প্রকাশিত: ২২/০৩/২০১৭ ৯:০২ এএম , আপডেট: ২২/০৩/২০১৭ ৯:০২ এএম

মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর যেসব লোকজন বাংলাদেশে বা পরে ভারতে ঢুকছে, ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়দার মতো সংগঠন তাদের র‌্যাডিকালাইজ করে জঙ্গি কাজকর্মে হাতেখড়ি দেওয়াতে চাইছে বলে বাংলাদেশকে সতর্ক করে দিয়েছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল।

আর ভারত এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে এদিন দিল্লিতে বিমস্টেক দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের প্রথম সম্মেলনে, যেখানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।স্বাগতিক দেশের পক্ষে অজিত দোভাল ছাড়াও বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান- বিমস্টেকভুক্ত এই দেশগুলো থেকে মি. দোভালের কাউন্টারপার্টরাও এসেছেন দিল্লিতে আজকের এই সম্মেলনে যোগ দিতে। বঙ্গোপসাগরীয় ‘রিম’ এলাকার দেশগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েই সেখানে বিশদ আলোচনা হয়েছে।বিমস্টেকের পরিসরে এ ধরনের বৈঠক এই প্রথম হলো।

ঢাকা থেকে এই বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক। বিমস্টেক বৈঠকের অবকাশে বাংলাদেশ-ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো নিয়েও মেজর জেনারেল সিদ্দিকের সঙ্গে অজিত দোভালের একান্তে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে।

বস্তুত গত বছরের অক্টোবরে গোয়ার সমুদ্রতটে বিমস্টেক আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলনে এই জোটের সাতটি দেশের নেতারা যখন মিলিত হয়েছিলেন, তখনই সিদ্ধান্ত হয়েছিল এই দেশগুলোর এনএসএ-রা প্রতিবছর নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসবেন। বিমস্টেকের লিড কান্ট্রি হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের প্রথম বৈঠক আয়োজনের দায়িত্ব পায় ভারত। দিল্লিতে আজ ২১ মার্চ সেই বৈঠকই অনুষ্ঠিত হলো।

একদিনের এই নিরাপত্তা সম্মেলনে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে ছিল পুরোঅঞ্চলে জঙ্গি কার্যকলাপ রোধ করা, নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা।

আঞ্চলিক নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেখানে অজিত দোভাল স্পষ্ট জানিয়েছেন, গোয়েন্দা সূত্রে ভারতের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে মিয়ানমার থেকে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ বা এমনকি ভারত বা থাইল্যান্ডে পর্যন্ত চলে আসছেন, তাদের ‘র‌্যাডিকালাইজ’ করা বা জঙ্গিবাদে হাত পাকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ইসলামিক স্টেট বা আল কায়দার মতো সংগঠন।যেহেতু এই মানুষজন খুব ‘ভালনারেবল’ তাই জঙ্গিবাদের দিকে টেনে আনতে বা নতুন রিক্রুট হিসেবে কাজে লাগাতে, এই রোহিঙ্গাদের সহজ টার্গেট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) নানা ঘটনার তদন্তের সূত্রে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন সদস্যকে জেরা করে এই ধরনের ‘র‌্যাডিকালাইজেশনে’র স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে বলেও অজিত দোভাল জানিয়েছেন।

তবে এমন নয় যে, রোহিঙ্গাদের প্রভাবিত করতে ইসলামিক স্টেট বা আল কায়দার ভিনদেশি রিক্রুটাররা সিরিয়া বা ইরাক থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ কিংবা ভারতের জম্মুতে (যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা থাকছেন) চলে আসছেন। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই কাজটা করানো হচ্ছে তাদের স্থানীয় ‘এজেন্ট’দের দিয়ে, যারা রোহিঙ্গাদের ভাষা জানেন বা বোঝেন এবং যাদের চেহারা দেখে আলাদা করে চেনার উপায় নেই। এই জিনিস ঘটছে বাংলাদেশে, আবার ভারতের জম্মুতেও।

অবশ্য সরকারিভাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে, সে দেশে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের কোনও অস্তিত্ব নেই। সে দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলোতে আইএস কোনোভাবে জড়িত, সে কথাও তারা স্বীকার করে না।

কিন্তু বিমস্টেক এনএসএ-দের বৈঠকে ভারতের বক্তব্য থেকে এটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল, এই অঞ্চলে ইসলামিক স্টেট নেই ভেবে আত্মতুষ্ট থাকার কোনও অবকাশ নেই বলেই দিল্লি মনে করে। নির্যাতিত, গরিব ও ভিটেছাড়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের শেকড় বিছানোর চেষ্টা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে- যেমন বাংলাদেশে, তেমনি ভারতেও।

পাঠকের মতামত