নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যূষিত জনপদ উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে নগদ টাকা বিতরণের ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনক ভাবে। লাখ লাখ নগদ টাকা নিয়ে বিদেশীরা ঢুকে পড়ছে শিবিরে। রাতের আঁধারে নির্জন এলাকায় নগদ টাকা বিতরণের ঘটনা ঘটছে।
গত সোমবার ভোরে এরকম বড় অংকের টাকার একটি চালান বিতরণের ঘটনা নিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তোলপাড় চলছে। টাকা বিতরন করেছে পাকিস্তান থেকে আসা বেশ কয়েকজন মৌলভী।
পাকিস্তানীদের সামনে প্রতিজন রোহিঙ্গাকে চার হাজার টাকা করে দিয়ে পরে বিতরণকারি রোহিঙ্গা মাঝিরাই তিন হাজার টাকা করে ফেরৎ নেওয়ার ঘটনা নিয়ে চলছে তোলপাড়। গতকাল একাধিক রোহিঙ্গা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে গোপনে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গার কাছে নগদ টাকা প্রদান করা হয়। বিতরণ করা টাকার অংক প্রায় ১২ লাখ টাকা। পাকিস্তান থেকে আসা এসব মৌলভীর সাথে কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি) জড়িত রয়েছেন।
নগদ টাকা বিতরণের খবর পেয়ে আইন প্রয়োগকারি সংস্থা সহ গোয়েন্দা কর্মীদের ধাওয়ার মুখে টাকা বিতরণে জড়িত রোহিঙ্গা নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবুল খায়ের জানান-বাস্তবে বিশাল রোহিঙ্গাদের মাঝে এরকম ঘটনা ঘটলেও তাদের তাৎক্ষনিক খুঁজে বের করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার টাকা গ্রহণকারি রোহিঙ্গা নারী আম্বিয়া খাতুন (৩৬) বলেন-‘ বিশাল দেহের মৌলভীদের সামনে আমাদের টাকার প্যাকেট দেওয়া হয়। তারা পাকিস্তান থেকে আমাদের টাকা দিতে আসেন বলে জানতে পেরেছি। মসজিদে পাকিস্তানীরা দাঁড়িয়েছিলেন।
’ তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের মাঝে টোকেন দিয়ে প্রতিজন কে নগদ চার হাজার করে টাকার প্যাকেট দেওয়া হয়। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের –ডি-৪ নম্বর ব্লকের একটি মসজিদে টাকা বিতরণ করা হয়।
রোহিঙ্গা মাঝিরা (রোহিঙ্গা নেতা) জনপ্রতি চার হাজার টাকার প্যাকেট দিয়ে পরে বিদেশীদের নিকট থেকে সরে গিয়ে তিন হাজার টাকা করে ফেরৎ নেয়। গত সোমবার ফজরের আজানের পর পরই টাকা বিতরণ করা হয়।
কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ডি-১ নম্বর ব্লকের ২৫০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা আম্বিয়া আরো জানান, একই ব্লকের রোহিঙ্গা মাঝি আবুল বাশার ও জিয়াউর রহমান জিয়া তাদের কাছে টোকেন বিলি করেন।
কুতুপালং শিবিরের একই ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ ওসমান (৩০) জানান, রোহিঙ্গা মাঝি আবুল বাশার ও মাঝি জিয়া ছাড়াও কুতুপালং শিবিরের মোহাম্মদ আলম ও সোনা মিয়া মাঝি পাকিস্তানী মৌলভীদের এ টাকা বিতরণের ঘটনায় জড়িত।
এ ছাড়াও কুতুপালং নিবন্ধিত শিবিরের রোহিঙ্গা মৌলভী হামিদ ও মৌলভী জানে আলম পাকিস্তানীদের সাথে আগে থেকেই যোগাযোগে ছিল। সেই সাথে কুতুপালং ডি-৪ নম্বর ব্লকের মসজিদের মোহতামিম রোহিঙ্গা মৌলভী মঞ্জুর পাকিস্তানীদের সাথে করে মসজিদে নিয়ে যান। এ ঘটনায় জড়িত রোহিঙ্গা মাঝিদের মোবাইল নম্বরে বার বার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
শিবিরে পাকিস্তানী নাগরিকের টাকা বিতরণের খবর শুনে গত দু’দিন ধরে আইন প্রয়োগকারি সংস্থা ও গোয়েন্দা কর্মীরা ঘটনায় জড়িত রোহিঙ্গা মাঝিদের ধরতে কাজ করছেন।
মঙ্গলবার রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এক গোয়েন্দা কর্মী ঘটনার কথা স্বীকার করে জানান, টাকা বিতরণের ঘটনায় তুর্কি নাগরিকের কথাও শুনা গেছে। রোহিঙ্গাদের মাঝে টাকা বিতরণে জড়িত রোহিঙ্গা সহ বিদেশীদের সনাক্ত করারও চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সুত্রে জানা গেছে। সুত্র : কক্সবাংলা
পাঠকের মতামত