প্রকাশিত: ১২/০৮/২০১৮ ৯:৫০ এএম , আপডেট: ১৬/০৮/২০১৮ ১১:৩১ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক :
উখিয়া-টেকনাফে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থানের কারণে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। বিশেষ করে সীমিত অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার মধ্যে জরুরি বিভাগে রোগিদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে এবার সদর হাসপাতালে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক জরুরি বিভাগ। যেখানে থাকবে বিশ^মানের সব সুযোগ-সুবিধা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন জরুরি বিভাগে যে পরিমাণ রোগি আসে সেই অনুযায়ী পর্যাপ্ত অবকাঠামো, সরঞ্জাম এবং চিকিৎসা সামগ্রীর মানদ- নেই। ঘাটতি রয়েছে জনবলেরও। বর্তমানে রোহিঙ্গা আসায় এ সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প উপায় বের করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে এগিয়ে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস (আইসিআরসি)। সংস্থাটি বিশে^র উন্নত দেশগুলোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মত করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালেও একটি জরুরি বিভাগ তৈরী করে দিচ্ছে। যেখানে বিশ^মানের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা ও সরঞ্জাম থাকবে।
প্রকল্পটির কাজ ২০১৭ সালে শুরু হলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে আগামীকাল রোববার থেকে। রোববার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আইসিআরসি’র সমঝোতা স্বাক্ষর হবে।
বর্তমান যে জরুরি বিভাগ রয়েছে সেখানে সবকিছুই অপরিকল্পিত। যেখানে জরুরি বিভাগ সেখান থেকেই রোগি, রোগির স্বজন ও দর্শণার্থীরা হাসপাতালে প্রবেশ করে। এরফলে জনজট সৃষ্টি হয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এছাড়া এক কক্ষেই জরুরি বিভাগের সব ধরণের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।
আইসিআরসি ইমারজেন্সি ডিপার্টমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রামের আওতায় নির্মিতব্য জরুরি বিভাগ হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এই বিশ^মানের জরুবি বিভাগ তৈরী করা হচ্ছে।
বর্তমানে যে জরুরি বিভাগ রয়েছে, সেখানেই গড়ে তোলা হবে বিশ^মানের জরুরি বিভাগটি। পুরাতন জরুরি বিভাগটি ভেঙে সেখানে নতুন জরুরি বিভাগের ডিজাইন অনুযায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এটি চালু হলে জরুরি বিভাগে শুধুমাত্র জরুরি অবস্থার রোগি ও রোগির সাথে মাত্র একজন স্বজন প্রবেশ করতে পারবেন। হাসপাতালে প্রবেশের পথটিও পরিবর্তন হয়ে যাবে। বর্তমানে জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে প্রবেশ করা হয়। কিন্তু আধুনিক জরুরি বিভাগ নির্মিত হলে দর্শণার্থীদের জন্য সেই প্রবেশ পথটি বন্ধ হয়ে যাবে। হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা প্রবেশের পথ করা হবে দক্ষিণপাশের মর্গের সামনে থেকে।
নতুন জরুরি বিভাগটি রোগিদের জন্য তিনটি জোনে ভাগ করা থাকবে। এগুলো হল- লাল জোন, হলুদ জোন ও সবুজ জোন। ট্রাইএইজ সিস্টেমে রোগী বাছাই করণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে কোন রোগি কোন জোনে যাবে। জরুরি বিভাগে কোন সংকটাপন্ন রোগি আসলে প্রথমে ওই রোগিকে লাল জোনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে ভর্তিযোগ্য হলে সবুজ জোন হয়ে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে চলে যাবে রোগি। আর কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রেখে ছেড়ে দেওয়ার উপযোগী রোগি হলে হলুদ জোনে রাখা হবে।
নতুন এই জরুরি বিভাগ হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বাউন্ডারী দেয়ালে আরও একটি গেইট খোলা হবে। যাতে রোগি বহনকারি গাড়ি গুলো এক গেইট থেকে প্রবেশ করে অন্য গেইট থেকে দ্রুত চলে যেতে পারে। সাধারণ মানুষের ভীড় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জনও্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে জরুরি বিভাগে।
বর্তমানে জরুরি বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। কিন্তু নতুন জরুরি বিভাগ হলে আরও জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। তাই নতুন জরুরি বিভাগটি চালু সরকারের পাশাপাশি আইসিআরসি থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী দেওয়া হবে। যাতে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করা যায়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন আব্দুর রহমানের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ডা. শাহীন আব্দুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের কোথাও এই ধরণের বিশ^মানের জরুরি বিভাগ নেই। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রথমবারের মত নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানের উপস্থিতিতে সদর হাসপাতালে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। নানা কারণে এতদিন দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়নি। আগামী রোববার আইসিআরসি’র সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সুলতান আহমেদ সিরাজী। এরপর থেকে দৃশ্যমান কাজ শুরু হবে। কাজ চলাকালীন চিকিৎসাসেবা চালু রাখার জন্য মর্গের পাশের গেরেজে অস্থায়ী জরুরি বিভাগ চালু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ রোগি আসে সে অনুযায়ী সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই ৫০০ জনের বেশি রোগি ভর্তি থাকে। গত বৃহস্পতিবার রোগি ভর্তি ছিল ৭০০ জন। এই জরুরি বিভাগটি গড়ে তোলা হলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। কারণ অত্যাধুনিক জরুরি বিভাগটি হয়ে গেলে সৌদি আরবের কেএস রিলিফ ফান্ডের সহযোগিতায় নতুন করে ২৫০ শয্যা বৃদ্ধির করা হবে।
ডা. শাহীন বলেন, এটি সারাদেশের জন্য পাইলট প্রকল্পও হিসেবেও কাজ করবে। সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট স্টাফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এখানে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বাথরুমে ফেলে যাওয়া সেই নবজাতকের ঠাঁই হল নার্স মিনারার কোলে

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাথরুম থেকে উদ্ধার হওয়া ২ দিনের ফুটফুটে নবজাতককে দত্তক নিলেন ...

ঈদগাঁওতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ইউপি নির্বাচনে কারসাজি ও দুর্বৃত্তায়ন সহ্য করা হবেনা

আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, দীর্ঘ আট বছর পর ...