প্রকাশিত: ১৫/০৯/২০১৯ ৯:৫১ এএম

এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে ব্যারাক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলোর নানা অজুহাতের কারণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরও উখিয়া-টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। দাতারা বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফ্রি মুভমেন্ট বা অবাধে চলাফেরা।

এখানটায় বাংলাদেশ সরকারের আপত্তি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। এদিকে ভাসানচরের সর্বশেষ অবস্থা ও রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বিষয়ে আগামীকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে।

সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। সেখানে একটি আধুনিক ব্যারাক নির্মাণ করেছে নৌবাহিনী। এক লাখ লোকের বসবাসের উপযোগী করে ১৪৪টি ব্যারাক হাউস নির্মাণ করার কাজ বেশ আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের অন্য যেসব দফতর রয়েছে তারাও ইতিমধ্যে ভাসানচরের ব্যারাককে ঘিরে তাদের সব কাজ শেষ করেছে।

এখন সব দিক দিয়েই প্রস্তুত ভাসানচর। শুধু রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার পালা। সূত্র জানায়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরও এখন এক লাখ রোহিঙ্গার স্থানান্তর ঝুলে আছে বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা, দাতা সংস্থা ও বিদেশিদের কারণে। শুরু থেকেই সাহায্য সংস্থাগুলো ভাসানচরের বিরোধিতা করে আসছে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, একেবারে চর এলাকা, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো যাবে নাÑ এমন সব অজুহাতে দাতারা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়ার বিরোধিতা করে।
এ অবস্থায় সরকার একাধিকবার দাতা ও সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের ভাসানচরে নিয়ে গেছে। পুরো এলাকা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রথম দিকে দাতারা ভাসানচরের বিরোধিতা করলেও এখন আর আগের মতো বিরোধিতা করছে না। তবে তারা বেশ কয়েকটি শর্ত দিচ্ছে। এসব শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ভাসানচরে যেসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের ফ্রি মুভমেন্ট বা অবাধ চলাফেরার সুযোগ দিতে হবে। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে দাতারা বলছে, রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়া থেকে ভাসানচরে যাওয়ার পর তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন কক্সবাজারে থেকে যাবে। তাদের সঙ্গে দেখা করা, বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনায় দ্রুত তাদের যোগাযোগ করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই এ শর্ত। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এই শর্ত কোনোভাবেই মানা হবে না। কারণ রোহিঙ্গারা শরণার্থী। তাদের অবাধ চলাফেরার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের কোথাও শরণার্থীদের অবাধে চলাফেরার কোনো নজির নেই, সুযোগও নেই। এর বাইরে দাতাদের আরেকটি শর্ত ছিল, ভাসানচরে খাদ্যপণ্য ও ওষুধসামগ্রী রাখার সমস্যা এবং তাদের প্রতিনিধিদের থাকার ব্যবস্থা। এই দুটো সমস্যা ইতিমধ্যে সমাধান করা হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্য ও ওষুধসামগ্রী রাখার জন্য গুদাম তৈরি করা হয়েছে। আর সাহায্য সংস্থা ও দাতাদের প্রতিনিধিদের থাকার জন্য ইতিমধ্যে তিনতলা একটি আধুনিক ভবন (রেস্টহাউস) ও অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। দাতা ও সাহায্য সংস্থার আরেকটি শর্ত হচ্ছে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা ও লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া কঠিন। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এসবের জন্য সব সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়া হবে।
কক্সবাজারে যেভাবে মেরিন ড্রাইভ ধরে দামি গাড়ি হাঁকিয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দাতা ও সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিরা সহজেই পৌঁছে যান, ভাসানচরের ক্ষেত্রে সেটি বেশ কঠিন। তবে সরকার বলছে, ভাসানচরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। সবকিছু ঠিক করে দেওয়া হবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী করে ইতিমধ্যে ভাসানচরকে প্রস্তুত করা হয়েছে। নৌবাহিনী সেখানে ব্যারাক নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে আগামীকাল সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। আশা করছি সেখান থেকে সিদ্ধান্ত জানা যাবে যে কবে নাগাদ এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে বাড়িঘর ছেড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আসে। আগে থেকেই উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছিল। এ অবস্থায় সরকার টেকনাফ ও উখিয়া থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয়। এরই অংশ হিসেবে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ভাসানচরে ৪৫০ একর জমির ওপর রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌবাহিনী এই ব্যারাক নির্মাণ করে। সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঠকের মতামত

কঠোর নির্দেশনার পরও মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা ছাড়ছে না ভোটের মাঠ

সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিতে কঠোর নির্দেশনা ...

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের ফের ...