প্রকাশিত: ০৩/০৭/২০২০ ৬:১২ পিএম

চিকিৎসা, ব্যবসা কিংবা ভ্রমণ, যে কারণেই হোক না কেন প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের নানা দেশে যান অংসখ্য মানুষ। কিন্তু করোনার কারণে বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত কয়েকদিন আগে বিশেষ ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশ পুনরায় আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালু করেছে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকেও চালু হয়েছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট। বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ যান, সেসব দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তাহলে এখনই কি বাংলাদেশ থেকে এসব দেশে ভ্রমণ করা যাবে? নাকি কিছু দেশ ভ্রমণে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।

ভারত

বাংলাদেশিরাই প্রতিবেশী দেশ ভারতে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেন। করোনার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাতায়াত বন্ধ। এছাড়া বন্ধ রয়েছে ভারতের সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও। তবে চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে কিছু দেশের সঙ্গে ভারতের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যোগাযোগ শুরু হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। ধারণা করা হচ্ছে, যাতায়াত একেবারে উন্মুক্ত করা না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্রমণের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে পারে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি সরকার।

সিঙ্গাপুর

দেশের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করেছে সিঙ্গাপুর সরকার। তবে যারা স্বল্প সময়ের জন্য সিঙ্গাপুর ভ্রমণে যেতে চান, তাদের ক্ষেত্রে এখনও বাধা রয়েছে। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বল্প সময়ের জন্য যারা সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করতে চান এবং যারা জরুরি ব্যবসা কিংবা দাপ্তরিক কাজে সিঙ্গাপুর যেতে চান, তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। গ্রিন/ফাস্ট লেন অ্যারেঞ্জমেন্ট নামের এ ব্যবস্থায় একটি নিরাপদ ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করতে হলে যা অবশ্যই লাগবে।

সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদন নিয়েও স্বল্প সময়ের জন্য সেখানে যাওয়া যাবে। যেসব বিদেশি নাগরিক স্বল্প সময়ের জন্য সিঙ্গাপুর সফর করবেন, তাদের জন্য নিজ খরচে সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯ টেস্ট বাধ্যতামূলক। এছাড়া তাদের জন্য আরো কিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।

থাইল্যান্ড
ব্যবসায়ীক কাজে থাইল্যান্ড সফরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা চিকিৎসার জন্য যাবেন, তাদের ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে থাইল্যান্ড। পাশাপাশি দক্ষ কর্মী, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভ্রমণের ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে দেশটি। তবে থাইল্যান্ডে যেতে হলে ‘কোভিড-১৯ মুক্ত’ সনদ থাকতে হবে এবং তাদের থাইল্যান্ডে গিয়ে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

এ শর্ত মেনে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এরই মধ্যে ৫০ হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ প্রতিবছর পর্যটনের জন্য থাইল্যান্ড যান। কিন্তু আপাতত পর্যটন ভিসা দিচ্ছে না থাইল্যান্ড।

ইউরোপ
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আগমনের জন্য ফ্লাইট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও রাশিয়া নেই।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে সফরের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- যেসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কম, অর্থাৎ যেসব দেশে এক লাখ মানুষের মধ্যে ১৬ জনের কম সংক্রমিত হয়েছে, যেসব দেশে সংক্রমণের হার নিচের দিকে এবং যেসব দেশে সামাজিক দূরত্বের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেসব দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

মালয়েশিয়া
শুধু পর্যটনের জন্য আপাতত বিদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় সফর বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে স্পাউজ, বিজনেস ও প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া যাবে। তবে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশে মালয়েশিয়ার দূতাবাসের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

মালয়েশিয়া ঢোকার আগে বিমানবন্দরে যাত্রীদের অবশ্যই ‘কোভিড-১৯ মুক্ত’ সনদ দেখাতে হবে। যদি সেটি না থাকে, তাহলে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে হবে। সে জন্য গুণতে হবে বাংলাদেশি প্রায় পাঁচ হাজার টাকা।

যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ফ্লাইট চালু হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা থেকে লন্ডন যাতায়াতের ক্ষেত্রে ‘কোভিড-১৯ মুক্ত’ সনদের প্রয়োজন নেই। তবে একটি হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হবে। এছাড়া লন্ডনে গিয়ে থাকতে হবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে। তবে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারাই এখন যেতে পারছেন। অতি প্রয়োজনীয় না হলে মহামারির এ সময়ে নতুন করে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে যেতে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এখনও কোনো বিধিনিষেধ নেই। ঢাকা থেকে যেসব এয়ারলাইন্স ফ্লাইট চালু করেছে, তাদের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যাবে।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের এ সময়ে নতুন কোনো ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। পুরনো ভিসাধারীরাই শুধু এখন ভ্রমণ করতে পারবেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

পাঠকের মতামত