প্রকাশিত: ২৪/০৫/২০১৮ ৬:৩৫ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৩০ এএম

 

নিউজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা এবং তাদের ব্যাপক দুঃখ-কষ্ট বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করে কারণ তাদের প্রতিবেশী হলো ইসরাইল, যাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে আর এই অঞ্চলের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন ব্যাপক মাত্রার বিদ্রোহ এবং আন্তর্জাতিক সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুও ছিল।

পিএলও জঙ্গিবাদ, পিএফএলপি’র কট্টর বাম জাতীয়তাবাদ এবং চরমপন্থী ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর গ্রুপ ইত্যাদি সংগঠনগুলো ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে, এক সময় যেটা পশ্চিমা বিশ্বকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। সেই সময়টা পেরিয়ে গেছে। পিএলও’র পতনের কারণ হলো অন্তর্ঘাত, দুর্বল সক্ষমতা এবং ইসরাইলকে শক্তি দিয়ে হটিয়ে দেয়া যাবে – এই ভুল বিশ্বাস।

ইসরাইল নিজেও এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে এবং নন-ইসলামিস্ট পিএলও’কে দমনের জন্য হামাসের নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। এতে পিএলও’র নাটকীয় অবনতি ঘটেছে। ফাতাহ নিজেও যথেষ্ট দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল, যেমনটা তথ্য বলছে। আরবদের সমর্থনও ছিল সীমিত এবং স্বাভাবিকভাবে সুবিধাবাদী। তারা ইসরাইল-বিরোধী ছিল, ফিলিস্তিন-পন্থী নয়।

কিন্তু আরব বিশ্বে প্রজন্মের পরিবর্তনও একটা ভূমিকা রেখেছে কারণ অতীতের নেতাদের একটা অভিন্ন ইতিহাস ছিল যেটা পশ্চিমা-বিরোধী আরব জাতীয়তাবাদের সাথে যুক্ত, আর সে কারণেই এই সমর্থন। কিন্তু সেই ধারাটি এখন শুকিয়ে গেছে। আর সবাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হতে ব্যাগ্র এবং ইসরাইলের চেয়েও ইরানকে নিয়ে তারা এখন বেশি ভীত।

আরব রাষ্ট্রগুলো কখনই ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর সমকক্ষ ছিল না, যাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সহায়তা দিয়েছে, তার কারণ হলো এক সময়ের সোভিয়েত এবং বর্তমানের রাশিয়ানরা মার্কিন মিত্রদের বিপক্ষে আরবদের মধ্যে গেঁড়ে বসেছে।

নিজেদের ব্যাপারে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং বিশ্বের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পিএলও মারাত্মক ভুল করেছে। শীতল যুদ্ধকালিন দুই মেরুর বিশ্বে, ফিলিস্তিনকে দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থনও দিয়েছিল কিন্তু অদূরদর্শী পিএলও নেতৃবৃন্দ সেটা প্রত্যাখ্যান করেছিল, যাদের সমর্থন দিয়েছিল স্বার্থপর আরব দেশগুলো ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। একবার যখন সেই সুযোগের দুয়ারটি বন্ধ হয়ে গেছে, সেটা আর কখনও খোলেনি।

কিভাবে রোহিঙ্গাদের ফিলিস্তিনিদের সাথে তুলনা হতে পারে?

দুটো জনগোষ্ঠির মধ্যে সাধারণত তুলনার সুযোগ নেই দুটো ক্ষেত্র ছাড়া – সংখ্যার বিবেচনায় এবং আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতার দিক থেকে। কিন্তু রোহিঙ্গারা সেই সব জনগোষ্ঠির একটি যাদের জন্য কোন সাধারণ করুণা বা ভয়ের ব্যাপার নেই, ফিলিস্তিনিদের জন্য যেটা রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কোন সহানুভুতি নেই যেটা ফিলিস্তিনিদের জন্য রয়েছে, তা সেটা যত সামান্যই হোক। ফিলিস্তিনিদের সাথে পশ্চিমাদের বিশ্বাসের ইতিহাসও জড়িত। বৈশ্বিক রাজনীতি আজ সাদা ও হলুদ চামড়ার মানুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং বাদামি চামড়ার মানুষ এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি। গৃহবন্দী সু কির বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়ার কাছে কিন্তু এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এ ধরনের কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি করেনি।

জঙ্গি ফ্যাক্টর?

