প্রকাশিত: ২২/০২/২০২০ ৯:৩৯ এএম

দীর্ঘ সময়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় ক্যাম্পগুলোর আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১৬তম ইউনিটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নবগঠিত এ ইউনিটের জন্য সৃজন করা হয়েছে ৫৮৮টি পদ। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।

কক্সবাজারের উপকূলীয় ৩২টি শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ১২ লাখ রোহিঙ্গার বাস। কর্মহীন এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দিন দিন বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। তারা জড়িয়ে পড়ছে খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালানসহ নানা অনৈতিক কাজে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন।

এ ছাড়া কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরও ৩২ রোহিঙ্গা নিহতের কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১টি। এর মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সংক্রান্ত মামলা ৩১টি। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৮৮ রোহিঙ্গা।

এমন প্রেক্ষাপটে গঠিত ১৬ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠাকালেই দায়িত্ব সামলাবেন এসপি হেমায়েতুল ইসলাম। সেই সঙ্গে দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, চারজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), নয়জন পরিদর্শক, ৩১ উপপরিদর্শক, ৪৫০ কনেস্টবলসহ প্রায় ৫৮৮টি পদ থাকছে নতুন এ ব্যাটালিয়নে।

২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ইউনিটটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের অপরাধ কার্যক্রম ঠেকাতে এবং নিরাপত্তার জন্য মাঠপর্যায় থেকে ক্যাম্প এলাকায় অন্তত তিনটি থানা এবং একাধিক পুলিশ তদন্তকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসনের পক্ষে ও বিপক্ষে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের ‘হিট পয়েন্ট গ্রুপ’ ও ‘আল-ইয়াকিন’সহ কয়েকটি গোষ্ঠী হত্যা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের অর্থনৈতিক সমস্যাসহ অন্যান্য অসহায়ত্বের সুযোগকে পুঁজি করে তাদের মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে একটি চক্র। এটি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে তিনটি দল তৈরি হওয়ায় অস্থিরতা দৃশ্যমান। তাদের একটি দল কোনোভাবেই মিয়ানমার ফিরে যেতে আগ্রহী নয়। দ্বিতীয় দলটি অন্য কোনো দেশে অভিবাসী হতে চায় এবং অপর গোষ্ঠীটি পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা পেলে নিজ দেশে ফিরতে চাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে অবাধে যাতায়াত করছে। তারা ক্যাম্পের বাইরে গিয়েও অপরাধে জড়াচ্ছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে সীমানা প্রাচীর বা কাঁটাতারের বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সিসিটিভির মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মনিটরিংয়ের কথা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মো. সোহেল রানা আমাদের সময়কে বলেন, ‘পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ১৬ এপিবিএন প্রধানত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং রোহিঙ্গাদের চলাচল কেবলমাত্র ক্যাম্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে কাজ করবে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ইউনিটটি গঠিত হওয়ার পরই অর্পিত দায়িত্ব পালনে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করেছে।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...