প্রকাশিত: ০৯/০৮/২০১৮ ৯:৩১ এএম , আপডেট: ১৬/০৮/২০১৮ ১১:৩৭ পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
রাজধানীর টিকাটুলির ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ব্যক্তি মালিকানাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ওই বাড়ি কিনতে সরকারের ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই বাড়িটি কেনার প্রস্তাব উত্থাপন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভা প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে বলে সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভায় সভাপতিত্ব করেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুসারে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাড়িটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

১৯৩১ সালে ঋষিকেশ দাস নামে এক ব্যবসায়ী পুরান ঢাকার ঋষিকেশ রোডে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর এই বাগানবাড়ি তৈরি করেন। কথিত আছে, ঋষিকেশ দাস তার বাগানবাড়িতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দুর্লভ গোলাপ গাছ এনে রোপণ করেন। সেই থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’। নির্মাণশৈলীর অভিনবত্বে এই ভবনটি অনন্য। এর ভিত্তির ওপর ছয়টি বিভিন্ন উচ্চতার খাঁজকাটা থাম রয়েছে। এগুলোর শীর্ষাংশ লতাপাতার নকশা করা। এ ছয়টি থামকে নিয়ে নির্মিত সম্পূর্ণ অট্টালিকাটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত। ভবনের মধ্যভাগের তিনটি অংশের প্রবেশদ্বারের ওপরের খিলানগুলো ঢালাই করা এবং অর্ধবৃত্তাকারের। ভবনটির সকল প্রবেশদ্বার কাঠ, রঙিন বেলজিয়াম কাচ ও লোহার সমন্বয়ে তৈরি এবং সেগুলো জটিল জ্যামিতিক নকশা, লতাপাতা ও বিভিন্ন প্রাণীর মোটিফে অলঙ্কৃত। প্রায় সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের সুউচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত পশ্চিমমুখী এই অট্টালিকাটি প্রায় পয়তাল্লিশ ফুট উঁচু।

১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) গঠনের প্রাথমিক আলোচনা সভা এ রোজ গার্ডেনে হয়েছিল। নতুন দল গঠনে ওই বছরের ২৩ ও ২৪ জুন ওই বাড়িতে সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এ বাড়িটিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯৩৬ সালে হূষিকেশ দাসের কাছ থেকে বিত্তশালী ব্যবসায়ী খান বাহাদুর কাজী আবদুর রশীদ ক্রয়সূত্রে এই সম্পত্তির অধিকারী হন। ১৯৩৭ সালে তিনি সপরিবারে সেখানে বসবাস শুরু করেন এবং রোজ গার্ডেনের নতুন নাম করেন ‘রশীদ মঞ্জিল’। কিন্তু নতুন নামে বাড়িটির পরিচিতি বিশেষ বাড়েনি।

ভারত ভাগের পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হয় এ রোজ গার্ডেনে। এ ভবনে আতিথ্য গ্রহণ করেন বাংলাদেশ ও ভারতের বিখ্যাত অনেক জননেতা। বিখ্যাত ব্যক্তিদের উজ্জ্বল উপস্থিতি এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল এ রোজ গার্ডেন। ১৯৪৯ সালে এ বাড়িতেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেওয়া এবং এর প্রথম অনানুষ্ঠানিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৬ সালে রশীদের দ্বিতীয় ছেলে কাজী আব্দুর রকিব বেঙ্গল স্টুডিও অ্যান্ড মোশন পিকচার্সের কাছে এই সম্পত্তি ভাড়া দেন। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে রোজ গার্ডেন রাজ-রাজত্ব ও জমিদারদের কাহিনী সংশ্নিষ্ট বহু চলচ্চিত্র নির্মাণের জনপ্রিয় স্পটে পরিণত হয়।

কাজী আব্দুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর। এ কারণে সে সময় ভবনটি ‘হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে। পরে ১৯৯৩ সালে রোজ গার্ডেনের অধিকার ফিরে পান কাজী আব্দুর রশীদের মেজো ছেলে কাজী আব্দুর রকীব। ১৯৯৫ সালে তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী লায়লা রকীব ওই সম্পত্তির মালিক হন। সরকার এখন লায়লা রকীব ও তার সন্তানদের কাছ থেকে এই বাড়ি কিনে নিচ্ছে।

পাঠকের মতামত

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...