প্রকাশিত: ০৮/০৩/২০১৮ ৮:০৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৪১ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের যেসব শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, সেসব এলাকা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় এসব শিবির এলাকায় ৮৩ শতাংশ পানি দূষিত হয়েছে। ভূগর্ভের পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নেমে যাচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড় কেটে সমান করার ফলে দীর্ঘ মেয়াদে সেখানকার ভূমির প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক গবেষণা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘রোহিঙ্গা ঢলের পরিবেশগত প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে উপস্থাপন করা হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাছ কেটে বসতি স্থাপন ও জ্বালানি সংগ্রহের কারণে ওই এলাকার ২৬ হাজার একর বনভূমি আগামী ১১ মাসের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। সেখানকার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য, বিশেষ করে হাতির চলাচল স্থায়ীভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অন্যান্য প্রাণীও ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে সাতটি সূচকে পরিবেশগত ক্ষতি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাওয়া ও মাটির ধরন বদলে যাওয়াকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, ভূ-উপরিস্থ পানির স্তর, বায়ুদূষণ, পয়োনিষ্কাশন-সংক্রান্ত ক্ষতি চেষ্টা করলে মধ্য ও স্বল্প মেয়াদে পোষানো সম্ভব।
বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মিলে গত ডিসেম্বরে গবেষণা জরিপটি সম্পন্ন করেছেন। সরকারি তথ্য ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা থেকে তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি গবেষক দলটি নিজেরাও সরেজমিনে রোহিঙ্গা শিবির এলাকা পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার ও দলীয় আলোচনার ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী  বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি তারা কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ রক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। গাছ কাটা বন্ধে উন্নত মানের চুলা সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে।
জরিপটিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরের পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনব্যবস্থা খুবই নিম্নমানের। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি তৈরির বেশির ভাগ উপাদান প্লাস্টিক ও পলিথিন। সেগুলোর বর্জ্য পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে জমে আছে। এর ফলে সামনের বর্ষায় পাহাড়ের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমা হতে পারে। ফলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা বাড়বে।
এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের টয়লেটগুলোতে মানববর্জ্য বা মলমূত্র জমা হচ্ছে। সেগুলো যেকোনো সময় সামান্য বৃষ্টিতে পুরো শিবির এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বা রোগবালাই সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন সাড়ে ৭ থেকে ১৫ লিটার পানির প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের জন্য ওই পানি সরবরাহ করতে সেখানে ২৫০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সেখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে নেমে যাচ্ছে। এই তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতে দীর্ঘ মেয়াদে ওই এলাকার ভূ-প্রকৃতি বদলে যাবে। কারণ, কক্সবাজার এলাকা সমুদ্রের পাশে হলেও সেখানে মিষ্টি পানির এমনিতেই সংকট। ভূগর্ভের পানি বেশি উত্তোলন করে ফেললে তা স্থানীয় লোকজনের খাওয়ার পানির সংকট তৈরির পাশাপাশি কৃষি খাতে পানির সরবরাহ কমে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান বনসংরক্ষক ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার জেলা এমনিতেই অতিরিক্ত হোটেল-মোটেলের কারণে পরিবেশগতভাবে নাজুক। সেখানে ভূগর্ভের পানি মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন হয়। এখন এর সঙ্গে টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গাদের কারণে বন ধ্বংস ও পানির উৎস ধ্বংস শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ওই এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে। সুত্র : প্রথম অালো

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...