প্রকাশিত: ১৮/১০/২০১৮ ৬:৩৩ পিএম

অনলাইন ডেস্ক – পকেটে মাত্র ৬শ টাকা। বুকে বিরাট স্বপ্ন। ঝাঁকড়া চুলের এক তরুণ উঠেছিলেন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের এক হোটেলে। আজ থেকে আরও ৩৫ বছর আগে চিরতরুণ রকস্টার পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানীতে। গান গেয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন, অর্জন করেছেন কোটি মানুষের হৃদয়। তবু স্বপ্নটা বুঝি তার পূরণ করে যেতে পারেননি। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, বাংলা গান পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল হয়ে দাঁড়াবে। আক্ষেপ করে বলতেন, আমি, আমরা এখনো সে স্বপ্নের পেছনে ছুটছি।

আইয়ুব বাচ্চু বিশ্বাস করতেন দেশের তরুণরাই বাংলাদেশকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় নিয়ে যাবে। তাই তিনি যেখানে গান করতে যেতেন সেখানেই তরুণদের দেশপ্রেমের বাণীতে উজ্জীবিত করতেন। তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে নিজের কঠিন জীবন পাড়ি দেওয়ার গল্প। তিনি বলতেন, ‘আমার সন্তানেরা ছোটবেলা থেকে আমার মুখে একটা গল্প শুনে অভ্যস্ত। এই ঢাকা শহরে ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম। উঠেছিলাম এলিফ্যান্ট রোডের একটি হোটেলে। সেই আমি কিন্তু এখনো কাজ করে খাচ্ছি। পরিবার-বন্ধুবান্ধব সবাইকে নিয়ে ভালোই আছি। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা শহরে আমি যখন ৬০০ টাকা নিয়ে আসি, তখন এখানে আমার অনেক আত্মীয়স্বজন থাকতেন। আমি কারও কাছেই যাইনি। বিপদে কারও মুখাপেক্ষী হইনি। নিজেকে গড়ে তুলেছি। কাজে হাত দিয়েছি। কাজের পর কাজ করেছি। এখনো করেই যাচ্ছি। দিনরাত কাজ করে একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।’

তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে তিনি প্রায়শ বলতেন, ‘সামনে অনেক পথ খোলা ছিল। সবকিছু পাশ কাটিয়ে গেছি। চলার পথে এমন কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিল, যাদের নাম শুনলে আতঙ্কিত হতে হতো। শুধু তা-ই নয়, আমার পরিচিত অনেকে মাদকসেবনও করত। চাইলে আমিও হয়তো বখে যেতে পারতাম। কিন্তু মিউজিকই ছিল আমার ধ্যানজ্ঞান। আমি সেই লক্ষ্যে ছুটে গেছি। যেটার সঙ্গে আমার পরিবার একমত না এ ধরনের লাইফস্টাইল থেকে নিজেকে সংবরণ করেছি। কারণ, আমার মা কষ্ট পেলে দেশ কষ্ট পাবে। আত্মীয়-স্বজনেরা মন ছোট করবেন। দেশ কষ্ট পেলে দুনিয়া কষ্ট পাবে। এ জন্যই নিজেকে সংবরণ করেছি। আমি বলতে চাই, লোভ সংবরণ করা খুব দরকার।’

তরুণদের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে তিনি বলেছিলেন, তরুণেরা ভুল কিছু করবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। বিপথগামী আর তরুণ এক নয়। সম্পূর্ণ আলাদা দুটি শব্দ এবং আলাদা দুটি সত্ত্বা। তরুণ প্রজন্মই বাংলাদেশকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় নিয়ে যাবে। শুধু আমার নয়, এটা ৬৮ হাজার গ্রাম এবং সাড়ে ১৬ কোটি মানুষেরও বিশ্বাস বলে মনে হয়। ঢালাওভাবে তরুণদের যেন অপবাদ দেওয়া না হয়। আমাদের দেশে অসংখ্য মেধাবী তরুণ আছে। এই অসংখ্য উদ্যেমী তরুণের মধ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজের মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড়েরা।

রকস্টার আয়ুব বাচ্চুর সঙ্গীত জীবন :
বাচ্চুর সঙ্গীতজগতে যাত্রা শুরু হয়। ফিলিংস ব্যান্ডের সাথে ১৯৭৮ সালে। তাঁর কন্ঠ দেয়া প্রথম গান “হারানো বিকেলের গল্প”। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত রক্তগোলাপ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ময়না (১৯৮৮) এর মাধ্যমে।

১৯৯১ সালে বাচ্চু এল আর বি ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম এল আর বি প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের “শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি”, “ঘুম ভাঙ্গা শহরে”, “হকার” গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম সুখ ও তবুও বের হয়। সুখ অ্যালবামের “সুখ, “চলো বদলে যাই”, “রূপালি গিটার”, “গতকাল রাতে” উল্লেখযোগ্য গান। “চলো বদলে যাই” বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অবিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে “কষ্ট কাকে বলে”, “কষ্ট পেতে ভালোবাসি”, “অবাক হৃদয়”, ও “আমিও মানুষ”। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ঘুমন্ত শহরে প্রকাশিত হয়। তিনি অনেক বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। “অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে” বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তাঁর গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।

২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম ‘বলিনি কখনো’ প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালে এল আর বি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম যুদ্ধ। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। ছয় বছর পর তার পরবর্তী একক অ্যালবাম জীবনের গল্প (২০১৫) বাজারে আসে। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। গানের কথা লিখেছেন সাজ্জাদ হোসাইন এবং সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আইয়ুব বাচ্চু নিজে।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...