প্রকাশিত: ২১/০৭/২০২২ ৯:১৯ এএম

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বন্ধু রাষ্ট্রের সাহায্য দরকার উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চাপ ও ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ।’

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে হোটেল রেডিসনে ডিপ্লোমেটস পাবলিকেশন কর্তৃক আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা ও নার্কো টেরোরিজম’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্রয় দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নানা আঙ্গিকে বাড়তি চাপ ও ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাদক চোরাচালান, মানবপাচার, সীমান্ত নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্য। মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের ভার বহন করতে গিয়ে এই চাপ নিতে হচ্ছে। কোনো ধরনের মাদক উৎপাদন না করেও বাংলাদেশই এর ভুক্তভোগী। তাই রোহিঙ্গা সমস্যার সংকট সমাধানে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা চাচ্ছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমারে। কিন্তু এর চোরাচালান হচ্ছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের বাহক ও চোরাচালানকারী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাদকের পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা এলাকাকে।

একই সঙ্গে ২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজার এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পর কীভাবে, কী পরিমাণ মাদকের চোরাচালান বেড়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।

মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একটি ছেলের ফেসবুকের পোস্ট দেখে ইমোশনাল হয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে সব ধর্মের প্রাধান্য রয়েছে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সবাইকে নিয়ে আমাদের দেশ। আমরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত ইমোশনাল। মাঝে মাঝে যেকোনোভাবেই দুই-একটি উক্তি চলে আসে এবং এগুলো পুঁজি করে ইমোশনালভাবে কিছু ঘটনা ঘটে যায়। আর ইমোশন কাজে লাগিয়ে একটি গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।’

‘নড়াইলসহ এর আগেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। সবগুলো ঘটনাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎক্ষণাৎ অ্যাপ্রোচ করেছে। নড়াইলের ঘটনা যখনই ঘটেছে, তখনই ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ছেলেটির বাড়ি প্রোটেকশনে ছিল এবং তাকে খোঁজা হচ্ছিল, কিন্তু ছেলেটির ফেসবুকের পোস্ট দেখে একটি গোষ্ঠী ইমোশনাল হয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।’

আবেগ কাজে লাগিয়ে যারা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা সব জায়গাতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটিয়েছে একটি ছেলে। এতে তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেটির বাড়ি প্রোটেকশন দেয় এবং যারা যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে। তাদের ধরা হয়েছে।’

‘নড়াইলের ঘটনায় সবগুলো বিষয় সামনে রেখে ইনভেস্টিগেশন চলছে। কে কতখানি সম্পৃক্ত ছিল, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, সৌদি রাষ্ট্রদূত, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখওয়াত হোসেন, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদসহ প্রমুখ।

পাঠকের মতামত