প্রকাশিত: ২৩/১১/২০২০ ৯:১৭ এএম

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের খুবই উপযোগী পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে তাদের স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপন এবং জীবিকাসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজারে বর্তমানে যেভাবে রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করছে, তার চেয়ে অনেক ভালো থাকবে ভাসানচরে।

সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শন শেষে সমকালকে এ কথা জানিয়েছেন পরিদর্শন দলে থাকা কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। পরিদর্শন দলের প্রধান ও এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক শাহাদাৎ হোসাইন বলেন, পরিদর্শনের পর ভাসানচরে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সম্পর্কে খুবই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে বিভিন্ন এনজিও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পর সম্ভাব্য সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্প (ফুড ও নন ফুড) জমা দেবে বলেও জানিয়েছে।

গত ১৬ নভেম্বর ২২টি এনজিওর কর্মকর্তাদের নিয়ে ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচর পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকারী এনজিও সংস্থাগুলো হচ্ছে- পালস বাংলাদেশ, গ্লোবাল উন্নয়ন সেবা সংস্থা, শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল, কেএসআর বাংলাদেশ, জনসেবা কেন্দ্র, সোনে ইন্টারন্যাশনাল, আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন, আল-মানহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর হিউম্যানিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি), স্কাস, কারিতাস, মুক্তি কক্সবাজার, সোশ্যাল এইড কক্সবাজার, ভিওএসডি (মাগুরা), আরটিএমআই, ফ্রেন্ডশিপ, হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল, আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন, এসডব্লিউএবি, মাল্টিসার্ভ ইন্টারন্যাশনাল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কক্সবাজার এবং হেল্প দ্য নিডি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট।

সোনে ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর আল মামুন সমকালকে বলেন, তারা কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের খুবই কষ্টকর জীবনযাপনের চিত্র দেখেছেন। এমনকি ক্যাম্পের কারণে স্থানীয়দের জীবনযাত্রাও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, কক্সবাজারের স্থানীয়দেরও অনেকেই এখন কক্সবাজার ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। কক্সাবাজারে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় একাধিক পরিবারের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাওয়ার চিত্র দেখেছেন। কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প দিন দিন অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় পড়েছেন। এ অবস্থায় কক্সবাজার ক্যাম্পে চাপ কমানোর বিকল্প নেই। তিনি জানান, ভাসানচর পরিদর্শনকালে তারা দেখেছেন সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই ভালো থাকার ব্যবস্থা, দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যবস্থা, বাজার, স্কুল, নামাজ ঘর, সেবাদাতাদের থাকার ব্যবস্থাসহ সবকিছুই করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। পরিদর্শনকালে তারা জেনেছেন, প্রায় ১২ হাজার মানুষ দুই বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে ভাসানচরকে বসবাসের উপযোগী করে তুলেছেন। এ সময় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যেমন ঘটেনি, তেমনি কোনো দুর্যোগও আসেনি। এটাই প্রমাণ করে যে ভাসানচর মানুষের বসবাসের জন্য নিরাপদ।

রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পর এখানে দেশের ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলেও তারা জেনেছেন। এ অবস্থায় কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা উচিত বলে তার অভিমত। কারণ সেখানে রোহিঙ্গারা অবশ্যই কক্সবাজারের চেয়ে অনেক ভালো থাকবে।

পালস বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম বলেন, সেখানে যে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে তা খুবই সন্তোষজনক। রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য খুবই ভালো মানের শেড তৈরি করা হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য পৃথক ও আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। যারা সেবা দেবেন তাদের জন্যও আধুনিক ব্যবস্থা আছে। পরিদর্শনের পর তিনি জোর দিয়েই বলতে পারেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হলে তারা আরও ভালোভাবে জীবনযাপনের সুযোগ পাবেন।

গ্লোবাল উন্নয়ন সেবা সংস্থার নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এনজিও ব্যুরোর তত্ত্বাবধানে তারা ভাসানচর পরিদর্শন করেন। তাদের এক রাত থাকারও ব্যবস্থা করা হয়। সেই থাকার জায়গাটিও আধুনিক ও উন্নত। অতএব, ভবিষ্যতে যারা ভাসানচরে সেবা দেবেন তাদের থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যা নেই। আর রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গাও খুবই ভালো। এখানে তারা কক্সবাজারের ক্যাম্পের চেয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবেন। এখানকার পরিবেশ খোলামেলা এবং দৃষ্টিনন্দন। সব ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাই এখানে আছে। তার অভিমত, তারা যা দেখেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট করেই বলতে পারেন, রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য ভাসানচর খুবই উপযোগী।

সেন্টার ফর হিউম্যানিটি ইন ডেভেলপমেন্টের কর্মসূচি উন্নয়ন ব্যবস্থাপক মনছুরুল হাবিব বলেন, সবদিক দিয়েই উপযোগী পরিবেশ। তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন। কক্সবাজারে এত বেশি চাপ যে, সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর বিপরীতে ভাসানচরে খুব ভালো পরিবেশ। এখানে কাউকে গাদাগাদি করে থাকতে হবে না। উন্নত নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থাও আছে। অতএব, রোহিঙ্গাদের একটা অংশকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরে সরকারি সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন হওয়া দরকার।

এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক শাহাদাৎ হোসাইন সমকালকে বলেন, যে সব এনজিও কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে, তাদের মধ্য থেকে ২২টি এনজিওকে ভাসানচর পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিদর্শনের পর তারা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ দেখে সন্তুষ্ট। এ কারণে তারা ভবিষ্যতে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য প্রকল্প জমা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। বেশ কয়েকটি এনজিও প্রকল্পের জন্য দাতা সংস্থা খুঁজছে। আশা করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহ থেকেই প্রকল্প জমা পড়া শুরু হবে। সমকাল

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...