প্রকাশিত: ১৮/০৪/২০১৮ ৮:৩১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:০১ এএম

কূটনৈতিক রিপোর্টার ::রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে আগামী ২৭-৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে আসছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি প্রথমে মিয়ানমার সফর করবে। মিয়ানমার থেকে আগামী ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে আসবে। সূত্র জানায়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫ সদস্য রাষ্ট্রই একমত হয়েছে। যদিও নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবশালী দেশ চীন ও রাশিয়া তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য মিয়ানমারকে সমর্থন করে আসছে। তবে এই প্রতিনিধি দলে এবার চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিও থাকছেন।

নিরাপত্তা পরিষদে একাধিকবার রোহিঙ্গা ও রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারও নিজ নিজ পক্ষের বক্তব্য দিয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রায় সব সদস্যের মনোভাব একই রকম। তবে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী এমন দুই একটি দেশের কারণে শক্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ জাতিসংঘকে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা যে কোন সময় আসতে চাইলে বাংলাদেশ তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ চায় উভয় দেশ সফর করে নিরাপত্তা পরিষদই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করুক।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলকে মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল মিয়ানমার। শেষ পর্যন্ত সেদেশে যাওয়ার অনুমোদন দিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। তবে এই সফরে প্রতিনিধি দলটি রাখাইন প্রদেশ পরিদর্শনের সুযোগ পাবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রাখাইনে যেতে আগ্রহী।

নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা আগামী ২৭ এপ্রিল মিয়ানমার সফরে যাবেন। সেখান থেকে আগামী ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে আসবেন। সেদিনই তারা কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। ৩০ এপ্রিল সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। একই সঙ্গে সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করবেন তারা।

নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি ও জাতিসংঘে নিযুক্ত পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত গুস্তাভো মেজা সুআদ্রা পরিষদের সদস্যদের রাখাইন ও কক্সবাজার সফরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। সভাপতি সুআদ্রা জানান, সফরকালে রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিষয়টিই তাদের মূল ফোকাস। সফরের সময় এবং বিস্তারিত সূচী চূড়ান্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে সুআদ্রা বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের মিয়ানমার সফরের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে আউং সান সুচির সরকার। তবে পরিষদ সদস্যরা রাখাইন রাজ্য সফরে আগ্রহী। কিন্তু মিয়ানমার সেই সুযোগ দেবে কি-না। তাদেরকে সেই অনুমতি দেয়া হবে কিনা- তা তখনও নিশ্চিত হয়নি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো মেজা সুআদ্রা গণমাধ্যমকে আরও বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা আশা করছেন তারা মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য সফর করতে পারবেন। মিয়ানমার সরকার তাদের অনুমতি দেবে বলেও প্রত্যাশা করেছেন তিনি। ওই রাজ্যে বিদ্রোহীদের দমনের নামে মিয়ানমারের সেনারা বর্বর কায়দায় যে অভিযান চালিয়েছে তা থেকে প্রাণে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে পাশের বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে এখনও কিছু রোহিঙ্গা রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি বলেন, রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি দেখার চেয়ে তাদের সফরে ভাল কিছু আর হতে পারে না।

রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে কথিত রোহিঙ্গা জঙ্গীদের হামলার পর ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। সেনাবাহিনীর ওই অভিযানের পর থেকে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সফরের কথা থাকলেও এতদিন দেশটির সরকার অনুমোদন দিচ্ছিল না। ১৫ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরকে আয়োজন করছে যুক্তরাজ্য, কুয়েত ও পেরু।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে আজরাইল গ্রেফতার

কক্সবাজারের মহেশখালীর আলোচিত সিরিয়ার কিলার মো. লোকমান ওরফে আজরাইলকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। দীর্ঘ দুই দশক ...

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...