প্রকাশিত: ১৪/০৮/২০১৮ ৭:৪১ এএম , আপডেট: ১৬/০৮/২০১৮ ১১:২৫ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
‘ভাই, আমাকে আপনাদের নাম্বার সেভেন জার্সিধারী ফুটবলারটির একটা অটোগ্রাফ নিয়ে দেবেন?’ শনিবার রাতে ডিনারের সময় রেস্ট্রুরেন্টে এভাবেই বাংলাদেশী মিডিয়া কর্মীদের কাছে আবদার প্রেমা ওয়াংচুক ও দর্জি গেলসেনদের। এরা
সাধারণ ভুটানি নাগরিক বা ফুটবল দর্শক নন। দু’জনই ভুটান ফুটবল লিগের খেলোয়াড়। প্রেমা ওয়াংচুকের ক্লাব ফুনসলিং এফসি, দর্জি গেলসেন খেলছেন রিজঝুং এফসিতে।

তারা এবারের সাফে বাংলাদেশ – পাকিস্তান ম্যাচ দেখেছেন। তাতেই মুগ্ধ বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার খেলায়। তার খেলা এই ভুটানিদের দারুন পছন্দ হয়েছে। বিশেষ করে মনিকার পাসিং, ড্রিবলিং, চেজিং স্টাইল মনে ধরেছে তাদের। এই দুই ফুটবলার জানান, তাদের পক্ষে বাংলাদেশ দল যেখানে অবস্থান করছে সেই বাবেসার হোটেল আরিয়াতে যাওয়া সম্ভব নয়, বারণ আছে। তাই সংবাদ কর্মীদের দারস্থ হয়েছেন।

শুধু খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা চাকমাই নন। বাংলাদেশ অধিনায়ক ময়মনসিংহের মারিয়া মান্ডা, দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার সিরাজগঞ্জের আঁখি
খাতুনের খেলাও পছন্দ তাদের। প্রেমা ওয়াংচুকের মতে, বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডটা চালাচ্ছেন ৭ (মনিকা) ও ৮ নং জার্সিধারী ( অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা)। তবে বেশী পছন্দ মনিকাকে। প্রেমা ও দর্জির সাথে আসা উগেন লিডুপ, ফু জং, তেরসিংরাও ভক্ত হয়ে গেছে বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবল দলটির এই ভুটানিরাদের দলটির সবারই কমবেশি সম্পর্ক আছে ফুটবলের সাথে। প্রেমা ও গেলসেন ছাড়া বাকীদের ফুটবল পর্ব শেষ হয়েছে স্কুলেই।

এখন তারা গ্র্যাজুয়েশন করছেন। প্রেমা ভুটান অনূর্ধ্ব-১৩ জাতীয় দলের প্রতিনিধি ছিলেন। বাংলাদেশ একবার তার যাওয়া হয়েছে বাবার সাথে। বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক আমদানি করেন তার বাবা।

বাংলাদেশের ফুটবলের প্রতি তাদের ভালোবাসার শুরু গত বছর সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে অনুষ্ঠিত পুরুষদের সাফ অনূর্ধ্ব -১৮ ফুটবল থেকে। যে আসরে বাংলাদেশ জাফর ইকবালের ম্যাজিকে রানার্সআপ হতে পেরেছিল। নেপালের কাছে ভারতের রহস্যজনক হারে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই খেলা ড্র হলেই শিরোপা হাতে উঠতো বাদশা, সুফিল, জাফরদের।

প্রেমা, গেলসেনদের দৃষ্টিতে এবারও বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা আসরে। এই দুই দলই বেশি শক্তিশালী। এগিয়ে রেখেছেন লাল-সবুজদেরই। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে এবং সোমবার নেপালের বিপক্ষে জয়ের জন্য মারিয়া, মনিকাদের আরো ভালো খেলার পরামর্শ তাদের।

