প্রকাশিত: ২৪/০৪/২০১৯ ৭:৩৯ এএম

এম. বেদারুল আলম :
রেলের রাস্তা নির্মানের নাম ব্যবহার করে ১৮/২০টি ডাম্পার দিয়ে রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে হরদম মাটি বিক্রি করছে বিশাল সিন্ডিকেট। মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার মাটি বিক্রি করেছে তারা। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা পরির্দশনে গিয়ে দেখা গেছে, মাটি কাটার ফলে বিরানভূমি হওয়ার মত অবস্থা তৈরী হয়েছে রামুর ৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায়। চাকমারকুলের বাঁকখালী নদীর পাড় কেটে কোটি টাকার মাটি বিক্রি করেছে সিন্ডিকেটটি। প্রতিদিন ২০টির মত ডাম্পার ১৩টি স্পট থেকে মাটি কেটে পরিবেশ ধংস করছে। যার নেতৃত্বে রয়েছে ১৮ জনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ডাম্পার দিয়ে নির্বিচারে মাটি কাটার খবর পেয়ে গতকাল কয়েকটি স্পট পরিদর্শন করেছেন রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার ( ভুমি ) চাই চোয়াইহ্লা চৌধুরী। তিনি মাটি কাটার সত্যতা পেলেও স্পটে কোন ডাম্পার পাননি। রাজারকুল সিকদারপাড়া অংশে বাঁকখালী নদীর পাড় থেকে মাটি উত্তোলনের সময় ম্যাক্স নামের একটি সংস্থাকে কাগজপত্র না থাকায় মাটি উত্তোলন বন্ধ করে দেন। রেলের সড়ক নির্মান প্রকল্পের জন্য স্কেভেটর দিয়ে বাঁকখালী নদী থেকে বেশ কয়েকদিন যাবৎ মাটি উত্তোলন করে আসছিল ম্যাক্স নামের সংস্থাটি।
সরেজমিনে দেখা যায়- চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এন আলম ফিলিং ষ্টেশনের উত্তরে বাঁকখালীর ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১২/১৫টি ডাম্পার মাটি কেটে ইট ভাড়ার জন্য মাটি টানছে। মাটি কাটার কারনে বিশাল গর্তের সৃষ্টির পাশাপাশি নদীর পাড় ক্ষয়ে যাওয়ার কারনে আগামী বর্ষায় রক্ষা বাঁধ তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। কলঘর বাজারের উত্তরে রাজারকুল চাকমারকুল নতুন ব্রীজের পশ্চিমে ১৫/২০টি ডাম্পার লাগিয়ে হরদম মাটি বিক্রির কারনে বাঁকখালী নদীর পানির লেভেল থেকে নিচে নেমে গেছে মাটির স্তর। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি কাটছে বলে দাবি করলেও একটি সিন্ডিকেট মূলত সাধারণ মানুষকে মিথ্যা বোকা বানিয়ে কয়েক বছর যাবৎ এ কাজ করে যাচ্ছে। ডাম্পারের সাহায্যে মাটি বিক্রি করে অনেকে ২/৩টি নতুন ডাম্পার ক্রয় করেছে বলে ও জানা গেছে। ইট ভাটার মওসুমে ভাটার জন্য বর্তমানে রেল নির্মান প্রকল্পের জন্য প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া প্রতিদিন হাজার ট্রাক মাটি বিক্রি করছে সিন্ডিকেটটি। প্রশাসন , সাংবাদিক, পরিবেশ অধিদপ্তর সকলকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন হরদম মাটি কেটে নদীর তীর ধংস করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা কোন দপ্তর।
শুধুমাত্র মাটি কেটে তা বিভিন্ন ইট ভাটায় এবং সম্প্রতি চলমান রেলের প্রকল্পে বিক্রি করে ডাম্পারের মালিক হয়েছে সিন্ডিকেটের অনেকে। রাতের আঁধারে চাকমারকুল, রাজারকুল এবং ফতেখারকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর পাড় এবং ১৫টি স্পট থেকে নির্বিচারে মাটি কেটে উক্ত মাটি বিক্রি করা সিন্ডিকেটের অন্যতম হলো পশ্চিম চাকমারকুলের আলমগীর, আলী হোসেন সিকদারপাড়ার ফরিদুল আলম, মিয়াজিপাড়ার সালেক, নতুন চরপাড়ার ফয়েজ, ওমখালীর আবদুর রহিম, পশ্চিম চাকমারকুলের আবু তাহের, ফয়েজুল্লাহ, সালেহ আহমেদ পাড়ার কামাল উদ্দিন, আলী হোসেন সিকদারপাড়ার নুরুল আজিম, আনুমিয়াসহ অনেকেই। মাটি উত্তোলনে অনেকে চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদারের সম্পৃক্তার অভিযোগ তুলেছেন। তবে এ বিষয়ে জানার জন্য চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
রামুর যেসব স্থান থেকে রেল নির্মান প্রকল্প ও ইটভাটার জন্য মাটি বিক্রি করছে এর মধ্যে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা হলো-দক্ষিন চাকমারকুল কলঘর বাজারের উত্তরে নতুন ব্রীজের পশ্চিমে বাঁকখালীর প্রায় ১ কিলোমিটার নদীর পাড়, নতুন চরপাড়া, শ্রীমুরা, শাহমদের পাড়া, মোহাম্মদপুরা, রউর ঘোনা, রাজারকুল সিকদারপাড়া, পশ্চিম মেরংলোয়া।
নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রি ও বিভিন্ন স্পট থেকে ডাম্পারের সাহায্যে হরদম মাটি উত্তোলন পূর্বক রেল প্রকল্পের জন্য ও ইট ভাটায় ব্যবহারের জন্য মাটি বিক্রির বিষয়ে রামু উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে আজকেও কিছু লোক লম্বরীপাড়া থেকে আমার কাছে এসেছিলেন। মাটি কাটার বিষয়ে আগেও কিছু অভিযোগ পেয়েছিলাম। আমি সেই স্পটগুলো পরির্দশনের জন্য এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দিয়েছি। পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ করে বাঁকখালীর রক্ষাবাধ থেকে মাটি কাটায় যারা জড়িত তাদের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাটি উত্তোলনের অনুমতি বিষয়ে বলেন-আমার অফিস থেকে তো কাউকে মাটি কেটে পরিবেশ নষ্টের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিছু ব্রোকার আছে তারা অনুমতি দিয়েছি বলে এগুলো করে। তিনি শীগ্রই পরিবেশ ধংসকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এছাড়া রেল নির্মান প্রকল্পের জন্য মাটি কাটতে আমি কাউকে অনুমতি প্রদান করিনি। আমার অজান্তে যারা রেল প্রকল্পের জন্য মাটি বিক্রি করছে তাদের বিষয়ে এসিল্যান্ডকে খবরাখবর নেওয়ার জন্য বলেছি। অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ৩ বছর আগে একটি সফল অভিযানের পর কয়েক বছর মাটি কাটা বন্ধ হয়ে যায় । তবে প্রশাসনের অগোচরে উক্ত শক্তিশালী সিন্ডিকেট পুনরায় মাটি উত্তোলন আরম্ভ করে। রামুর পরিবেশ ও কৃষি জমি বাঁচাতে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান জরুরি। পাশাপাশি দৈনিক কোটি টাকার অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনকারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি ভুক্তভোগিদের। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত