প্রকাশিত: ০৩/১২/২০১৬ ৭:৩৭ এএম

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে::

অমানুষিক নির্যাতন ও বর্বরতার শিকার মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পথের কাঁটা রোহিঙ্গারাই। সেখানে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়ার ইচ্ছে নেই। তবে কতিপয় সন্ত্রাসী রোহিঙ্গার নাশকতামূলক কর্মকা-ে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করছে। সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিজ দেশে বন্দী জীবনের মতো রোহিঙ্গা জাতি তাদের নিজ দেশে বসবাস করলেও গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে নিশ্চয় কিছু একটা হবে, এ আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছিল। দফায় দফায় রোহিঙ্গা নিপীড়নের সর্বশেষ ২০১২ সালে রোহিঙ্গা-রাখাইন জাতিগত দাঙ্গার পর বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নাগরিকত্ব না পেলেও মোটামুটি শান্তিতে ছিল মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। যে যেভাবে পারে আয়-রোজগার, চাষাবাদ, সীমান্ত বাণিজ্য ও স্বদেশে ব্যবসা করে জীবন অতিবাহিত করছিল। হঠাৎ করে ৯ অক্টোবর রাতে মংডুর তিনটি পুলিশ পোস্টে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা হামলা চালিয়ে ফের উত্তপ্ত করে দেয় মিয়ানমারকে। তথাকথিত ‘স্বাধীন রাষ্ট্রের’ দাবিতে মিয়ানমারের পাহাড়ে অবস্থানকারী সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এ কা- ঘটিয়েছে বলে সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

ওপার ও এপারের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৯ অক্টোবর ভোরে মংডুর কাউয়ারবিলের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র তিনটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা ও অস্ত্র লুট ঘটনার পর দেশটির সরকার ওই ঘটনার জন্য আরএসওকে দায়ী (সন্দেহ) করলেও তখন রোহিঙ্গা জাতির ওপর তেমন কঠোর হয়নি দেশটির প্রশাসন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর বাংলাদেশের সঙ্গে আপাতত বন্ধ রাখা ব্যবসায়িক ঘাটও খুলে দেয়া হয়েছিল। টেকনাফ স্থলবন্দরে যথানিয়মে নোঙ্গর করেছে আমদানিপণ্য বোঝাই মিয়ানমারের বহু জাহাজ। পরবর্তীতে দেশটির জঙ্গলে অবস্থানকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ওই ঘটনার সূত্র ধরে সকল রোহিঙ্গাকে উস্কে দেয়। ‘যার যা আছে, তা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে’ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তাদের দলে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়ে ভিডিওপোস্ট করে। জঙ্গলে ভারি অস্ত্র হাতে কয়েক রোহিঙ্গাকে দাঁড় করিয়ে বিদ্রোহীদের দলপতি মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানের ভিডিওচিত্র পোস্ট করে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে। মিয়ানমার সরকার ওই ভিডিওচিত্র দেখে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের (আরএসও) এ ঘটনায় অভিযুক্ত করে। অক্টোবরের শেষের দিকে উত্তর মংডুতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা দেশটির সেনা সদস্য বহনকারী একটি গাড়িতে অতর্কিত হামলে পড়ে। এরপর থেকে মূলত সেনা-পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের চরম নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ওই ঘটনায় এক সেনা কর্নেলসহ ৬জন নিহত হয়েছে। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা পুলিশ পোস্টে হামলা, অস্ত্র লুট ও ভিডিওচিত্র ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পোস্ট না করলে হয়ত রোহিঙ্গা জাতির জন্য দেশত্যাগ করার মতো এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না বলে জানিয়েছেন আরাকানে বসবাসরত একাধিক ব্যবসায়ী।

রোহিঙ্গারা শহরমুখী ॥ টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারী অধিকাংশ রোহিঙ্গা কক্সবাজার শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে মুনাফালোভী কিছু অসাধু ব্যক্তি মানবতার ধুয়া তুলে এদের ভাড়াটিয়া হিসেবে অবস্থান করার সুযোগ করে দিচ্ছে। সীমান্তে বিজিবির টহল থাকলেও সড়ক পথে রোহিঙ্গা ঠেকানোর কোন চেক পোস্ট না থাকায় রোহিঙ্গারা রিজার্ভ অথবা যাত্রীবাহী গাড়িতে করে ঢুকে পড়ছে কক্সবাজার শহরসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ভবিষ্যতে এদের গণনা ও খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে জানিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা রোহিঙ্গা বস্তি ও ক্যাম্পে ঢুকে পড়ার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারী নিয়ম বহিভূত যারা ওসব রোহিঙ্গার সহায়তা ও আশয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের তালিকা করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া দরকার। শহরে ভাড়া বাসায় রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে দেখে এদের ভবিষ্যত নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দারুন উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

রোহিঙ্গা বোঝাই ছয়টি নৌকা ফেরত ॥ নাফনদীর চারটি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ৬ নৌকা ফিরিয়ে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নাফ নদীর জলসীমা অতিক্রম করে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় এসব নৌকা ফিরিয়ে দেয়া হয়। টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী বলেন, শুক্রবার ভোর চারটায় নাফনদীর বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে নৌকায় করে ৪০ জনের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। বিজিবির টহল দলের বাধার মুখে তারা আবার মিয়ানমারে ফিরে যায়।  সুত্র; জনকন্ঠ

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...

খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিন

হেলাল উদ্দিন সাগর :: বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ...