প্রকাশিত: ০৬/১২/২০১৭ ৮:০৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১০:০৩ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বাংলা নয়, রোহিঙ্গা শিশুকে মিয়ানমারের ভাষায়ই শিক্ষাদান করতে হবে। তবে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি মাধ্যম ব্যবহার করা যাবে। ভাষা ব্যবহার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নতুন ক্যাম্প স্থাপনের জন্য আরও এক হাজার একর জমি বরাদ্দ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের ফেরত পাঠাতে একই সঙ্গে কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ও ডাটাবেজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা সংকট সংক্রান্ত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে মানবিক সহায়তা হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের শীতে বস্ত্র এবং ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো, ডিসেম্বরেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনসহ পর্যাপ্ত নলকূপ ও ল্যাট্রিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘স্বল্প আয়ের দেশগুলোর টেকসই স্নাতক অর্জন’ শীর্ষক সেমিনার শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, দাতা সংস্থাগুলো সহায়তা না করলে রোহিঙ্গা সংকট মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছতে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করত। এরপরও এ সংকটের কারণে আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সেনিটেশন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হচ্ছে। জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৬ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখনও প্রবেশ অব্যাহত আছে। ফলে এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর বাসস্থান, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ল্যাট্রিন ব্যবস্থায় ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি সরকারের অর্থ খরচ হচ্ছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ অবস্থা এবং তাদের সহায়তা কার্যক্রম বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় ও সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের সহায়তা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানান।
সভায় রোহিঙ্গাদের শীতবস্ত্র সরবরাহ ও শীতকালীন রোগব্যাধি সামাল দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী এবং ওষুধ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, আর্থিক অবস্থা ভালো- এমন রোহিঙ্গাদের আলাদা করতে হবে। নারী ও পুরুষের জন্য পৃথকভাবে শীতের কাপড় সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি নতুন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শেল্টারে দ্রুত স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে বলা হয়, প্রথমে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্পের জন্য ২ হাজার একর ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়। এ জমিতে ৪ লাখ রোহিঙ্গার বসতি তৈরি সম্ভব ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ অতিক্রম করেছে। ফলে নতুন করে আরও ১ হাজার একর জমি বরাদ্দ করে ৭ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে পরিবেশ ও জীবের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ছে কিনা, তা সমীক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ ছাড়া মানবিক সহায়তার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ২০টি ব্লকে আরও ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতি চারটি ব্লকের জন্য একটি করে পুলিশ ক্যাম্প থাকবে।

পাঠকের মতামত