প্রকাশিত: ১৮/০২/২০১৭ ১১:২২ এএম

কক্সবাজার জেলার অন্যতম একটি উপজেলা পেকুয়া। ২০০২ সালের ২৩ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলাকে ভাগ করে স্বতন্ত্র পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্টা হয়। ১৩৯.৬৮ বর্গ কিলোমিটারের ১লক্ষ ৫০ হাজারের মতো লোকের বসবাসের এ এলাকায় ইউনিয়ন রয়েছে ৭টি। উত্তরে বাঁশখালী, দক্ষিনে মহেশখালী ও চকরিয়া, পূর্বে চকরিয়া আর পশ্চিমে কুতুবদিয়া উপজেলা। রয়েছে মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। এছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির বসবাস রয়েছে। শিক্ষার হার ৩৪ এর কাছাকাছি। অতীতে রাজনৈতিক কিছু অস্থিরতা থাকলেও লবণ, মৎস্য, ধান, বন পাহাড় নদ নদী ভরা এ উপজেলায় সকল ভাষাভাষী ও ধর্মের সাধারণ লোক সহবস্থানে বসবাস করে থাকে।

এ বিপুল জনগোষ্টির মাঝে আমার মফস্বল সাংবাদিকতার শুরু ২০১০সালের দিকে। কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকার মাধ্যমে কিছুদিন সাংবাদিকতা করার পর বর্তমান কর্মস্থল দৈনিক বাঁকখালীতে কাজ শুরু করি।

অদ্যবধি জেলার বহুল প্রচারিত প্রিয় সম্পাদক ও প্রকাশক সাইফুল ইসলাম সম্পাদিত রঙ্গিন পত্রিকা দৈনিক বাঁকখালী ও জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় পেকুয়া প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে জড়িত রয়েছি। এরই মাঝে পেকুয়ার মফস্বলে কাজ করা আমার প্রিয় নবীন প্রবীন সাংবাদিকদের সাথে গড়ে ওঠে সৌহায্যপূর্ণ সম্পূর্ক। এখনো তাদের নিয়ে আমার পদচারণা।

উপজেলা সকল সেক্টরের মতই মফস্বল সাংবাদিকতা দেখতে এবং উপলব্ধি করতে লাগলাম। খুব চ্যালেঞ্জিং এক পেশা। ছুটে চলতে হয় প্রত্যন্ত গ্রাম বন পাহাড়ে। দৌড়াতে হয় অপরাধিদের তথ্য সংগ্রহে। পত্রিকায় তুলে ধরতে হয় উন্নয়ন সমস্যা আর সম্ভবনার দিকগুলো। এরই মধ্যে মাথায় রাখতে হয় তথ্য প্রযুক্তি আইন। একটু নড়বড় হলেই মামলা আর জামিন ছাড়া জেল। তারপরও সব ভয়কে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে মফস্বলে কাজ করা সাংবাদিকরা দিকদিগান্তরে।

ইতিমধ্যে ক্রাইমজোন হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে পেকুয়া। হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল বেদখল, অস্ত্রের প্রকাশ্যে মহড়া, হানাহানি আর মামলা নিত্যসঙ্গি। রাজনৈতিকভাবে এলাকা শান্ত থাকলেও অপরাধ প্রবণতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। শীর্ষ অপারাধীরা এখন প্রকাশ্যে। হয়রানির শিকার হচ্ছে নিরহ জনগন ও শ্রমিক ভাইদের। মিথ্যাভাবে জড়িয়ে পড়া মামলায় অনেক সাধারণ নাগরিক ঘরছাড়া। এদের পিছনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে পিছনে ছুড়তে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের। অনেক সময় কিছু পুলিশের বেপরোয়া জীবন ও অস্ত্রের ভয় দেখানোর রিপোর্ট করতে সংবাদ মাধ্যমে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অস্ত্রবাজি ধারণ করতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের। যার কারণে গুলি খেয়ে মরতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের। এছাড়াও হতাহত ও লাঞ্চিত নিত্যদিনের ঘটনা। তারপরও আইনশৃংখলা ও এলাকার শান্ত পরিবেশ বজায় রাখতে অবিরাম ছুটে চলা মফস্বল সাংবাদিকদের।

