প্রকাশিত: ২২/০৮/২০১৭ ১:৩২ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৪৫ পিএম

এস এম গল্প ইকবাল : অনেকে নিজেদের রক্তের ধরন বা গ্রুপ সম্পর্কে জানেন না। কিন্তু এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা উচিত। রক্তের ধরন বা গ্রুপকে ‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’ এবং ‘ও’ ভাগে শণাক্ত করা হয়।

রক্তের এসব ধরন শরীরে বিভিন্ন রোগ বা সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী থাকে। চলুন সেসব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

‘এবি’, ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রুপের রক্ত রক্তজমাটের ঝুঁকি বাড়ায়

 

ডেনিশ গবেষকরা ডিপ ভেইন থ্রম্বসিস (ডিভিটি) বা গভীর শিরায় রক্তজমাট বা নিম্নতর পায়ে রক্তের ঘনীভবন (যা ফুসফুসের দিকে যেতে পারে এবং জীবনহুমকির কারণ হতে পারে) এর ক্ষেত্রে রক্তের ধরনের সঙ্গে জেনেটিক প্রবণতা কিভাবে পরস্পরের ওপর ক্রিয়া করে তা নিয়ে গবেষণা করেন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ৬৬,০০০ লোকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এবি’, ‘এ’ বা ‘বি’ তাদের সবচেয়ে কমন গ্রুপ ‘ও’ এর তুলনায় ডিভিটি হওয়ার ৪০% বেশি ঝুঁকি রয়েছে। টাইমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিজ্ঞানীরা ডিভিটি ঝুঁকির জন্য কোন উপকরণটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে তা জানার জন্য আরো বেশি করে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে, ডিভিটি হওয়ার জন্য রক্তের ‘এবি’ গ্রুপ ২০ শতাংশ, জেনেটিক মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তন ১১ শতাংশ, অতিরিক্ত ওজন ১৬ শতাংশ এবং ধূমপান ৬ শতাংশ দায়ী।

গ্রুপ ‘এবি’, ‘বি’ এবং ‘এ’ হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে

হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ৭৭,০০০ এর বেশি মানুষের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানতে পারেন যে, ‘এবি’ গ্রুপের রক্তের লোকদের ‘ও’ গ্রুপের রক্তের লোকদের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়েছে। ‘বি’ এবং ‘এ’ গ্রুপের রক্তের মানুষদের যথাক্রমে ১১ শতাংশ ও ৫ শতাংশ উচ্চমাত্রার হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয়, কিন্তু মেনে নিচ্ছেন যে ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রুপের রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলে এমন একটি রাসায়নিক উপাদান আছে যা রক্তপ্রবাহে সাহায্য করে এবং রক্তজমাট প্রতিরোধ করে। বিজ্ঞানীরা দেখিয়ে দিচ্ছেন যে জীনধারার কিছু বিষয় যেমন ওজন, ধূমপান এবং খাদ্য যা রক্তের গ্রুপের মতো অপরিবর্তনযোগ্য নয় তা হৃদরোগে বড় প্রভাব বিস্তার করে।

‘এ’ গ্রুপের রক্ত পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে

ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের সুইডিশ গবেষণা মতে, ‘ও’ এর তুলনায় ‘এ’ গ্রুপের রক্তের মানুষদের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের অগ্রগতির সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বেশি। ডেইলি মেইল থেকে জানা যায়, এসব লোকেরা (যাদের ‘এ’ গ্রুপের রক্তজনিত কারণে পাকস্থলী ক্যানসারে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে) পাকস্থলী ক্যানসার সৃষ্টিকারী অন্যান্য বিষয়ের (যেমন- সিগারেট ও অ্যালকোহল) তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকে। সুইডিশ গবেষণাটিতে আরো পাওয়া যায়, ‘ও’ গ্রুপের রক্তের মানুষদের পেটে আলসারের ঝুঁকি বেড়েছে এবং তারা হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ায় আরো বেশি সংক্রামিত হতে পারে যা পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করে।

ফার্টিলিটি বা সন্তান ধারণ ক্ষমতা কমায় গ্রুপ ‘ও’

আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের সন্তান ধারণ ক্ষমতা পরিমাপ গবেষণায় দেখা যায় যে, ‘ও’ গ্রুপের রক্তের মহিলাদের ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু সংরক্ষণের ক্ষমতা কম বা সন্তান ধারণ ক্ষমতা কম। যদিও গবেষকরা এমনটা হওয়ার কারণ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। ‘ও’ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সকল জাতির বেশিরভাগ মানুষের সবচেয়ে কমন রক্তের গ্রুপ। তবে ‘ও’ গ্রুপের রক্তজনিত কারণে সন্তান ধারণ ক্ষমতা কম বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। ফার্টিলিটি বা সন্তান ধারণ সমস্যার জন্য বয়সটাই আরো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।

প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণ ঝুঁকি

গর্ভবতী মহিলাদের রক্তের ধরনের অক্ষর বা ‘এবিও’ গ্রুপিং সিস্টেম দ্বারা নির্ধারিত রক্তের ধরনের সঙ্গে প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণ ঝুঁকির কোনো সম্পর্ক নেই, আরএইচ ফ্যাক্টরের সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে যা রক্তের ধরন ধনাত্মক নাকি ঋণাত্মক তা নির্ধারণ করে। এই বিষয়টা গর্ভবতী মহিলাদের সমস্যায় ফেলতে পারে যদি শিশুর আরএইচ ফ্যাক্টর মায়ের আরএইচ ফ্যাক্টরের তুলনায় ভিন্ন হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি মায়ের রক্তের ধরন ঋণাত্মক এবং শিশুর ধনাত্মক হয় তাহলে মায়ের শরীর শিশুর রক্তের ধরনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সৌভাগ্যক্রমে এতে শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না, কিন্তু ভবিষ্যতে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সংকটপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। সৌভাগ্যবশত, গর্ভাবস্থার শুরুতেই গর্ভবতী মহিলাদের শট প্রদানের মাধ্যমে আরএইচ অসামঞ্জস্য সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।

গ্রুপ ‘এবি’ স্মৃতিভ্রংশ বাড়ায়

একটি নিউরোলজি গবেষণায় প্রকাশ পায় যে, ‘এবি’ গ্রুপের রক্তের লোকদের স্মৃতিভ্রংশে ভোগার সম্ভাবনা খুব বেশি। ‘এবি’ গ্রুপের ব্যক্তির ৮২% উচ্চমাত্রার স্মৃতিভ্রংশে ভোগার সম্ভাবনা থাকে, এর জন্য খুব সম্ভবত  তাদের মধ্যে অধিক পরিমাণে থাকা ভি৮ প্রোটিন দায়ী যা রক্তজমাটে সাহায্য করে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের এই প্রোটিন ছিল তাদের ২৪ শতাংশ বেশি স্মৃতিভ্রংশ হয়। রক্তের ধরন বা উপাদান ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান এবং অন্যান্য অভ্যাসের কারণে স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে।

‘ও’ গ্রুপের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম

সায়েন্স অ্যালার্টের মতে, সবচেয়ে কমন রক্তের গ্রুপ ‘ও’ এর তুলনায় অন্যান্য গ্রুপের রক্তের লোকদের স্ট্রোকসহ অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি ৯% বেশি। জীববিজ্ঞানীরা এখনো এ ব্যাপারে তদন্ত করছেন। ‘ও’ ব্যতীত অন্যান্য গ্রুপের রক্তের লোকদের স্ট্রোক বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ বেশি হওয়ার একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল, তাদের রক্তে ভন ওয়াইলব্র্যান্ড নামক প্রোটিনের উপস্থিতি বেশি যা পূর্বে রক্তজমাটবদ্ধতা এবং স্ট্রোকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল।

মশা ‘ও’ গ্রুপের রক্ত পছন্দ করে

আপনাকে মশা যদি খুব কামড়ায় তাহলে বুঝবেন এর জন্য আপনার রক্তের গ্রুপই বেশি দায়ী হতে পারে! ‘এ’ এর তুলনায় ‘ও’ গ্রুপের রক্ত মশাদের দ্বিগুণ বেশি আকর্ষণ করে এবং ‘বি’ গ্রুপের রক্তের আকর্ষণ ক্ষমতা এ দুইয়ের মাঝামাঝি। ৮৫% লোকের শরীর থেকে একটি পদার্থ নিঃসৃত হয় যা মশাদের জানিয়ে দেয় যে তাদের রক্তের ধরন কি। এসব লোকের প্রতি এই ক্ষুদ্র রক্তচোষারা বেশি আকর্ষিত হয়, তাদের রক্তের গ্রুপ যাই হোক না কেন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পাঠকের মতামত