প্রকাশিত: ১৪/০৬/২০২১ ৯:১৮ এএম

মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। এই সমর্থন জানাতে ‘ব্ল্যাক৪রোহিঙ্গা’ নামে এক হ্যাশট্যাগ চালু করেছে। এতে কালো পোশাক করে অনেকেই ছবি প্রকাশ করছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম উইয়ন নিউজ এখবর জানিয়েছে।

মিয়ানমারে সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রাখাইনের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। ১ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক নেতা অং সান সু চির সরকারকে উৎখাত ক্ষমতা দখল করা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে সংখ্যালঘু জাতির অধিকারের লড়াইও যুক্ত হয়েছে।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও অতীতের বেসামরিক সরকার বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দাবি করে। কয়েক দশক ধরে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি জরুরি সেবা ও যাতায়াতের স্বাধীনতাও নেই।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয়ে রয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিলেও এ নিয়ে গড়িমসি করে আসছে দেশটি।

সম্প্রতি অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত দেশটির জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) পাঁচটি নীতিকৌশল প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যাক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে নাগিরকত্ব স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি।

এই প্রতিশ্রুতি প্রকাশের পর মিয়ানমার জান্তার এক মুখপাত্র রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঝাও মিন তুন বলেন, রোহিঙ্গা হলো একটি কাল্পনিক নাম। যারা নিজেদের এই নামে অভিহিত করে তারা আসলে ‘বাঙালি’। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের স্বীকৃতি জাতিগুলোর তালিকায় নাই। তালিকা ও আইন অনুসারেই মিয়ানমার নাগরিকত্ব দেবে।

জান্তা মুখপাত্র এই মন্তব্যের পর রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানানো শুরু করেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা। তারা ব্ল্যাক৪রোহিঙ্গা হ্যাশট্যাগে কালো পোশাক পরে প্রতিরোধের প্রতীক তিন আঙ্গুল দেখিয়ে ছবি প্রকাশ করছেন।

দেশটির প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী থিনজার শুনলেই ইয়ি টুইটারে লিখেছেন, আপনাদের প্রত্যেকের এবং মিয়ানমারে আমাদের সবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতে হবে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে একটি ছোট প্রতিবাদের কথাও জানা গেছে। মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে এই বিক্ষোভ হয়। কালো চাদরে মোড়া বিক্ষোভকারীরা বার্মিজ ভাষায় স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হন। তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করছেন।

রবিবার দুপুরে #Black4Rohingya হ্যাশটাগটি মিয়ানমারে টুইটার ট্রেন্ডিংয়ে চলে আসে। হ্যাশট্যাগটির উল্লেখ ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার বারের বেশি। এই সমর্থন জানানো মানুষের মধ্যে রয়েছে মূলত বৌদ্ধ, বামার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। এক বছর আগে এসব মানুষের অবস্থান ছিল বিপরীত মেরুতে। এমনকি ওই সময় রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করাই ছিল বিতর্ক উসকে দেওয়ার মতো।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে সমর্থন ও পরে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগে সেনাবাহিনীর হয়ে আইনি লড়াই করেন সু চি। মিয়ানমারের বেশিরভাগ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী জনগণ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসাতে কোনও সহমর্মিতা দেখাননি। যদিও যেসব অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক রোহিঙ্গা নিপীড়নের খবর প্রকাশ করছিলেন তাদের অনলাইনে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে।

পাঠকের মতামত