প্রকাশিত: ১৬/১০/২০১৮ ১০:২৬ পিএম , আপডেট: ১৬/১০/২০১৮ ১০:৩৩ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
চলতি বছরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে তিনদিনের সফরে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আসছে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এ নিয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অংশ নেবে। তারপরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এক কর্মকর্তা জানান, আশা করছি ১ ডিসেম্বর থেকে রোহিঙ্গা পাঠানো শুরু হবে।

এ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা ফেরাতে কাজ অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে মিয়ানমারের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবেন। তারা কক্সবাজারেও যাবেন। ইতিমধ্যে আট হাজার রোহিঙ্গার নামের তালিকা সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছে মিয়ানমার। ওই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কোন কোন গ্রাম থেকে এসেছে তার মিলানোর কাজ শেষ করেছি

তিনি বলেন, ভারত সরকার ২৫০টির মত বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। এখন ঐগুলোর সঙ্গে ম্যাচ করতে হবে। ঐ এলাকায় মিয়ানমার কিছু বাড়ি করেছে তবে সংখ্যাটি জানি না। মিয়ানমারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা যখন জাতিসংঘে যাই সেখানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বৈঠকে বলেছেন, তারা ৪ হাজার বাড়ি নির্মাণ করে দেবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে রোহিঙ্গা যেখান থেকে এসেছে সেখানে তাদের বাড়ি নির্মাণ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা হবে। শুধু আট হাজার নয় আরো তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথমে রোহিঙ্গাদের তারা নিয়ে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখবে। তারপর তাদের গ্রামে ফেরত পাঠাতে হবে। আমি সব সময় মিয়ানমার সরকারকে বলছি বাড়ি যদি না তৈরি হয় এ মানুষগুলো থাকবে কোথায়। প্রথম যে ব্যাচটা যাবে, আমরা যাদের পাঠাবো, তারা গিয়ে যেন বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারে, জীবন যাত্রা যেন শুরু করতে পারে। না হলে জিনিষটা ভালো হবে না। এখন মিয়ানমার বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং মিয়ানমারে পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অনুষ্ঠেয় সভায় মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আরো একটি তালিকা হস্তান্তর করবে ঢাকা।

যেখানে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে কক্সবাজার যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে ৩০ অক্টোবর নেপিডো ফিরে যাবেন তারা। এর আগে গত মে মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিল মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল। সেই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বও ছিলেন মিন্ট থোয়ে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত ৯ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফর করেন। সে সময় তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের আবাসন সুবিধা, চলাফেরা ও জীবনযাত্রাসহ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতিও পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়া প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর ওপর জোর দেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরো প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

পাঠকের মতামত