প্রকাশিত: ২২/০৬/২০১৯ ৭:৩৮ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি। ওই কমিটি একই সঙ্গে মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত ‘বার্ম ইউনাইটেড থ্রো রিগোরাস মিলিটারি অ্যাকাউন্টিবিলিটি (সংক্ষেপে-বার্মা অ্যাক্ট)’ শীর্ষক একটি আইনের খসড়া সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই অগ্রগতির পর এখন ‘বার্মা অ্যাক্টের’ ব্যাপারে ভোটের জন্য প্রতিনিধিসভায় পাঠানো হচ্ছে।

প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সভাপতি এলিয়ট এল. ইঙ্গেল গতরাতে এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, প্রতিনিধিসভায় এবং প্রয়োজনে সিনেটেও আইনটি দ্রুত পাস হবে বলে আশা করছি। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ভয়ংকর নিপীড়নের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষার প্রহর আর দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়। আইনটি পাস হলে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ‘জেনোসাইড’ ও যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কী করছে তা কংগ্রেসকে অবহিত করতে হবে।

বার্মা অ্যাক্টের আওতায় জেনোসাইডের হোতাদের ওপর ভ্রমণ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি তাদের বিচার ও জবাবদিহির উদ্যোগ নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।

এদিকে অগ্রগতি আছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও। রোহিঙ্গা নিপীড়ন ‘জেনোসাইড’ কি না তা নির্ধারণের আহ্বানসংবলিত একটি প্রস্তাব বিবেচনায় নিচ্ছে সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি। সিনেটর জেফ মার্কলে সিনেটে প্রস্তাবটি এনেছিলেন গত ১১ জানুয়ারি। ঠিক সাড়ে পাঁচ মাস পর আগামী ২৫ জুন (বাংলাদেশ সময় ২৬ জুন ভোর) ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে সিনেট কমিটির বৈঠকে ওই প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। তবে ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ২৩ সিনেটর এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এর ‘কো-স্পন্সর’ (সহপৃষ্ঠপোষক) হয়েছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভূরাজনীতিসহ বিভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকে ‘জেনোসাইড’ (গণহত্যা হিসেবে প্রচলিত) বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলা থেকে এখনো বিরত আছে। যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের পরিস্থিতি, বিশেষ করে ‘জেনোসাইড’ ঠেকাতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই কোথাও ‘জেনোসাইড’ হচ্ছে বলে স্বীকার করলে যুক্তরাষ্ট্রকে তা ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়ার অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে।

সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনেট কমিটি এ সপ্তাহে রোহিঙ্গাবিষয়ক যে খসড়া প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিচ্ছে তার দ্বিতীয় দফায়ই ‘জেনোসাইড’ ও ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’র বিষয়টি এসেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনী যে নিপীড়ন চালিয়েছে তা ‘জেনোসাইড’ ও ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে। এ ছাড়া ‘রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী’ মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল অং মিনসহ সামরিক কর্মকর্তা ও বিদ্যমান কর্তৃপক্ষগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে তার সহযোগী অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

খসড়া প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান স্থান পেয়েছে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের ব্যবস্থা সহজ করতে এবং বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের চলাফেরার স্বাধীনতা দিতেও খসড়া প্রস্তাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে আগামী সোমবার থেকে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪১তম অধিবেশনেও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠছে। জানা গেছে, বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে মানবাধিকার পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গৃহীত প্রস্তাবের বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। একই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধ করার বিষয়ে তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি গতকাল শুক্রবার ব্যাংককে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (রোহিঙ্গা) শরণার্থী। আমরা তাদের যতটা সম্ভব সহযোগিতা করব।’

রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করতে কিছু করার সুযোগ আছে বলে জানান মাহাথির। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে আসিয়ানের ভাবনার বাস্তবতা এবং রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ নিয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন।

পাঠকের মতামত