প্রকাশিত: ০৯/০৩/২০১৮ ১২:১৩ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৪০ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশের কারণে পণ্য সরবরাহের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই চাপের ফলে পণ্যমূল্য বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক যেমনÑ বন্যা, জ্বলোচ্ছাস, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ার কারণেও মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে গড় বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। গত মার্চে এই হার ছিল ৫.৩৯ শতাংশ। গত বছরর ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় নির্বিচারে গণহত্যা, নারীদের ধর্ষণ, এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। ওই সময় থেকেই রোহিঙ্গাদের এদেশে আসা শুরু, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা মূলত কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যাংছড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এদের কারণে স্থানীয়ভাবে সব ধরনের পণ্য ও সেবার চাহিদা বেড়েছে। ফলে বেড়েছে দামও। এর প্রভাব পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতেও। ফলে সেস্টেম্বর থেকেই মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে শুরু করে। গত সেপ্টেম্বর এই হার ছিল ৫.৫৫ শতাংশ। অক্টোবরে তা আরও বেড়ে ৫.৫৯ শতাংশ হয়। নভেম্বরে আরও বেড়ে গিয়ে ৫.৬৪ শতাংশে দাঁড়ায়। গত ডিসেম্বরে এই হার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৭০ শতাংশে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে যদি হঠাৎ করে ১০ লাখ মানুষ চেপে বসে এবং সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে এর নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে। বিশেষ করে স্থানীয় অর্থনীতিতে এর জোগানে সমস্যা তৈরি করবে। যে কারণে টেকনাফ, উখিয়া অঞ্চলে এখন সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গারা কাজের সন্ধানে বাইরে বেরিয়ে পড়ায় শ্রমের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমের মূল্য পড়ে গেছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের একটি শিবিরে রেখে উৎপাদনমুখী কাজে লাগাতে পারলে তা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারত।
সূত্র জানায়Ñ টেকনাফ ও উখিয়া অঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮৬ বাংলাদেশির বসবাস। শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পেয়েছে আরও ১০ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে উখিয়া-টেকনাফে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে দেশি-বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগের হাজার হাজার নারী-পুরুষ। সব মিলিয়ে উখিয়া-টেকনাফে বাড়তি খাদ্য, পণ্য ও সেবার চাহিদা রয়েছে। খাদ্য ও পণ্যের জোগান বাড়লেও বিশেষ করে গণপরিবহনসহ অন্যান্য সেবার পরিধি খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়নি।
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুর পর এবং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর সীমান্তবাণিজ্য একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। বৈধভাবেও সীমান্তপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নেই বললেই চলে। এ ছাড়া চোরা পথে বাণিজ্যও কমেছে। এতে স্থানীয়ভাবে মানুষের আয় কমে গেছে। সব মিলে স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে উত্তেজনা থাকায় শীতের সময়ে টেকনাফ অঞ্চলে পর্যটকদের আগমনও ছিল কম। পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় সেন্টমান্টিন দ্বীপে জাহাজ চলাচল অনেক সময় বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টেকনাফেও পর্যটকদের অবস্থান করার সুযোগ ছিল কম। যে কারণে টেকনাফের অর্থনীতিতে বাড়তি অর্থের জোগান মেলেনি।
এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য যে বৈদেশিক ও স্থানীয় সহায়তা আসছে তা স্থানীয় অর্থনীতিতে ব্যবহার হচ্ছে খুবই কম। তাদের জন্য আনা পণ্য বেশির ভাগই ওই অঞ্চলের বাইরে থেকে কেনা।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার ইউনিয়ন হাসপাতালে ডাক্তার নার্সদের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু

কক্সবাজারের বেসরকারি ইউনিয়ন হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের ভুল চিকিৎসায় মারা গেলো মহেশখালীর আফসানা হোসেন শীলা ...

টেকনাফ সীমান্তে সর্ববৃহৎ মাদকের চালান লুটপাট শীর্ষক সংবাদে একাংশের ব্যাখ্যা ও প্রতিবাদ

গত ১৯ এপ্রিল টেকনাফ সীমান্তের জনপ্রিয় অনলাইন টেকনাফ টুডে এবং গত ২১এপ্রিল টিটিএন সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন ...