা তা জানতে চান। সেটিও ছিলো ম্যাচের ভেতরকার তথ্য চাওয়া।

তথ্য তেরো: এর পরেও সাকিবের সঙ্গে আগরওয়ালের কথাবার্তা চলতে থাকে। যার মধ্যে বিটকয়েন, ডলার একাউন্ট এসব শব্দের ব্যবহার ছিলো। এমনকি তিনি সাকিবের ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্যও জানতে চান। এই সব বার্তার এক পর্যায়ে সাকিব প্রথমবারের মতো উত্তর দেন। এবং তিনি বলেন তিনি মি. আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে চান।

তথ্য চৌদ্দ: ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিলের এই বার্তাসহ আরও কিছু মুছে ফেলা বার্তার কথাও স্বীকার করেন সাকিব আল হাসান। যার সবগুলোতেই মি. আগরওয়ালের পক্ষ থেকে ম্যাচে কিংবা সিরিজের ভেতরকার খবর জানতে চাওয়া হয়েছিলো।

তথ্য পনেরো: সাকিব নিশ্চিত করেন যে আগরওয়ালের বিষয়ে তিনি কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং তার মনে হচ্ছিলো তিনি প্রতারিত হচ্ছেন এবং বোধ করছিলেন মি. আগরওয়াল একজন বুকি (জুয়াড়ি)।

তথ্য ১৬: মি. আগরওয়ালের পক্ষ থেকে ২৬ এপ্রিল পাওয়া এই সব প্রস্তাবের কোনওটিও সাবিক আল হাসান আকু কিংবা অন্য কোনও দুর্নীতি বিরোধী কর্তৃপক্ষকে জানাননি।

পাঠকের মতামত