প্রকাশিত: ২০/০৪/২০২১ ১১:০৩ এএম

দেশের সংক্রামণ আয়ত্তে আনতে চলমান লকডাউনের মেয়াদ একই শর্তে আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। তবে ২৫ এপ্রিল রোববার থেকে ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে’ দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে। একই সঙ্গে ‘জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে’ গণপরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে বিধিনিষেধ শিথিল করা হতে পারে। ঈদের সময় গ্রামে যাতায়াতের জন্যও লকডাউন শিথিল করবে সরকার। সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে গতকাল সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে অনলাইনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা যুক্ত ছিলেন। সভা শেষে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সভায় একাধিক সচিব বলেন লকডাউন থাকবে তবে মানুষের জীবন-জীবিকার সুযোগ রাখতে হবে। ফলে আজ মঙ্গলবার লকডাউনের প্রজ্ঞাপন আগের মতো বিধিনিষেধ উল্লেখ করে জারি হবে, কিন্তু বৃহস্পতিবারের মধ্যে কিছু শর্ত শিথিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এ সময় দোকানপাট-শপিংমল খোলা রাখাসহ বেশকিছু শর্ত শিথিল করবে সরকার।

এর আগে সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করে করোনা মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গত রোববার রাতে কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় এই সুপারিশ করা হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাইকারি, খুচরা মার্কেট ও দোকান খোলা রেখে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগের জন্য গত ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। তারা ২২ এপ্রিল থেকে সকাল ১১টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার প্রস্তাব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোকানপাট ও শপিংমল খোলার বিষয়ে সমিতির নেতাদের আশ্বাস দেন।

এদিকে দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া জানান, আগামী ২৫ এপ্রিল রোববার থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মার্কেট কত সময় খোলা থাকবে সে বিষয়ে কিছুই বলেনি।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। মাঠপর্যায়ে এসব নির্দেশনার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল ও কাজে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। ব্যবসায়ীদের চাপে ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় নিষেধাজ্ঞা ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্তমানে লকডাউনে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পরিবহন ও শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ-সংক্রান্ত অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। প্রথমে ব্যাংক বন্ধের ঘোষণা দিলেও পরে তা আবার খোলার সিদ্ধান্ত হয়। আর শিল্পকারখানাগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু আছে।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, চলমান লকডাউনের মেয়াদ একই শর্তে আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

২৮ এপ্রিলের পরও লকডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, সংক্রমণ ম্যানেজ করাটা আমাদের উদ্দেশ্য, পরিস্থিতি কী হয় সেটা বিবেচনা করেই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা মনে করছি, আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনে সংক্রমণটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তবে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ঈদের আগে লকডাউন শিথিলের ভাবনাও সরকারের রয়েছে।

উল্লেখ্য,দেশের সংক্রামণ ঠেকাতে চলমান লকডাউনের মেয়াদ একই শর্তে আরও এক সপ্তাহ বাড়েছে। এত কিছুর পরেও প্রশ্ন থেকেই যায় কবে বাংলাদেশের মানুষ সক্রিয়ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে আগের মতো?

পাঠকের মতামত

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...

রোহিঙ্গাদের জন্য ইউএনডিপির বড় তহবিল গঠনে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বড় আকারের আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতি আহ্বান ...