১৬ ফেব্রুয়ারী বৃস্পতিবার সকাল ১১টা। পেকুয়ার আলোচিত একটি ঘটনা। মিডিয়ার কারণে সারা বাংলাদেশ জেনে গেল পেকুয়া থানার একজন এসআই ক্লোজড হয়ে পুলিশ লাইনে চলে গেল। তা পুরাতন কথা। এরই মাঝে কি ভুমিকা ছিল মফস্বল সাংবাদিকদের? কে ওঠাইয়েছিল আলোচিত সেই ছবিটি?

প্রতিদিনের ডিউটি মতো এসআই তৌহিদ পেকুয়া চৌমহুনীতে ডিউটি করছিলেন। হঠাৎ চৌমহুনীর মোড়ে একজন বয়স্ক গাড়ির ড্রাইভারকে ওই এসআই লাঞ্জিত করা শুরু করলেন। কান ধরিয়ে নাকে খত দিতে বাধ্য করলেন। শতশত লোক ওই জায়গায় দাড়িয়ে থাকলেও এ দৃশ্যটি কেউ মোঠোফোনে অথবা অন্য কোন উপায়ে ধারণ করেনি।

তার পাশে অবস্থান করছিলেন পেকুয়ার মফস্বলে কাজ করা এক সিনিয়র সাংবাদিক। দ্রুত চিত্র ধারণ করলেন এসআই তৌহিদের অভিনব শাস্তির কান্ডটি। এ বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে অন্যান্য সাংবাদিকরা জানার পর ছুটে গেলেন তার কাছে। শুরু হল সংবাদ লেখনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো ওই ছবি।

দলমত নির্বিশেষে নিন্দা জানিয়ে ওই ছবি পোষ্ট করে সারাদেশের অনেক মানুষ প্রতিবাদ মুখর হল। অনলাইনে প্রকাশ হল বস্তুনিষ্ট সংবাদ। দৃষ্টি আকর্ষন হল পেকুয়া থানার ওসি, এএসপি সার্কেল, পুলিশ সুপার, ডিসিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। সংবাদিকদের কাছে ছোটাছুটি শুরু এসআই তৌহিদের। চেষ্টা করলেন যে কোন কিছুর বিনিময়ে আপোষ। না পেকয়ার সকল সাংবাদিক এক বাক্য জবাব ‘না’। অবশেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ৭ঘন্টার ভিতর তাকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে নিয়ে গেল।

মফস্বলের প্রত্যেকটা সাংবাদিক পরিচিত। সবাই সবাইকে চেনে। ওখানে কোন সংবাদ হলে তাকে টার্গেট করা সহজ। ঢাকায় সেটা সম্ভব না। মফস্বলের সাংবাদিক প্রতি মুহুর্তে প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তারা কখনো পাইনা সরকারী সুবিধা আর আর্থিক অনুদান। একটু এদিক ওদিক হলেই চলে যায় চাকরি। নেই কোন ঝুঁকিভাতা আর ওয়েজ বোর্ড।

পাশাপাশি মফস্বলে একজন সাংবাদিক তার পেশাগত কারণে যখন কোন প্রতিকূলতার মাঝে পড়ে তখন তার নিয়োগকারী সংবাদ মাধ্যম তাকে সহয়তার জন্য কতটা এগিয়ে আসে সেটি নিয়েও অনেক প্রশ্ন। আর মফস্বলে মৃত্যুবরণ করা সাংবাদিকদের খবর কয়জনে রাখে।

সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ইউনিয়নগুলোও রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিভক্ত। এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো মফস্বল সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কতটা কাজ করতে পারছে?

তবে বর্তমান সরকার জাতীয় ও মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে মফস্বল সাংবাদিকদের পিআইবি’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। আমি নিজেই কিছুদিন আগে ঢাকায় গিয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করেছি। সামনের দিনগুলোতে মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে বলে আমি আশাবাদি। আমার মতো সকল মফস্বল সাংবাদিক আশাবাদি।

লেখক সাংবাদিক
মো: ফারুক
পেকুয়া-কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...