প্রকাশিত: ১২/০১/২০১৭ ৮:৫৩ এএম

ফটিকছড়ির ভুজপুরে ১২ বছরের কিশোরী অবৈধ নব জাতকের মা হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিশোরীর নাম সায়মা আকতার। তিনি ভুজপর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড়ের সন্দ্বিপ পাড়ার আবুল বশরের মেয়ে, এবং ভুজপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বলে জানা যায়। গত ৬ জানুয়ারি রাতে ওই কিশোরী এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়।

ভুজপুরের কালী মন্দিরের সামনে দি হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডা. তাসলিমা আক্তার গত ২৫ নভেম্বর ওই রোগীর প্রেশক্রিপশনে কিশোরী ৮মাসের গর্ভবতী এবং অবিবাহীতা বলে উল্লেখ করেন। ডা. তাসলিমা আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করেন।
কিশোরীর পিতা জানান, ভুজপুর থানায় মামলা করলে সুবিচার পাবেনা এমন ধারণাতে তিনি চট্টগ্রাম চিফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এডভোকেট হেলাল উদ্দিনের মাধ্যমে মামলার ব্যবস্থা করেন। মামলা চলমান প্রক্রিয়াই রয়েছে। নারী ও শিশু আদালতে ধর্মঘট চলাতে আপাতত ওই আদালতের কার্যক্রম স্থগিত হওয়াতে এখনো পূর্ণাঙ্গ মামলা হয়নি। এডভোকেট মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
লিখিত ওই মামলার আর্জি এবং কিশোরী সায়মা আক্তার এ ঘটনায় জন্য একই এলাকার মুহাম্মদ নাছিরের ছেলে স্থানীয় চা ও মুদির দোকানদার দুই সন্তানের জনক আক্তার হোসেন (৩৫) কে দায়ী করেন। এই প্রতিবেদক কে সায়মা আকতার নিজেই তার নবজাতকের পিতা আক্তার হোসেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ওই এলাকার বর্গা চাষা আবুল বশরের প্রথম স্ত্রীর বড় কন্যা সায়মা আকতার। সায়মা সন্দ্বিপ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে গত ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পি.এস.সি পরীক্ষায় ২.১০ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে ভুজপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ঘরের প্রয়োজনীয় নিত্য সামগ্রির জন্য সায়মা এলাকার আক্তার হোসেনের দোকানে যাতায়াত। বিশেষ করে মোবাইল কার্ড উল্লেখযোগ্য। সায়মা জানিয়েছেন, ২০১৬ এর মার্চের প্রথম দিকে দুপুরে মোবাইল কার্ডের জন্য আক্তার হোসেনের দোকানে গেলে আক্তার হোসেন সায়মাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং এসব কথা কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। সায়মা তাই ভয়ে কারো কাছে এ বিষয়ে কথা বলেনি। গর্ভে বাচ্চা আসলে প্রাথমিক যে সব ক্রিয়া দেখা দেয় তা তার জানা ছিলনা। সে জানতনা গর্ভে বাচ্চা আসার পূর্ব আলামত গুলি কি। ধীরে ধীরে তার পেটে বাচ্চা বড় হতে লাগল। দীর্ঘ ৭/৮ মাস পর সায়মার পরিবার তার দেহ দেখে অনুমান করল সায়মার পেটে টিউমার হয়েছে। এমন ধারণাতে সায়মার পরিবার সায়মাকে নিয়ে ভুজপুরের দি হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাসলিমা আক্তারের স্মরণাপন্ন হন। যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে সায়মাকে নিয়ে তার পরিবার গত ২৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় ওই ডাক্তারের কাছে স্মরণাপন্ন হলে ডাক্তার রিপোর্ট দেখে সায়মা ৮ মাসের অন্ত:সত্ত্বা বলে জানান। সেই সাথে চিকিৎসা পত্রে সায়মা অবিবাহীতা উল্লেখ করে বিভিন্ন ওষুধ ও করণীয় লিখে দেন।
ঘটনাটি কিছুটা হলেও এলাকায় জানাজানি হয়। সায়মার পিতা ব্যাপারটি এলাকার সর্দার হানিফকে জানালেন। হানিফ গত ডিসেম্বরের ২ তারিখে সালিশি বৈঠকের আহবান করেন। বৈঠকে সঠিক বিচার পেলেন না আবুল বশর।
সায়মার পিতা আবুল বশর জানান, সর্দারের কূটবুদ্ধি আমি বুঝতে পেরেছি। আদালতের মাধ্যমে আইনী লড়াই করব। আমি গরিব, আমাকে সহযোগীতা করুন। তিনি এমনি আকুতি জানিয়েছেন।
এদিকে, অভিযুক্ত আক্তার হোসেন বলেন সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ডাক্তারী পরীক্ষা করা হোক। পরীক্ষায় যদি আমার কোন প্রকারের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে যে কোন শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব।
পাড়ার সর্দার হানিফ জানান, ঘটনার জন্য আকতার হোসেনকে দায়ী করা হয়। ডিসেম্বরের বৈঠকে কথাবার্তায় গড়মিল পাওয়াতে সামাজিকভাবে নয় তিনি উভয়কে আইনীভাবে এগুতে পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে ভুজপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ জানান, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। কেউ থাকে জানায়নি।

পাঠকের মতামত