প্রকাশিত: ২৭/০৯/২০১৬ ৭:৩১ এএম , আপডেট: ২৭/০৯/২০১৬ ৭:৩৬ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টের মাত্র এক কিলোমিটারে (সুইমিং জোন) পর্যটকেরা গোসলে নামতে পারেন। কিন্তু এ সৈকতের আরও ১১৯ কিলোমিটারে গোসলে নামার ব্যাপারে রয়েছে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা। অরক্ষিত এ সৈকতে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে কিংবা ভেসে গেলে উদ্ধারের জন্য কেউ নেই সেখানে।

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, দীর্ঘ এ সৈকত কাজে লাগানোর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। উল্টো নানা অবকাঠামো নির্মাণ করে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। চাঁদার টাকায় সৈকতের লাবণী পয়েন্টের কয়েক কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। পরিকল্পনা থাকলেও অর্থসংকটের কারণে এ কমিটি সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, ইনানী, হিমছড়ি সৈকতে পর্যটকের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করতে পারছে না।

গত রোববার রাতে পর্যটন করপোরেশনের মোটেল শৈবালে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় বিশ্ব পর্যটন দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। তিনি বলেন, সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সৈকতকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে লাবণী পয়েন্টের প্রায় এক কিলোমিটারকে ‘সুইমিং জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যটকেরা শুধু এই অঞ্চল দিয়ে সমুদ্রে গোসলের জন্য নামতে পারবেন। কোনো পর্যটক বিপদে পড়লে তাঁদের উদ্ধারের জন্য এ সৈকতে ডুবুরি আছেন। অন্য সৈকত দিয়ে গোসলে নামা নিষিদ্ধ। কারণ, সেখানে উদ্ধারকর্মী নেই।

বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত হলেও আমরা এ সৈকত কাজে লাগাতে পারছি না। দেশি পর্যটকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টের কয়েক কিলোমিটার ভরপুর থাকলেও বিদেশি পর্যটক টানতে কিছুই করা হচ্ছে না। ১১৫ কিলোমিটারের বেশি অরক্ষিত সৈকতের উন্নয়নে পর্যটন মন্ত্রণালয় কোনো বরাদ্দ দিচ্ছে না। চাঁদার টাকায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি বিশাল সৈকত রক্ষণাবেক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে।’

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, লাবণী পয়েন্টের আশপাশে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস নির্মাণ করা হলেও পর্যটকের নিরাপদ গোসল, সুবিধা আর সেবা বৃদ্ধি নিয়ে কারও নজর নেই।

সমুদ্রে গোসল করতে নেমে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ইয়াছির লাইফগার্ড স্টেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, লাবণী পয়েন্টের সুইমিং জোন ছাড়া সৈকতের অন্য এলাকা দিয়ে পর্যটকদের গোসলে নামা নিষিদ্ধ। অনেকে অরক্ষিত সমুদ্রে নেমে বিপদে পড়ছেন।

সৈকত ভ্রমণে আসা নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জগলুল আহমদ বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম এই সৈকত কাজে লাগিয়ে সরকার হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারে। বিশেষ জাল দিয়ে ঘিরে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, ইনানী ও শহরের লাবণী পয়েন্টে পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করে দিতে পারে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী বলেন, কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশ রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিচ্ছে।

দ্য কক্স টু ডে হোটেলের ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, এখন তেমন পর্যটক নেই। তারপরও বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে অতিথিদের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকছে। কয়েক দিনের জন্য কক্ষ ভাড়াও ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। একই কথা জানালেন সৈকতের লাবণী পয়েন্টের হোটেল কল্লোলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ আহমেদও।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান বলেন, পর্যটক না থাকায় কক্সবাজারের ৪৫০টি হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস-কটেজের ৮০ শতাংশ কক্ষ খালি পড়ে আছে।

এদিকে টেকনাফ সৈকত সড়কের পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। এ কারণে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফ পৌরসভার জিরো পয়েন্ট থেকে সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের পিচ উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রামের পর্যটক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কয়েক বছর পর এখানে বেড়াতে এসে বিস্মিত হলাম। আগের সেই সৌন্দর্য নেই। জোয়ারের আঘাতে সৈকত ভেঙে ছোট হয়ে আসছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইট-সুরকির ভাঙা অংশ।’

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সুহানা জিয়া ও জিয়াউল করিম এবং সাবিনা ইয়াসমিন-মাশেকুর রহমান দম্পতি বলেন, সৈকতে নেমে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর মোটরসাইকেল নিয়ে সৈকতে বখাটেদের চলাফেরার কারণে পর্যটকদের হেনস্তার শিকার হতে হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) টেকনাফ উপজেলা প্রকৌশলী আবসার উদ্দিন বলেন, সড়কটির জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ বলেন, সৈকতে বাড়াবাড়ির কারণে কিছুদিন আগে ১১টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। সুত্র প্রথম আলো

পাঠকের মতামত