গত তিন দশক ধরে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কোন ধরনের সে রকম প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। ১৯৯২ সালে, পাকিস্তান আরব অর্থায়নে এ ধরনের প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রচেষ্টা টেকেনি কারণ ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েই রোহিঙ্গারা চলে গেছে। আর ওই প্রচেষ্টা রোহিঙ্গাদের পক্ষে যতটা না ছিল, তার চেয়েও বেশি ছিল ভারতের বিপক্ষে।

সবশেষ ঘটনায় আরসা ফ্যাক্টরের উদ্ভব ঘটেছে। কিন্তু এই গ্রুপটি জাতিগত নির্মূল অভিযান উসকে দেয়ার জন্য একটা ছুতো তৈরিতে আরও বড় ভূমিকা পালন করেছে। তবে, অ্যামনেস্টি সম্প্রতি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে এই গ্রুপটি রাখাইনে হিন্দুদের হত্যার সাথে জড়িত। এর মাধ্যমে নতুন একটা ফ্যাক্টর যুক্ত হলো, যেটা তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় কাজে লাগানো হবে।

তবে রোহিঙ্গাদের ভাগ্য নির্ধারণে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণী ও সক্রিয় অভিজাতবর্গেরও ভূমিকা রয়েছে যাদের কোন ধারণাই নেই যে, কিভাবে রোহিঙ্গা/মিয়ানমার সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এটা শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নয়, বরং গত তিন দশক ধরে যারা নীতি নির্ধারণ করেছে, তাদের সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে যে কোন জটিল সমস্যার সমাধানে দেশের কাঠামোগত দুর্বলতার চিত্রটি ফুটে উঠেছে।

মিয়ানমার না চাইলেও তাদের সমাধানের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ রয়েছে। বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ও সক্ষমতাকে ভালভাবেই দেখেছে তারা। কিন্তু বাংলাদেশ যেহেতু পরিস্থিতি সামাল দিতে অক্ষম এবং তাদের কোন সুবিধাজনক অবস্থান নেই, তাই যখন যে স্রোত সামন আসছে, তার সাথে অনিচ্ছায় সাঁতড়ে বেড়াচ্ছে তারা।

বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠি?

ফিলিস্তিনিদের সাথে রোহিঙ্গাদের পার্থক্য হলো ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজের ভূমিতেই রয়েছে কিন্তু রোহিঙ্গাদের তাদের ভিটেমাটি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শীতল যুদ্ধের আগের শক্তিগুলো এখন নতুন সমীকরণের অংশ কিন্তু রোহিঙ্গাদের বেলায় সব বড় খেলোয়াড়রাই তাদের বিরুদ্ধে একাট্টা। সমর্থনের বিনিময়ে কিছুই দেয়ার নেই রোহিঙ্গাদের।

মিয়ানমারে চীনের একটা ভূমিকা রয়েছে, যেমনটা রয়েছে রাশিয়ার, যাতে যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিকভাবেই তাদের পক্ষে থাকে। কিন্তু তাদের আশঙ্কা হলো রোহিঙ্গাদের শক্তি বাড়লে ইসলামিক সন্ত্রাসীদের সংখ্যা বাড়তে পারে। তাই কারো পক্ষ থেকেই কোন সহায়তা নেই কারণ এতে করে কোন সুবিধা বা সমস্যা তৈরি হবে না। আর বাংলাদেশের কি হচ্ছে, সেটাও কোন বিবেচ্য নয়, কারণ গুরুত্বের দিক থেকে তারা রোহিঙ্গাদের চেয়ে মাত্র এক ধাপ উপরে।

এ কারণেই ফিলিস্তিনি জনগণের অনেক সমর্থক রয়েছে এমনকি বাংলাদেশের ভেতরেও কিন্তু তাদের খুব সামান্যই রোহিঙ্গাদের পক্ষে রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা বন্টন

যে সব দেশে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গারা রয়েছে

পাঠকের মতামত