প্রকাশিত: ১২/১১/২০১৯ ১০:১১ এএম

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই আদালতের রায়ে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা প্রতিফলিত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ ও জাতিগত নিধন অভিযানের দায়ে এবার আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হবে মিয়ানমার। গণহত্যার অভিযোগ এনে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসির) সদস্য গাম্বিয়া সোমবার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, সোমবার আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ৪৬ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র দাখিল করে।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশাকরি, আইসিজে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আবেদনের বিষয়টি শুনবেন। আমরা চাই সকল প্রক্রিয়া শেষে একটি রায় আসুক, যাতে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা প্রতিফলিত হবে।’

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই এই মামলা করা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওআইসির এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা সুখবর যে ওআইসি অন্তত কিছু দায়িত্ব নিচ্ছে।’

এই মামলায় গাম্বিয়াকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফোলে হোয়াগ। প্রতিষ্ঠানটির আশা, আগামী মাসেই এই মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে মিয়ানমার।

নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজের সদরদফতরে মামলা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার যে আচরণ করেছে তার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর এমন নিপীড়নের বিচার চেয়ে আসা দেশটির আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে গণহত্যা ঘটবে আর আমরা তা দেখেও কিছু না করলে আমাদের প্রজন্মের জন্য তা খুবই লজ্জার ব্যাপার হবে।’ গাম্বিয়ার এই পদক্ষেপে সমর্থন দিচ্ছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আইসিজে মামলাটি গ্রহণ করে তাহলে তা হবে একটি মাইলফলক। কেননা এর আগে গণহত্যা সংক্রান্ত কোনো মামলার তদন্ত আইসিজে একা করেনি। প্রতিবার তদন্তকাজে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সহায়তা নিয়েছিল ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের প্রধান এই বিচারিক প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে, ধর্ষণ ও হত্যা করে জাতিগত নিধন অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। তারা এখনও তাদের জন্মভূমিতে ফিরতে পারেনি। বর্তমানে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

পাঠকের মতামত