প্রকাশিত: ১১/০৬/২০১৮ ৯:৫৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৫৯ এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক::
কক্সবাজারের বিভিন্ন রুট দিয়ে প্রতিদিনই দেশে আসছে অবৈধ ইয়াবার চালান। এসব রুটে মাদক পাচার ঠেকাতে প্রায়ই অভিযান চালাতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

তাই মাদক সরবরাহ ঠেকাতে কক্সবাজারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের আলাদা জোন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, এসব ইয়াবার চালান আসছে মূলত মিয়ানমার থেকে। ভারত থেকে ফেনসিডিল সরবরাহ ঠেকাতে যেভাবে আমরা তাদের সহযোগিতা পেয়েছিলাম মিয়ানমারের ক্ষেত্রে তা পাচ্ছি না। এ জন্য নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে কক্সবাজারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের আলাদা জোন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। খুব শিগগিরই জনবল নিয়োগ দিয়ে এই জোনের কর্মক্ষমতা বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর দ্বিপক্ষীয় মিটিং হবে। চুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র তিনবার মিটিং হয়েছে। অনেক লেখালেখির পর ২০১৭ সালে সর্বশেষ মিটিং হয়েছে।

প্রথমে তো তারা মিটিংয়ে আসতে চায় না, এলে সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করতে চায় না আর স্বাক্ষর করলে বাস্তবায়ন করে না। সফরকারী আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি একটি বিষয়ে স্বাক্ষর করে গেলে পরের বার সফরে আসা কর্মকর্তা তা মানতে চান না। মিয়ানমারের ভিতরে যে বড় ফ্যাক্টরি ছিল এবং সেখানে বড় বড় যেসব মাদক ব্যবসায়ী ছিল আমরা তাদের তালিকা দিয়েছি। মিয়ানমার সরকার আশ্বাস দিয়েছিল এসব ফ্যাক্টরি বন্ধে সহায়তা করবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। সর্বশেষ মিয়ানমারের মন্ত্রীকে এসব বিষয় বলার পর তিনিও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর কোনো সাড়াই দেন না। তার মানে এক্ষেত্রে তাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা আছে। বলা হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী এই ইয়াবা পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এটা সম্ভব হচ্ছে না। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনায়ও এ বিষয়ে তাকে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার জলপথ। নাইক্ষংছড়ি বান্দরবান এলাকার পথটুকু খুবই দুর্গম। এসব পাহাড়ি এলাকার এক বিজিবি ক্যাম্প থেকে আরেক বিজিবি ক্যাম্পের দূরত্ব অনেক। ফলে এসব এলাকায় অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে।

সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সাপ্লাইয়ের চেইন বন্ধ করা খুব জটিল। এক রুটে অভিযান চালালে পাচারকারীরা রুট পাল্টে অন্য রুটে নিয়ে আসে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তাদের কোনো অস্ত্র নাই, সৈন্য নাই, পর্যাপ্ত জনবল নাই। সারা দেশে জনবল প্রায় ১ হাজার ১৯৬ জন। কক্সবাজার জেলাতে মাত্র ছয়জন কাজ করছে। এর মধ্যে অফিসার মাত্র একজন। এই বাস্তবতায় এত অল্প জনবল দিয়ে সম্ভব না। এ জন্য কক্সবাজারে আলাদা জোন করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আর জনবল বাড়াতে ৮ হাজার ৫০০ জনের একটা প্রস্তাবনা সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে মাদক শনাক্ত করতে টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরির পরিকল্পনা চলছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকাতে এই অধিদফতরের ৭০-৮০টি ইউনিট কাজ করে। অথচ পুরো দেশ মিলিয়ে তাদের মোটরসাইকেলসহ গাড়ি রয়েছে মাত্র ৫১টি। এটা দিয়ে কীভাবে পুরো দেশের মাদক সরবরাহকারীদের পেছনে দৌড়ানো সম্ভব। মাদক নিরাময় কেন্দ্র মাত্র চারটি। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৫০ শয্যার একটি। এটাকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। বাকি তিনটি বিভাগে পাঁচটি করে মোট ১৫টি শয্যা রয়েছে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। সারা দেশে যেখানে প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ মাদকের বিষে আক্রান্ত সেখানে মাত্র এই কয়টি শয্যায় কীভাবে সম্ভব। ঢাকার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে কমপক্ষে ২০০-২৫০ শয্যায় উন্নীত করা এবং চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষিত করার জন্য আলাদা ইউনিট খোলা হচ্ছে। বিভাগীয় শহরের নিরাময় কেন্দ্রকে ২০০-২৫০ শয্যায় উন্নীত করার চিন্তা করা হয়েছে। বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। বেসরকারি ২৩৬টি নিরাময় কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৬০টি শয্যা আছে। এক্ষেত্রে তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই কাজে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়গুলোর সহযোগিতা পেতে আমরা গিয়ে তাদের সঙ্গে মিটিং করছি। চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তারা কাজ শুরু করেছে। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে মাদকবিরোধী ৩০ হাজার কমিটি করা হয়েছে। মাদকবিরোধী আইনের সংশোধনও প্রয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে সিসাবার রয়েছে। এগুলোকেও আইনে সংযোজন করা জরুরি।

পাঠকের মতামত

১৫০ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে ২৮৫ সেনাকে নিয়ে ফিরবে মিয়ানমারের জাহাজ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জা‌নি‌য়ে‌ছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ ...

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...