প্রকাশিত: ০৭/০৯/২০১৭ ১০:৫৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৫৫ পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৮ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা তাদের অধিকার বিশেষ করে দেশটির নাগরিকত্ব চেয়ে আসছে।

আর সরকার দীর্ঘদিন সেই দাবিকে উপেক্ষা করে আসছে। শুধু উপেক্ষা নয়, রীতিমত রাষ্ট্রীয় মদদে দমনপীড়ন চালানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর, যার সর্বশেষ নজির গত ২৪ আগস্ট।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযানের ঘোষণা দেওয়ার আগেই রাখাইন অবরুদ্ধ করে রাখে। এরই বদলা নিতে রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে ওইদিন প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়।

এতে মিয়ানমারের নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির ক্ষমতাসীন সরকারের হিসাবেই ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হন। আর জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র হিসাবে, সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের ঘটনায় পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। এভাবে কয়েক দশক ধরে শুধুমাত্র বাংলাদেশে অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে নিশ্চুপ থাকলেও গতকাল বুধবার সু চির সরকার তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে।

সেখানে রাখাইনে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে একহাত নেন সু চি। গ্রামের পর রোহিঙ্গা গ্রাম সেনাবাহিনী জ্বালিয়ে দিলেও তিনি দাবি করেন, সেখানে সবাই নিরাপদে আছেন। গণমাধ্যম ‘ভুল’ তথ্য দিচ্ছে।

এরপর পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়েও মিয়ানমার সরকার তাদের অবস্থান জানান। সু চির দপ্তরেই সংবাদ সম্মেলনে সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইউ থাং তুন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে আজব সব শর্ত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘রাখাইনে সংঘাতের পর যারা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারলে তাদের ফেরত নেওয়া হবে না।’

যাদের নাগরিকত্বই স্বীকার করে না মিয়ানমার, তাদেরই ফেরত নিতে প্রমাণ চেয়েছে নাগরিক সনদের। শুধু তাই নয়, ইউ থাং তুনের ভাষ্যে, ‘নাগরিক হলে আপনি কত বছর মিয়ানমারে বসবাস করেছেন, তারও প্রমাণ দিতে হবে। এসব সত্য বলে প্রমাণ করতে পারলে অবশ্যই তিনি মিয়ানমারে ফিরতে পারবেন। কিন্তু কেউ মিয়ানমারের নাগরিক প্রমাণে ব্যর্থ হলে, তাকে ফেরত নেওয়া হবে না।’

তিনি জানান, চলমান সংকটে তার দেশের মানুষ ভিত নন। তারপরও রাজধানী নাইপে দো, ইয়াঙ্গুন, মান্দালেই ও মাওলেমিংয়ে নিরাপত্তা সতকর্তা জারি করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের ইঙ্গিত করে নিরাপত্তা উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, মধ্যপ্রাচ্যে দুর্বল হয়ে পড়া জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে।’

তিনি বলেন, রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (এনএসএ) ছাড়াও প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং সীমান্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রতিদিন আলোচনা করছেন প্রেসিডেন্ট।

ইউ থাং তুন বলেন, ‘রাষ্ট্র জনগণের সুরক্ষা ও রাখাইন রাজ্য সুরক্ষায় পুলিশের শক্তি বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’

তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনান অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ সরকার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে।

ইউ খাং তুন আরও জানান, রাখাইনে ত্রাণ সহায়তার জন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে মিয়ানমার সরকার। ইতোমধ্যে ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ করেছে। কোনো দেশ সহায়তা করতে চাইলে প্রথমে সরকারকে অবগত করতে হবে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত

ইরানের ভয়ে তটস্থ ইসরায়েল!

ইসরায়েলে বড় ধরনের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা আসন্ন বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ...