প্রকাশিত: ০৫/০৪/২০২০ ১১:২৮ এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক::
টেকনাফ উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর নৌকা ঘাটে মাঝারি আকৃতির শান্তশিষ্ট প্রাণী বলে পরিচিত একটি মৃত ডলফিন কে জেলে কতৃক হত্যার সংবাদে নিন্দার ঝড় উঠেছে। গত ৪ এপ্রিল স্থানীয় জালাল উদ্দীন ও জয়নাল আবেদিন নামে দুইজন যুবক বিকেলে সাগড় পাড়ে ঘুরতে গেলে মৃত ডলফিনটি দেখতে পাই, সাথে অনেক জেলেও এই ডলফিনটি দেখতে পাই বলে জানা যায়। তবে ডলফিনটি মৃত হয়ে কি ভাবে কোথাই থেকে আসল তা কেউ জানাতে পারেনি। তার মধ্যে জালাল উদ্দীন ও জয়নাল আবেদিন তাদের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে মৃত ডলফিনটির ছবি তুলে আপলোড করলে তা মূহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।

অনেক মিডিয়া ডলফিনটিকে নিয়ে ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করলেও কিছু মিডিয়া প্রাণীটিকে নিয়ে জেলেদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করে। অর্থাৎ প্রাণীটিকে জেলেরা হত্যা করেছে মর্মে সংবাদ প্রচার করে। তবে কে হত্যা করল বা সাগরে কোন জায়গা বরাবর প্রাণীটিকে হত্যা করা হল তা বিস্তারিত ভাবে কেউ উল্ল্যেখ করেনি। তবে স্থানীয় জেলে ও সতেচন মহলের মতে ডলফিন প্রাণী মানুষের পরম বন্ধু বটে। তাই শামলাপুর এলাকার স্থানীয় জেলেরা এই প্রাণীটিকে একটি পবিত্র মাছ হিসেবে গণ্য করে। আর শামলাপুর এলাকার জেলেদের জালগুলো খু্ব ছোট এবং দূর্বল। তাই এত বড় প্রাণী এই জালে আটকা পড়ে মারা যাওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। কারণ সমুদ্রে বিভিন্ন সাইজের নৌকা বা বড় বড় বোট চলাচল করে। তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মাছ ধরতে যায়। এখন কোন এলাকার জেলেদের জালে আটকা পড়ে ডলফিনটি মৃত্যু বরণ করল তা কেউ নিশ্চিত নই। তাহলে এখানে শুধু মাত্র শামলাপুর এলাকার জেলেদের সন্দেহ করবে তা খুবই দুঃখজনক। তবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ থেকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তা খুঁজে বের করা জরুরি।

এদিকে স্থানীয় জেলেরা এই প্রাণীটিকে হত্যা করেছে বলে সংবাদ প্রকাশ হলে এলাকার সর্বমহলে নিন্দার ঝড় উঠে। কোনো সঠিক তথ্য বা তদন্ত ছাড়াই কি ভাবে একটি এলাকার জেলেদের বিরুদ্ধে একটি মূল্যবান প্রাণী হত্যার বিষয়ে দুষারোপ করা হয় তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ডলফিনটি আধমরা হয়ে ভেসে তীরে আসলে সেখানে ঢেউয়ের আঘাতে শরীরের কিছু কালো চামড়া উঠে সাদা হয়ে যায়। কিন্তু কিছু মিডিয়াতে সেগুলো আঘাতের চিহ্ন বলে প্রচার করা হয় বলে অনেকে মন্তব্য করেন। এলাকার বেশি ভাগ যুবক সমাজ তাদের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিবাদী পোষ্ট করেন।

এ ব্যাপারে টেকনাফ বাহারছড়া শামলাপুর নৌকাঘাট বোট মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দীন বলেন ডলফিনটি হয়ত মৃত হয়ে রাতের জোয়ারের সময় তীরে ভেসে এসেছে। সে সময় নৌকা ঘাটে কেউ থাকেনা। সারা রাত প্রাণীটি ঢেউয়ের আঘাতের কারণে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিকাল বেলা আমরা যখন প্রাণীটি দেখতে পাই তখন মৃত অবস্থায় ছিল। তখন আমাদের করার কিছু ছিলনা। তিনি আরো জানান টেকনাফ মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশে শামলাপুর বোট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আজ ৫ এপ্রিল আমরা সতেচন মুলক মাইকিং করব। যাতে স্থানীয় জেলেরা বিশেষ করে কচ্চপ, হাঙ্গর, ডলফিন প্রানী সম্পর্কে সতেচন হয়। স্থানীয় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মোয়াস এনজিওর লজিষ্টিক কো-অর্ডিনেটর শহীদ উল্লাহ শহীদ বলেন প্রতি বছরই কোন না কোন এলাকায় মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এমনকি এই উপকূলে বিশালাকৃতির মৃত তিমি মাছও ভেসে আসার ইতিহাস আছে। তাছাড়া এদেশে ডলফিন ক্রয় বিক্রয়ের কোন বাজার নাই। আবার ডলফিন খাওয়ার নজিরও এদেশে নাই। তাই তার দৃশ্যত কোন বাজার মূল্য নাই বললে চলে। তাই জেলেদের ডলফিন শিকার বা পিটিয়ে মারার পেছনে কোন কারণ থাকতে পারেনা। বিশাল সমুদ্রে একটি জীবিত ডলফিন কে পিটিয়ে মারার বিষয়টি একদমই হাস্যকর। প্রাকৃতিক পরিবেশে যেমন মানুষের বসবাসের উপযোগিতা ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে সাগরে ডলফিন সহ জলজ প্রাণীর পরিবেশও মারাত্নক দুষণের কারণে নষ্ট হচ্ছে। ফলে ডলফিনের মত মূল্যবান প্রাণীরাও মারা পড়ছে বা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই আনুমান করে কল্পকাহিনী সৃষ্টি করা মোটেই সমূচিত হবেনা।

বনবিভাগের পক্ষে থেকে মনখালী – শামলাপুর বন বিটের কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন ডলফিন প্রাণীটির মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। মুলত প্রানীটির অনেক দিন আগে মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্নও আমরা দেখতে পাইনি। বর্তমানে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক নৌকাও বন্ধ রয়েছে। তাই জেলেরা প্রাণীটিকে হত্যা করতে পারে এমন সম্ভবনা কম। তবে কতৃপক্ষের পরবর্তী রির্পোটে আমরা সেটি আরো পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারব।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...