প্রকাশিত: ২৯/১০/২০২০ ৭:৩৪ এএম

রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া ::
বাংলাদেশ মিয়ানমার দুই রাষ্ট্রের জিরো পয়েন্টের শূন্য রেখাটি নো ম্যানস ল্যান্ড নামে পরিচিত। এক পাশে কাঁটাতার অন্য পাশে খাল, মাঝখানে প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গার অনিশ্চিত বসবাস। যদিওবা স্থানটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তথাপিও কোমলমতি শিশু কিশোর জানে না তারা কোথায় আছে, কেমন আছে। জাতিগত পরিচয় আর নাগরিকত্বহীন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের শিশুদের ক্ষেত্রে এমনি একটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র।

মুসলিম বিদ্বেষী মিয়ানমারের সশস্ত্র রাখাইন জনগোষ্ঠী জাতিগত নিধনের ফলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের গ্রামেগঞ্জে যখন ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলছিল, বেনেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ শিশুদের আর্ত চিৎকারে যখন আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠছিল, তখন অসহায় রোহিঙ্গারা তাদের প্রিয় মাতৃভূমি, সহায় সম্বল ফেলে রেখে চলে আসে এদেশে। সীমান্তের উলুবনিয়া, আনজুমানপাড়া, নলবনিয়া, রহমতের বিল, কাটাখালী, ধামনখালী, ফারিরবিল সংলগ্ন নাফনদী পার হয়ে রোহিঙ্গা পারাপারের ঢল নামে। সরকার মানবিক কারণে এসব রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষনিক ভাবে আশ্রয়ের পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসলেও তা সংকুলনা হচ্ছিল না। পরবর্তীতে সরকারের পাশাপাশি দেশি বিদেশী এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। তুমব্রু কোনারপাড়া এলাকার গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪ হাজারেও অধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ শিশুসহ একদল রোহিঙ্গা যখন কোনার পাড়া সীমান্ত অতিক্রম করে খাল পার হওয়ার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই বাঁধা দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এসব রোহিঙ্গারা আবার ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে অপর দিক থেকে বাঁধা প্রদান করে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এসব রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, তারা সামনেও এগোতে পারছে না পেছনেও যেতে পারছে না। এমনি এক সংকটময় মুহূর্তে মিয়ানমার বিজিপি ও রাখাইন সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠী রাতের আঁধারে মদ্যপান করে খালি বোতল ও ইট পাটকেল রোহিঙ্গা ঝুপড়িতে নিক্ষেপ করায় রোহিঙ্গাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। এসময় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি খালের উপর কাটের সেতু নির্মাণ করে এসব রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় এগিয়ে আসে। যা এখনো পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে।

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ আরো জানান, তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির এক দল সদস্য পর পর কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে এবং সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে এসব রোহিঙ্গারা এ বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তারা কোথাও কোন কাজ করতে যেতে পারছেনা। সরকারি ভাবেও চাহিদা মতো সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে না। তাদের দাবী এসব রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে অথবা অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হোক। তাহলে তারা নিজেরাই কাজ কর্ম করে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন সংস্থানের জোগাড় করতে পারবেন।

শূন্য রেখায় বসবাসরত স্বামীহীন বিধবা বয়োবৃদ্ধ ছেনুয়ারা বেগম (৬৫) জানায়, দুনিয়াতে তার কেউ নেই। মিয়ানমারের সৈন্যরা তার ছেলে আলমকে গুলি করে তার চোখের সামনে হত্যা করেছে। এরপর পাড়া প্রতিবেশীর সাথে চলে এসে এ খালের পাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। খাওয়া দাওয়া কোথায় থেকে পান জানতে চাওয়া হলে ওই বয়োবৃদ্ধ জানান, কেউ দয়া করে দু’মুঠো দিলে খাই, আর না দিলে উপোস থাকতে হয়।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, চলমান ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করে আসছিল। এমনকি তারা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছে। যা ইতিমধ্যে ইলেক্ট্রনিক্স, প্রিন্ট ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই এসব রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে বলে ওই জনপ্রতিনিধি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...