প্রকাশিত: ১৩/০৭/২০২০ ১০:০২ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, গণধর্ষণ ও গণহত্যার ফলে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। উখিয়া-টেকনাফে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার কারণে ৮ হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এখানকার পাহাড় ও বনাঞ্চল উজাড় করে ফেলেছে। যাদের জন্যে মানবতার শহর উখিয়া-টেকনাফে এত কিছু ত্যাগ শিকার করা হয়েছে তারাই আজ নানান অপরাধ করে এখানকার সুনাম ক্ষুন্ন করছেন। রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর অবস্থান যতটা নিরব ছিল, এখন তেমনটি নেই।আগে তাদের চাহিদা ছিল খাদ্য এবং চিকিৎসার ওপর। এখন ফ্রি রেশনের খাবার খেয়ে আলস্যতার কারণে তাদের মাথায় দুষ্টবুদ্ধি কাজ করে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি যুবক। ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের অনৈতিক কর্মকান্ড, স্থানীয়দের বাস্তুভিটা জবর দখল, অপহরণ করে মুক্তিপন দাবী, ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গাদের আধিপাত্য বিস্তার প্রভৃতি লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে ক্যাম্প এলাকায় বসবাসরত স্থানীয়রা ত্রাণ ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছে।

কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি)র নিকট প্রদত্ত অনুলিপি বলা হয়েছে গত ৬ মাস ধরে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ যোগদান করার পর থেকে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথাবার্তা ও অনধিকার হস্তক্ষেপ করে আসছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের কথায় বিশ^াস করে ২৫০/৩০০ রোহিঙ্গা উশৃঙ্খল যুবক কুতুপালং ডি-৪ এলাকায় স্থানীয় এক হতদরিদ্র মফিজ উদ্দিনের বসতবাড়িটি ভাংচুর করে মালামাল লুটপাট করে। এঘটনা নিয়ে রাজাপালং ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ক্যাম্প ইনচার্জের অপসারণ দাবী করেন। তবে ক্যাম্প ইনচার্জ খলিলুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় কিছু লোকের অনৈতিক আবদার রক্ষা করতে না পারায় তারা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও অনলাইন মিডিয়া কুৎসা রটনা করে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ক্যাম্পের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি সচেষ্ট আছেন।
বলাবাহুল্য রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ এখন রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছে। এর আগে তারা মরণ নেশা ইয়াবা বহন করলেও এখন তারা নিজেরাই ইয়াবা সরবরাহ করছে। এ কাজ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ আটক ও বন্দুক যুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে।
সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা। পুলিশের তালিকায় ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম রয়েছে। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র‌্যাব-১৫ সূত্র জানিয়েছে, গত ৬ মাসে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে, ১০,৮৩,৭১৯ পিস। প্রেফতার হয়েছে ১৮৭ জন আর র‌্যাবের সঙ্গে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন ১০ জন। মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা আসার পর থেকেই মেথাফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি উত্তেজক বড়ি ইয়াবার পাচার বেড়ে গেছে। যে কারণে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অনেক বেশি ইয়াবার চালান ও পাচারকারী ধরা পড়েছে। গত ৬ জুলাই দিবাগত রাতে টেকনাফের হ্নীলার ওয়াব্রাং গ্রামের নাফ নদের তীর সাঁতরিয়ে ইয়াবা নিয়ে অনুপ্রবেশকালে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে ৫০ হাজার ইয়াবা, একটি চায়না পিস্তল ও দুই রাউন্ড কার্তুজ।

টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে,কর্ণেল ফায়সাল হাসান খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন, উখিয়ার কুতুপালং ৫ নম্বর ক্যাম্পের জি ২/ই বøকের মোহাম্মদ শফির ছেলে মোহাম্মদ আলম (২৬) ও বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্পের কে-৩ বøকের মোহাম্মদ এরশাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ ইয়াছিন (২৪)। কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযানে ৩৪,২৩,৮৯,১০ টাকা মূল্যের ১১,৪১,২৯৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে ও ৮৯ জন আসামি আটক করা হয়। এছাড়া বিজিবির সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে ৯ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

তাদের সর্বশেষ অপারেশন গত ৯ জুলাই ভোর ৪ টার দিকে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের তুলাতলী জলিলের ঘোনা ব্রিজের পাশে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তারা ইয়াবা কারবারি বলে দাবি করেছে বিজিবি। এ সময় তিন লাখ পিস ইয়াবা, দুটি দেশীয় পাইপগান ও পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। ৭ জুলাই ভোরে টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়ার কম্বনিয়া এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। চলতি বছরের জুন মাস থেকে গতকাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৬০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। তার মধ্যে ২৬ জন সক্রিয় ডাকাত ছিল বলে জানা যায়। বাকিরা রোহিঙ্গা মাদক কারবারি।
কক্সবাজার র‌্যাব ১৫- এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে র‌্যাবের প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। র‌্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। টহল জোরদার করেছে র‌্যাব। উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তার মর্জু বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিয়মিত টহল ও অভিযানজোরদার করেছে পুলিশ। কঠোর অবস্থান ও নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...