প্রকাশিত: ২২/১০/২০২০ ৭:৫৩ এএম

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য শতকোটি ডলারের মানবিক সহায়তা তহবিল সংগ্রহে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সম্মেলন ডেকেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। আয়োজক ওই চার দেশ, জোট ও সংস্থার মধ্যে ইউএনএইচসিআর শরণার্থী ও শরণার্থী পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করে। বাকি দেশ ও জোট রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নিপীড়নকে এখনো ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকার করেনি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত গুরুতর নৃশংসতার নিন্দা জানিয়ে তারা শাস্তিমূলক কিছু উদ্যোগ নিলেও তাতে এখনো তেমন ফল আসেনি। দৃশ্যত পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারের ওপর বড় পরিসরে চাপ সৃষ্টির চেয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দাতা সম্মেলন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহায়তা হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে চায়। তবে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার চেয়ে প্রত্যাবাসনেই বেশি জোর দিচ্ছে।
জানা গেছে, আজকের এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও প্রায় ৫০টি দেশ অংশ নেবে। বাংলাদেশের পক্ষে এ সম্মেলনে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

আয়োজকরা জানিয়েছে, আশ্রিত রোহিঙ্গা, আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে অতি জরুরি এই অর্থায়নে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাবে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে নতুন করে শুরু হওয়া এই সংকটের সর্বসাম্প্রতিক পর্যায়ে তারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে একটি সম্মেলনে রোহিঙ্গা, আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তার পরিমাণ আগের তিন বছরের বেশি সময় ধরে দেওয়া পরিমাণের চেয়ে বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানাবে।

এ বছর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবিক চাহিদা পূরণে জাতিসংঘ আরো ১০০ কোটি ডলার সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই সহায়তার পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ফলে অর্থায়নে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। কভিড-১৯ মহামারির কারণে অর্থায়ন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
জানা গেছে, সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান এবং আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্থায়ীভাবে ফিরে যাওয়ার আবশ্যকতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা সম্ভব হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি স্টিফেন ই বিগান বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে উদার দাতা দেশ হিসেবে আমরা আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনুঘটক হিসেবে কাজ করি এবং এই সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার, সেই সঙ্গে নতুন ও প্রতিশ্রুতিশীল দাতা দেশসহ অন্য সবাইকে তহবিল প্রদানের আহ্বান জানাই।’

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, ‘ভয়াবহ বর্বরতার শিকার হয়ে এবং কল্পনাতীত খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। এই সুপরিকল্পিত সহিংসতার হোতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এই অপরাধের জন্য আমরা তাদের অব্যাহতভাবে দায়ী করে যাব।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সংকট নিরসনে অন্যতম প্রধান দাতা দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ২০১৭ সাল থেকে কাজ করে আসছে। তাদের দুর্দশার মাত্রা অনুধাবনপূর্বক সারা বিশ্বকে জাগ্রত হতে হবে এবং জীবন বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সংকট ব্যবস্থাপনাবিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনার জ্যানেন লেনার্সিক বলেন, ‘এই সংকটকালে রোহিঙ্গারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অব্যাহতভাবে পূর্ণ সহায়তা পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে স্থানীয় পর্যায়ে ও আশ্রয় দেওয়া সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো প্রকৃত সংহতি নিয়ে সাড়া দিয়েছে। আমরা মানবিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম এবং স্থিতিশীলতার জন্য আরো বেশি সহায়তার আহ্বান নিয়ে এগিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই সমাধানে পৌঁছতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে আরো জোরদার করা আবশ্যক।’

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি প্রকাশের অর্থ শুধু তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো নয়। অন্য সবার মতো শরণার্থীদেরও রয়েছে সম্মানজনক জীবন, নিরাপদ ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ পাওয়ার অধিকার।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকার করলে তা ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকেরই সহানুভূতি থাকলেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া বা ‘জেনোসাইড’ ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেরই অনাগ্রহ রয়েছে। এমনকি গত জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, সংক্ষেপে আইসিজে) মিয়ানমারকে ‘জেনোসাইড’ বন্ধে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়ার পরও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সেই আদেশ বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে ৩৪টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে ‘জেনোসাইড’ স্বীকার করে তা ঠেকাতে ও প্রতিকারে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।

পাঠকের মতামত