প্রকাশিত: ২০/০৭/২০২১ ১০:১২ এএম

মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে আজ মিনায় ফিরবেন হজ করতে যাওয়া মুসল্লিরা। সেখানে তারা পাথর ছুঁড়বেন শয়তানের প্রতীকে। এরপর দেবেন পশু কোরবানি।

এর আগে আরাফাত পর্বতে পবিত্র হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা সোমবার শেষ করেন ৬০ হাজার মুসল্লি। দিনের ১২ ঘণ্টা সেখানে কাটিয়ে চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তুতি নিতে সন্ধ্যার পর থেকে মুজদালিফায় পৌঁছাতে শুরু করেন তারা।

আরবি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী শেষ মাস জিলহজের নবম দিন ছিল সোমবার। এ দিন ভোরে মিনা থেকে আরাফাতে পৌঁছাতে শুরু করেন মুসল্লিরা। সেখানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষে সূর্যাস্তের পর থেকে অবস্থান নেন মুজদালিফার পাথুরে এলাকায়। সেখানে মাগরিব ও ইশার নামাজ পড়ে রাত কাটান খোলা আকাশের নিচেই।

মিনার জামারাত এলাকায় প্রতীকী অর্থে শয়তানের দিকে পাথর নিক্ষেপের জন্য মুজদালিফা থেকে মুসল্লিরা পাথর সংগ্রহ করেছেন। জিলহজ মাসের দশম ও পবিত্র ঈদুল আজহার প্রথম দিনে এ আনুষ্ঠানিকতা পালন করবেন তারা।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রতি বাসে ২০ জন করে হাজীকে নিয়ে বিশাল গাড়িবহর মুজদালিফায় পৌঁছায়। হাজীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে প্রতিটি দলের সঙ্গে আছেন একজন করে গাইড। মূলত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনে মুসল্লিদের এবার ২০ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ করে দেয়া হয়।

করোনায় কেউ আক্রান্ত হলে তার সংস্পর্শ আসা ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নেয়া হয় এ ব্যবস্থা।

20210128054620.gif
হাজিদের বহনকারী বাসের সঙ্গে মোতায়েন ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দল। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত বিরতিতে ছাড়া হয় প্রতিটি বাস।

সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. তৌফিক আল-রাবিয়াহ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো হাজীর দেহে করোনা শনাক্ত হয়নি।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময়ের শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হাজীদের অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে কয়েকজন সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে অল্প সময়েই হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। কিন্তু কোনো জটিল বা প্রাণঘাতী কোনো উপসর্গ কারো মধ্যে দেখা যায়নি।’

হজ ও উমরাহবিষয়ক উপমন্ত্রী ড. আব্দুল-ফাত্তাহ মাশাত জানান, তিন ঘণ্টার মধ্যে হাজীদের মিনা থেকে আরাফাতে নেয়া হয়েছিল। সূর্যাস্তের পরপরই এক হাজার ৭৭০টি বাসে করে তাদের আরাফাত থেকে মুজদালিফায় নেয়া শুরু হয়।

মুজদালিফা থেকে মঙ্গলবার ভোরে মিনায় ফিরতে শুরু করেছেন হাজিরা।

ড. আব্দুল-ফাত্তাহ মাশাত বলেন, ‘প্রথমে মিনায় হাজীদের নিজ নিজ তাঁবুতে পৌঁছে দেয়া হবে। সেখান থেকে জামারাতে যাবেন তারা। জামারাতের তিনটি তলা থেকে শয়তানের প্রতীকে তারা পাথর ছুঁড়বেন।

‘করোনার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এ আনুষ্ঠানিকতা পালনেও হাজিদের আলাদা আলাদা দলে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন রঙ দিয়ে দলগুলো চিহ্নিত করা হবে। ভিড় এড়াতে একেকটি দল জামারাতের একেকটি তলা থেকে শয়তানকে পাথর ছোঁড়ার আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন।’

মাশাত জানান, হাজীরা মাস্ক পরা থেকে শুরু করে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি স্বেচ্ছায় মেনে চলছেন এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন।

এ বছর হজে মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজ শেষে আরাফাতের খুতবা দিয়েছেন ইমাম শেখ বান্দার বালিলা। সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি সমগ্র প্রাণীকূল ও জীবের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের ২০ লাখের বেশি মানুষ পবিত্র হজে অংশ নেন। ২০১৯ সালে রেকর্ড ২৫ লাখ মুসল্লি হজে অংশ নেন।

তবে মহামারি করোনার কারণে গত বছর এবং এবার সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নাগরিক, অভিবাসীসহ শুধু সৌদি আরবে বসবাসরত ৬০ হাজার মানুষ এ বছর হজ পালন করছেন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার।

এ বছর দুই ডোজ টিকা গ্রহণের শর্তে হজের অনুমতি পেয়েছেন হজযাত্রীরা। বয়স সীমিত করে দেয়া হয়েছে ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।

পাঠকের মতামত