প্রকাশিত: ২০/১১/২০১৭ ৭:৪৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১০:৫২ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হবে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার চরঈশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচরে। সমুদ্রে জেগে ওঠা ওই চরকে এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও দ্বীপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ‘আশ্রয়ণ-৩’ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।

এতে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা। পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করার কথা প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এরই মধ্যে বিশদ প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করেছে। গতকাল রবিবার পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে ওই প্রকল্প নিয়ে।

পিইসি বৈঠকের পর পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে এটিই প্রথম বৈঠক। বৈঠক থেকে প্রকল্প সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ওই সব তথ্য পাওয়ার পর এটি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। মন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উত্থাপন করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অক্টোবর নাগাদ ওই চরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে প্রকল্পটির নীতিগত অনুমোদন ও সম্মতি দিয়েছেন। মিয়ানমার থেকে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের পর এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত আবাসনগুলোতে দেশের ভূমিহীন দরিদ্র নাগরিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করার পর থেকে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকেই প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। রোহিঙ্গাদের ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে আলোচনা চালালেও কোনো সুফল মিলছে না। বরং চীন, রাশিয়া ও জাপানের মতো প্রভাবশালী দেশগুলো মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট আরো দীর্ঘায়িত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা এখনো বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। তবে কাজটি বেশ কঠিন। বিশ্বের অনেক দেশই এমন কথা বলছে। ’

ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য আবাসন গড়ে তোলা এবং দ্বীপের নিরাপত্তাবিষয়ক ওই প্রকল্পের সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাব্যবস্থাসহ আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার অংশ হিসেবে চরে বনায়ন ও পশু পালনের ব্যবস্থা থাকবে। চরটি সমুদ্রের মধ্যে হওয়ায় চর রক্ষাকারী উপকূলীয় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে, সুপেয় পানির জন্য নলকূপ স্থাপন এবং পুকুর খনন করা হবে। সমুদ্রের জোয়ার থেকে রক্ষার জন্য থাকবে শেল্টার হোম। ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম অর্থবছর দুই হাজার ৭১ কোটি টাকা এবং পরের অর্থবছরে ২৪১ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের বর্ণনায় বলা হয়েছে, বিপন্ন রোহিঙ্গাদের বিশাল স্রোত পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের অধিবাসী ও পরিবেশ দুটির জন্যই হুমকিস্বরূপ। বর্তমানে এত বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত মানুষের কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে স্থান সংকুলান করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে পাহাড়ি জমি ও বনাঞ্চল। টেকনাফ ও উখিয়ার স্থানীয় অধিবাসী পাঁচ-সাত লাখ। সেখানে নতুন-পুরনো মিলিয়ে ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এতে নানা সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

প্রকল্পের বিস্তারিত বর্ণনায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রকল্পটি গ্রহণ করে। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলাধীন চরঈশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচর দ্বীপটিকে নাগরিক সুবিধাদি, যেমন—বাসস্থানের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন এবং দ্বীপটির নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দায়িত্ব প্রদান বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উল্লিখিত নীতিগত অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন তিনি।

গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টার নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ভাসানচর পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সেখানে বর্তমানে কোনো স্থায়ী জনবসতি নেই। তবে ওই চরে প্রায় আট হাজার মহিষ পালন করা হচ্ছে। ১৫-২০ জন রাখাল অস্থায়ী আবাস গড়ে বসবাস করছে ওই দ্বীপচরে।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...