প্রকাশিত: ১৫/০৫/২০২২ ১:২৭ পিএম

শামীমুল ইসলাম ফয়সাল, উখিয়া:
ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের সময় একই পরিবারের ৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
১৩ মে শুক্রবার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের মুখে চেকপোস্টে তাদেরকে আটক করা হয়।
১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানিয়েছেন, ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে পালিয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সরাসরি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে আসে আটকৃত রোহিঙ্গারা।
আটক রোহিঙ্গাদের উদ্বৃতি দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা নাইমুল হক জানান, ভারতে হঠাৎ গ্রেপ্তার এবং পুলিশি নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে আসতে শুরু করেছে। সেই সাথে বাংলাদেশের ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অবস্থা ভালো হওয়ায় তাঁরা ভারত থেকে পালিয়ে আসার কথা জানায়।
আটকৃত রোহিঙ্গাদের আত্মীয়স্বজন ক্যাম্পে বসবাস করছে। তাদের আর্থিক এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভারতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের চেয়ে ভালে হওয়াতে তাঁরা ক্যাম্পে চলে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়।
আটকৃত রোহিঙ্গারা পুলিশকে জানায়, ভারতের জম্মু থেকে পালিয়ে দিল্লি আসে এক দালালের মাধ্যমে, দিল্লি থেকে বাসে ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের আসামের গোহাটি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
বাংলাদেশে প্রবেশের পর আরেক দালাল কুমিল্লা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে, সেখান থেকে বাসে করে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে তাঁদের আত্মীয় স্বজনের কাছে পৌঁছে দেয়।
তাঁরা আরও জানায়, সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিএসএফ তাঁদেকে পিঠিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’ এর কার্ড কেড়ে নিয়ে তাঁদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
ইতিমধ্যে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের হাতে ২০ পরিবার আটক হয়েছে। ২০ পরিবারের প্রায় ১৪০ জন রোহিঙ্গা নাগরিক, তাদেরকেও ভারত থেকে পালিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশ করার সময় আটক করা হয়।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা পুলিশকে জানায়, ভারতের জম্মুতে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবার বসবাস করে। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে পালিয়ে উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে চলে এসেছে। যারা আছে তারাও বাংলাদেশে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে দালাল চক্রের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানান, আটক রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন চেক করে দালাল চক্রের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দালালরা রোহিঙ্গাদের ফোন থেকে তাঁদের সব ধরণের তথ্য মুছে দিয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু না থাকার কারণে অন্য কোনভাবে দালালদের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জের নির্দেশে কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আটক রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তারা নির্যাতনের মুখে ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতের জম্মু-কাশ্মীর চলে গিয়েছিল। এখন তারা সেখান থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফের চলে আসছে।

পাঠকের মতামত