প্রকাশিত: ১৪/০৭/২০১৮ ৩:৫৪ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৪৫ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট ::
যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) নিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় ৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অভিবাসন পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে ধরা পড়েন পাঁচ রোহিঙ্গা তরুণ। তাঁরা কেউই বাংলাদেশের নাগরিক নন বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। পরে তাঁদের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়।

পুলিশ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করিয়ে দিতে দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রে পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মচারী-কর্মকর্তা, দালাল ও পুলিশের মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁরা জনপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন।

বিষয়টি অস্বীকার করেননি বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রিজওয়ান। তিনি বলেন, ভুল তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা হরহামেশা পাসপোর্ট নিচ্ছে। এটা ঠেকানো যাচ্ছে না।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দর্শনায় আটক হওয়া পাঁচ রোহিঙ্গার মধ্যে চারজন পুলিশের সুপারিশ ছাড়া এবং একজন সুপারিশের ভিত্তিতে পাসপোর্ট পেয়েছেন। তাঁরা নিজেদের চুয়াডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জ ও ফেনী জেলার স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কুমিল্লার আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছিলেন। রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি হিসেবে দেখিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহের আবেদনের ফরমে সুপারিশ (স্বাক্ষর) রয়েছে ফেনী জেলার চার পুলিশ কর্মকর্তার। আর কোনো রকম ঠিকানা যাচাই-বাছাই ছাড়াই রোহিঙ্গাদের এমআরপি পাসপোর্ট দিয়েছেন অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ।

বাংলাদেশি সেজে পাসপোর্ট পাওয়া রোহিঙ্গার আবেদন ফরমে সুপারিশ রয়েছে ফেনী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহীনুজ্জামানের। যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে কোনো রোহিঙ্গার জন্য তিনি বা ফেনীর অন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কখনো সুপারিশ করেননি। পাসপোর্টের ঠিকানা যাচাইয়ের কাজটি মূলত সংশ্লিষ্ট থানাই করে থাকে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ কুমিল্লা থেকে বদলি হয়ে এখন ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বিদেশে চলে গেছে। সেখানে রোহিঙ্গারা নানা ধরনের অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে, বাংলাদেশিদের কাজের পরিবেশ নষ্ট করছে।

মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশেষ ক্ষেত্রে ঠিকানা যাচাই ছাড়াই পাসপোর্ট দেওয়ার যে নিয়ম রয়েছে, রোহিঙ্গারা তার সুযোগ নিচ্ছে। অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় আসা বেশির ভাগই বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারের ঠিকানা ব্যবহার করছেন। তাঁরা নিজেদের কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, মহেশখালী উপজেলার বাসিন্দা বলে দাবি করছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, পাসপোর্ট করতে গেলে আঙুলের ছাপ নেওয়ার সময়ই রোহিঙ্গাদের ধরা পড়ে যাওয়ার কথা। প্রথম দিকে তারা অবাধে পাসপোর্ট পেলেও এখন আর পাচ্ছে না। জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ তাদের (রোহিঙ্গা) পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোহিঙ্গাদের আঙুলের ছাপ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে খোঁজ নিতে গিয়ে পাওয়া গেল চমকপ্রদ তথ্য। নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের তথ্যভান্ডার এখনো পাসপোর্টের মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। কবে সেটা যুক্ত হবে, সে সম্পর্কে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরই কোনো ধারণা নেই। এ কারণে কোনো রোহিঙ্গা যদি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে থাকেন, পুলিশ প্রতিবেদন ছাড়া তাঁকে শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে থাকা নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬। তাদের নাম-ঠিকানা, ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে সরকার ডেটাবেইস (তথ্যভান্ডার) তৈরি করেছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ১৫ জানুয়ারি বরিশালে পাসপোর্ট করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন চার রোহিঙ্গা। সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করাতে তাঁদের কক্সবাজার থেকে বরিশাল নিয়ে যান দালালেরা। নড়াইল পাসপোর্ট অফিস থেকে গত ১০ এপ্রিল এক দালাল ও দুই রোহিঙ্গা নারীকে আটক করে পুলিশ। ৩৫ হাজার টাকায় দালালের মাধ্যমে তাঁরা পাসপোর্ট করতে চেয়েছিলেন। রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে গত ৪ এপ্রিল এক রোহিঙ্গা তরুণীকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় পাসপোর্ট অফিসের তিন দালালকেও আটক করা হয়। ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা তরুণীকে পাসপোর্ট করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন দালালেরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ এবং জাতীয়তা সনদ দিয়ে সহায়তা করছেন। এসব ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়াতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের কেউ রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া পাসপোর্ট অধিদপ্তরকেও পাসপোর্টের আবেদন ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে বলেছে মানব পাচার রোধে গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটি। আর পুলিশকে বলেছে, ঠিকানা যাচাইয়ের সময় আবেদনকারীর সঙ্গে অবশ্যই কথা বলতে হবে পুলিশকে।

ঠিকানা যাচাই না করে পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি করলেই ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট করার প্রবণতা কমে যাবে বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট নিয়ে যত দুর্নীতি হয়, তার মূলে থাকে পুলিশের ঠিকানা যাচাইয়ের ব্যাপারটি। তাই ঠিকানা যাচাইয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে। সুত্র; প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...

ইসলামপুরে আটক রোহিঙ্গা যুবককে কুতুপালং ক্যাম্পে হস্তান্তর

জামালপুরের ইসলামপুরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার মো. রোবেল (২২) নামের সেই রোহিঙ্গা যুবককে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের ট্রানজিট ...