আরো পড়ুন : ড্রতেই চলে তবু চাই জয়

এক ম্যাচ হাতে রেখেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত চার দলের। ফলে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা ফুটবলে সোমবার স্রেফই গ্রুপ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই বাংলাদেশ-নেপাল ও ভারত-ভুটানের মধ্যে। ‘এ’ গ্রুপে টানা দুই হার শ্রীলঙ্কার। একই পথে হেঁটেছে ‘বি’ গ্রুপের দল পাকিস্তানও। তাই এক খেলায় জিতেই শেষ চারে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, গত আসরের ফাইনালিস্ট ভারত, নেপাল ও ভুটান। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে আজ বিকেল ৪টায় মুখোমুখি ভারত ও ভুটান। সন্ধ্যা ৭টায় মাঠে নামবে ফেবারিট বাংলাদেশ ও নেপাল।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১৪-০ গোলে পরাজিত করে পাকিস্তানকে। গত পরশু নেপাল ৪-০ গোলে জয় পায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। অন্য দিকে শ্রীলঙ্কা প্রথম খেলায় ১২-০ গোলে হারে ভারতের কাছে। পরশু দ্বিতীয় খেলায় মহিলা ফুটবলের ইতিহাসে ভুটানের প্রথম জয়ের সাক্ষী এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি। হাফ ডজন গোলের ব্যবধানে জয় ছিল ভুটানিদের। সেমিফাইনাল নিশ্চিত হওয়া এই চার দলের আজকের ম্যাচের গুরুত্ব, সেমির প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত করা। গোল ব্যবধানে এগিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ। তাই আজ তাদের ড্র দরকার নিজ নিজ খেলায়। তবে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখার মিশন তাদের। অবশ্য চার দলের প্রথম ম্যাচের চিত্র ইঙ্গিত দিয়েছে আজ ফেবারিট প্রথম সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ আসরের ফাইনালিস্টরা।

গত বছর এ আসরে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল নেপালকে হারিয়ে। ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে তারা ৬-০ গোলে কাবু করেছিল নেপালিদের। তবে এবার সেই অবস্থানে নেই নেপাল। প্রস্তুতি ভালো বর্তমান নেপাল দলের। পাকিস্তানের অতি রক্ষণাত্মক কৌশলের কাছে তারা চারটির বেশি গোল দিতে পারেনি। অবশ্য বাংলাদেশের কাছে ১৪ গোল খাওয়ার পর নেপালিদের কাছে ‘মাত্র’ চার গোলে হার। এটিকে দলের উন্নতির প্রমাণ বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের কোচ মোহাম্মদ রশিদ। তবে আজ বাংলাদেশ যে অতি সহজে জয় পাবে এমনটি আগাম অনুমান করা হবে বোকামি।

বাংলাদেশ অধিনায়ক মারিয়া মান্ডার মুখেও এবার নেপালকে সমীহ করার কথা। জানান, এবারের নেপাল দল শক্তিশালী। তাদের সাথে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪ গোলে জিতেছি তাই বলে তারা দুর্বল দল ছিল না। কষ্ট করেই জিততে হয়েছে। আজো নেপালের বিপক্ষে কঠোর পরিশ্রম করে জয় পেতে হবে।

নেপাল-পাকিস্তান ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছেন মারিয়া মারিয়ারা। তখনই নেপাল দলের দুর্বলতা ধরে ফেলেছেন তারা। জানান, ওদের ডিফেন্স একত্র হয়ে যায়। উন্মুক্ত হয়ে পড়ে দুই উইং সাইড। আমরা ৪-৪-২ তে খেলে তাদের এ গ্যাপকে কাজে লাগাতে চাই। একই সাথে খেলব ওয়ান টাচ টু টাচে। তার মতে, এ ম্যাচেও আমাদের বড় ব্যবধানে জিততে হবে, তা নয়। জয়ই মুখ্য। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে যা খেলেছি আজো তেমনটি করতে চাই। সে সাথে ফিনিশিংটা ভালো হতে হবে।

এ দিকে নেপাল দলের কোচ গঙ্গা গুরুং আজকের ম্যাচে এগিয়ে রাখলেন বাংলাদেশকেই। তার মতে, ‘বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। গতবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি সব সাইডেই ব্যালান্সড।’ নেপাল মহিলা দলের অধিনায়ক যমুনা গুরুংয়ের বড় বোন এই কোচ তথ্য দেন, তার দল গত সাফে তেমন প্রস্তুতি নিয়ে খেলতে পারেনি। এবার এসেছে দেড় মাসের প্র্যাকটিস নিয়ে। গতবারের দলের মাত্র পাঁচজন এসেছে ভুটানে। বললেন, আজ আমরা শতভাগ দেবো বাংলাদেশের বিপক্ষে।

পাঠকের মতামত