প্রকাশিত: ২৩/০৫/২০২০ ৭:২৭ এএম
ফাইল ছবি

প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার ঘানি টানার ৩ বছর পূর্ণ করতে চলেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের ২৫ শে আগষ্ট মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সীমান্তে ঢল নামার ৩ মাসের মধ্যে নাটকীয়ভাবে দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তি সই করে নেপি’ড। এরপর অবিশ্বাস্য দ্রুততায় প্রত্যাবাসনের ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টও সই হয়। চুক্তি মতে তাদের ফেরানোর জন্য বাস-ট্রাক, ট্রানজিট ক্যাম্পসহ উভয় পক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখে দুনিয়া। দু’দফা সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর অাওয়াজ ওঠে বিশ্ব দরবারে গিয়ে লাভ নেই, চীনের মধ্যস্থতায় হবে কার্যকর প্রত্যাবাসন! কিন্তু না, সব প্রচেষ্টা আজ ব্যর্থ প্রায়, এ অবস্থায় ঢাকা হার্ডলাইনে যেতে বাধ্য হচ্ছে- এমনটাই দাবি সেগুনবাগিচার। বলা হচ্ছে- এখন আর রাখঢাক নেই। দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসনে চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি থার্ড কান্ট্রি বা তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসনেও রাজি বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, করোনার এই কঠিন সময়ে রাখাইন ত্যাগী রোহিঙ্গাদের গ্রহণসহ নানামুখি চাপের বিপরীতে থার্ড কান্ট্রি রিপ্যাটরিয়েশনে রীতিমত প্রচারণা এবং লবি চলবে।

উল্লেখ্য, দু’বছর আগে থেকে একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে টরেন্টো নিতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছিল কানাডা।

তারা তদবিরও করেছিলো। কিন্তু ঢাকা রাজী হয়নি। তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসনের সূযোগ দিলে রাখাইনে অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করবে এমন জুজুর ভয়ে তখন তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সেগুনবাগিচা এখন বলছে, না, আর কোনো জুজুর ভয় নয়, পরিস্থিতি যাই হোক শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে। রোহিঙ্গারা সীমান্তে এলে বা সাগরে ঝাঁপ দিলে প্রথম দায় মিয়ানমারের, দ্বিতীয়তঃ বিশ্ব সম্প্রদায়ের, তারা দেখবে।

স্মরণ করা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনার চিকিতসায় বিদেশ থেকে মেডিকেল টিম আনাসহ ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোরজি করতে ঢাকার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায়। বাংলাদেশ তাতে রাজী নয়। সর্বশেষ জেনেভাস্থ বিদেশি মিশনগুলোতে পাঠানো অভিন্ন চিঠিতে ঢাকা বিশ্বসম্প্রদায়কে জানিয়ে দিয়েছে- এমনিতেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নানামুখি সঙ্কটে বাংলাদেশ। তার ওপর ক্যাম্প এলাকায় সুবিধা বাড়ানোর ‘অন্যায়’ আবদারে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হতে পারে!

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, গেল বছর জানুয়ারিতে নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর সেগুনবাগিচায় প্রথম বৈঠকেই তৃতীয় দেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চিন্তা-ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন ড. মোমেন। তখনও এটি ছিল আলোচনার পর্যায়ে। সেই সময়ে ঢাকায় নবাগত ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি স্টিভেন কোরলিস মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ঢাকার চিন্তার বিষয়টি তার সঙ্গেও শেয়ার করে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই চিন্তা বা পরিকল্পনা বেশ দূর অগ্রসর হয়নি। গত মাসে গভীর সমুদ্রে ভাসতে থাকা ৫ শতাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ে জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থার পর বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ অনুরোধ জানালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বৃটিশ মন্ত্রীকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা আর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন। একই সঙ্গে তাদের উদ্ধারে বৃটিশ রয়েল নেভি শিপ পাঠানোর পরামর্শ দেন। বলেন, বৃটেনের রয়েল জাহাজ এসেও তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় দিতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে উন্নত রাষ্ট্রগুলোকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে এগিয়ে আসা উচিত বলেও সেদিন মন্তব্য করেন মন্ত্রী। বৃটিশ মন্ত্রীর সঙ্গে অালাপে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, সীমিত সম্পদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে ইতোমধ্যে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তারপরও বাংলাদেশকেই অনুরোধ করা হচ্ছে। অথচ অন্য দেশগুলোকে কেউ আশ্রয় দিতে বলছে না, তারা নিজেরাও এগিয়ে আসছে না। মন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের ওপরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের দায়িত্ব বর্তায়। মন্ত্রী সেদিন খোলাসা করে বলেন, বাংলাদেশ আর পারছে না। এখন চাইলে যে কেউ রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারেন। সেখানে ভালভাবে থাকা-খাওয়ার সুন্দর ব্যবস্থা করতে পারে। বছরের পর বছর ধরে চলা রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত, কার্যকর তথা টেকসই সমাধানে পদক্ষেপ নিতেও সেদিন তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বৃটিশ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোন আলাপ ছাড়াও সর্বশেষ ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপের ১০ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে মন্ত্রী মোমেন রোহিঙ্গাদের ইউরোপ অথবা অন্য কোনো (তৃতীয়) দেশে সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের একার নয়। ওই বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, তিন বছর পার হয়ে গেছে। মিয়ানমার বলছে তারা ফেরাতে সম্মত, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে পারেনি। বৈঠকে ইইউ দূতরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফোরজি নেটওয়ার্ক চালুর অনুরোধ জানান। জবাবে মন্ত্রী বলেন, মাদক, নারী ও শিশু পাচার রোধ, আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গে লোকদের উস্কানি দেয়া বন্ধের পাশাপাশি পর্ণোগ্রাফি প্রদর্শন ঠেকানোসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া এটা তাদের সক্ষমতার সঙ্গেও যায় না।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...