প্রকাশিত: ০৯/০৭/২০১৮ ১০:০৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৫৭ এএম

ডেস্ক নিউজঃ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। যে দেশটিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ দেশ হিসেবে তারা নিজেদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। বাংলাদেশের সরকার যদি টেকসই প্রযুক্তি উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে পারে, তাহলে এই স্যাটেলাইট ডিজিটাল বাংলাদেশের দরজা খুলে দিতে পারে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজেশানের পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে। যেভাবে সেলফোন টাওয়ার এবং গ্রামীণফোন প্রকল্প বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোকে এক লাফে অনেকটা এগিয়ে নিয়েছিল। স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছে ফ্রান্স ও ইতালির অ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠান থালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। উৎক্ষেপণ করেছে এলোন মাস্কের মালিকানাধীন মার্কিন মহাকাশ ফার্ম। এবং এটাকে স্থাপন করা হয়েছে রাশিয়ার কাছ থেকে লিজ নেয়া অর্বিটাল স্লটে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির সাথে বিশ্বায়নের পৃথিবীর একটা সমন্বয় গড়ে উঠতে যাচ্ছে।

প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৪৮ মিলিয়ন ডলার। এটা বার্ষিক জাতীয় বাজেটের প্রায় ১৯০ ভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করাটা সহজ নয়। ১৬৩ মিলিয়ন মানুষের দেশ এটা, যেখানে ২০১৬ সালে গড়ে পরিবারপ্রতি আয় ৬০০ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে মাত্র। অধিকাংশ বাংলাদেশীই স্যাটেলাইটের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তাই এই খাতে বিনিয়োগের কারণে রাজনৈতিক বিভাজনও তৈরি হয়েছে। বর্তমান সরকার এবং তার মিত্ররা এর ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছে এবং এটা যে জাতির জন্য অহংকারের বিষয়, সেটা বলার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বিরোধীরা এটি নিয়ে সমালোচনা করছে এবং কিভাবে এই বিনিয়োগ পরিশোধ করা যাবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

জনগণের গর্বের জায়গাটি এখানে বাড়তে পারে কারণ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে, রেমিটেন্স বাড়াবে, নতুন যে ফোর-জি প্রযুক্তি চালু হয়েছে, এর সাথে সংযোগ বাড়বে, আরও টেলিভিশন চ্যানেল ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হবে।

নীতি নির্ধারকরা একটা প্রকল্পকে কেন্দ্র করে মনোযোগ দেয়ার কারণেই এই স্যাটেলাইটটি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য স্পেস সহযোগিতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি পৃথিবী পৃষ্ঠের ৪০ শতাংশ এলাকা কাভার করবে, তাই বাকি অঞ্চলের জন্য বিশ্বের অন্যান্য স্যাটেলাইট সেবাদাতাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে বাংলাদেশকে। তাছাড়া প্রক্সি নেটওয়ার্ক ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কোন সেবা দিতে পারবে না বাংলাদেশ যেখানে ৩ মিলিয়ন বাংলাদেশী অভিবাসী বাস করছে।

ন্যান্য দেশকে সেবা প্রদান

বর্তমানে বিদেশী অপারেটরদের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইডথ কেনার জন্য বাংলাদেশ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি যে ১৫ বছর সক্রিয় থাকবে, এ সময়টাতে বাংলাদেশের ২১০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া নেপাল, মিয়ানমার, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তানের মতো দেশগুলোকেও সেবা দিতে পারবে বাংলাদেশ। ট্রান্সপন্ডার লিজ দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রায় এক বিলিয়ন ডলার এবং প্রাসঙ্গিক সেবা বিক্রি করে আরও দেড় বিলিয়ন ডলার অর্জন করতে পারে। এই কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনার জন্য সরকার বাংলাদেশ কমিউনিকেশান স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড গঠন করেছে। স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্য অর্ধেক ব্যবহৃত হবে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য। বাকিগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোর সার্ভিস চ্যানেলগুলোর জন্য মোতায়েন করা হবে। এখানে একটি সমস্যা হলো– ২৬টি ট্রান্সপন্ডার হলো কু-ব্যান্ডের, যেটা সম্প্রচারের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ইন্টারনেট ফ্রিকোয়েন্সি এখানে ব্যয়বহুল হবে। সে কারণে স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি পুরোপুরি কাজে লাগানো না-ও যেতে পারে।

নতুন প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপনের জন্য সরকার এইচএসবিসি ব্যাংক থেকে ২০৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। স্যাটেলাইটের সক্ষমতা সাধারণত উৎক্ষেপণের আগেই বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশ আগামী আট বছরের মধ্যে দেশের ভেতরে ও বাইরে স্যাটেলাইট সেবা বিক্রির পরিকল্পনা করছে। কিন্তু এ ব্যাপারে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এবং বাজার কৌশলের ব্যাপারগুলো এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

বিশ্বমান বজায় রাখা

এজন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, সাইবার নিরাপত্তা এবং মহাকাশ প্রশিক্ষণ বাড়ানোর মাধ্যমে বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছতে হবে। এই কর্মসূচিকে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজে লাগাতে হলে সরকারকে অবশ্যই যোগাযোগ, নীতি ও প্রশাসন, কৌশলগত নীতি প্রণয়ন ও বিশেষ করে স্পেস যুগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশ স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশান কৃষি, বনায়ন, ফিশারিজ, ভূতত্ব, কার্টোগ্রাফি, পানি সম্পদ, ভূমি ব্যবহার, আবহাওয়া, ভূগোল, সমুদ্রবিদ্যা, বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং অন্যান্য গবেষণা খাতে স্পেস ও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির উন্নয়ন করেছে। কিন্তু এই সেন্টার আন্তর্জাতিকভাবে সেভাবে সম্পৃক্ত নয় বা স্পেস অপারেশানের ব্যাপারেও অতটা মনোযোগী নয়।

প্রতিবেশী যে সব দেশের স্যাটেলাইট সেবার প্রয়োজন রয়েছে, তাদের কাছে এই সেবা বিক্রি করতে হলে এই সব স্ট্যান্ডার্ডগুলো পূরণ করতে হবে। এ সব দেশের অধিকাংশই চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ সবেমাত্র তার প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। অন্যদিকে ভারতের স্যাটেলাইট রয়েছে ৮৪টি, চীনের ২৪৪টি, পাকিস্তানের তিনটি। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য স্বল্প খরচের স্যাটেলাইট সেবা দিচ্ছে চীন। একই সাথে বৈশ্বিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য স্পেস প্রযুক্তির উন্নয়নও অব্যাহত রেখেছে তারা। চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে কটন রুট গড়ার জন্যে কাজ করছে ভারত। তারা কাস্টমার ফ্রেন্ডলি স্যাটেলাইট সেবা এবং বলিউডসহ অনেকগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে এটা গড়ার চেষ্টা করছে। চীন, ভারতসহ অন্যান্য মহাকাশ শক্তিধর দেশগুলোর টার্গেটে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যেহেতু জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ, তাই এখানে স্পেস সার্ভিসের বড় বাজার রয়েছে।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...