প্রকাশিত: ১৫/১০/২০১৮ ৯:৪০ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট,উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করতে পারে না বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ভি কে সিং। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করবে বলে ভারত আশা করে।

আর এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়াই হতে পারে সংকট সমাধানের প্রথম ধাপ।
সম্প্রতি কক্সবাজার সফরকারী এক ভারতীয় কর্মকর্তা নয়াদিল্লিতে কালের কণ্ঠ’র এ প্রতিনিধিকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও অভাবনীয়। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চান বলেই তাঁরা দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হওয়া দেখতে চান।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে প্রত্যাবাসন শুরু হতে যত দেরি হয়েছে পুরো প্রক্রিয়াটি ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাঁরা এ অঞ্চলে এমনটি দেখতে চান না।

গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সচিবালয় সাউথ ব্লকে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভি কে সিং বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনায় বসুক এবং এ নিয়ে কাজ করুক। প্রথমেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লোকগুলোকে (রোহিঙ্গাদের) ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। তারা সবাই ‘মিয়ানমারি সিটিজেন’ (মিয়ানমারের নাগরিক)। তাদের সেখানেই ফিরিয়ে নিতে হবে।

আপনারা (মিয়ানমার) বলতে পারেন না যে তারা (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারের নয়। তারা সেখানে (মিয়ানমারে) অনেক আগে থেকেই ছিল। ”
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে এক বৈঠকে চীন এই দুই দেশকে দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে বলেছে। এবার ভারতও দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। অর্থাৎ ভারত ও চীন—দুই দেশই চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার মিলে দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করুক।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো বলছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানও ভিন্ন নয়। বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ সংকট সমাধানের জন্যই মিয়ানমারের সঙ্গে গত নভেম্বর মাসে প্রত্যাবাসন চুক্তি সই করেছে। পরে সেই চুক্তির আওতায় আরো কয়েকটি সমঝোতা হয়েছে এবং যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক বসছে। আগামী ২৮ বা ৩০ অক্টোবর প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক এবং মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।

ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান দ্বিপক্ষীয়ভাবে হবে বলেই বাংলাদেশ আশাবাদী। তবে এ জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারত ও চীন—উভয়েই রোহিঙ্গা সংকট সমাধান চায়। কিন্তু তারা চায় না, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাইরের বা অন্য অঞ্চলের কেউ যুক্ত হোক। কারণ ভূরাজনৈতিক স্বার্থে অনেক পশ্চিমা দেশ এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।

নয়াদিল্লিতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘গণহত্যা’ বা নিপীড়নের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ অন্যান্য হত্যা—এসব বিষয়ে প্রতিকার কী হবে তা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার মিলেই ঠিক করতে পারে। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, এত জোরালো সম্পর্কের পরও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভারত কেন উচ্চকণ্ঠ নয়? জবাবে ভি কে সিং বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার—দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক আছে। ভারত দুই দেশকেই সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশের ওপর ১০ লাখেরও বেশি লোকের বোঝা কেমন তা ভারত বুঝতে পারে। বাংলাদেশকে মানবিক সংকট মোকাবেলায় ভারত সহযোগিতা দিচ্ছে। অন্যদিকে ভারত মিয়ানমারকে সংকট সমাধান করতে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বলছে।

মিয়ানমারের ওপর বেশ আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল অবস্থান হলো, এ সংকটের সমাধান বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যেই হতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা যদি কোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারি তবে সানন্দে তা করব। ’

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য রাখাইনে ভারত ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে। প্রয়োজনে আরো সহযোগিতা দিতে ভারত প্রস্তুত আছে। তবে ভারত আশা করছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার মিলে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর সিদ্ধান্ত নেবে। প্রথম দফায় কিছু লোক যাওয়ার পর অনুকূল পরিবেশ পেলে বাকিরাও হয়তো পরে ফিরে যেতে আগ্রহী হবে।

ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ইতিমধ্যে আলাদাভাবে যুক্ত হয়েছে। ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমার কী কী করছে এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদান প্রক্রিয়া কী হবে সে বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা শঙ্কা রয়েছে। এই শঙ্কা কাটাতে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলকে কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের বোঝাতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার তাতে সম্মতি দিয়েছে।

পাঠকের মতামত