প্রকাশিত: ২০/০৭/২০১৮ ৯:০১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৩০ এএম

ডেস্ক নিউজ – মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৩ মার্চ। ১৯৭১ সালে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেন। চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের অন্যতম সাক্ষী অলি। স্বাধীনতাযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরবিক্রম খেতাব প্রদান করে।

অলি আহমদের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলায়। তার বাবার নাম আমানত ছাফা ও মায়ের নাম বদরুননেছা। তার স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম, তাদের দুই মেয়ে দুই ছেলে।

১৮ জুলাই, বুধবার মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অলি আহমদ।

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই কর্নেল অলি ১৯৭১ সালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বলেন, ‘পরিতাপের বিষয়, দীর্ঘ ৩০, ৪০, ৪৭ বছর পরও এই দেশ দুর্নীতিবাজ এবং সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। অথচ মুখে সবাই গণতন্ত্র ও সুশাসনের কথা বলি। কিন্তু আমরা সবাই (রাজনীতিক) ক্ষমতার পূজারী, ক্ষমতা ধরে রাখতে আগ্রহী ও লোভী। দেশের জনগণের ব্যাপারে আমাদের মাথায়, চিন্তা-চেতনায় নাই। আমরা. আমাদের পরিবার-পরিজন ও দলের চেলা-চামুণ্ডারা শুধু সুখে থাকুক, সেটাই মূল বিবেচনায় নিচ্ছি।’

সাবেক এই সেনা কর্মকতা বলেন, ‘একজন তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ক্ষমতাধর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সাথে নিয়ে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ করি। ওই সময় আমাদের নেতা ছিলেন শহিদ রাষ্ট্রপতি, তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। সেই দিনের সঠিক ঘটনা এবং কীভাবে কী হয়েছিল, সেসব কথা মনে হলে এখনও শরীর শিউরে ওঠে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাটা নিশ্চিত নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়ার মতো।’

অলি আহমদ বলেন, ‘আমাদের ছিল বাঙালিদের জন্য দেশপ্রেম। দেশের জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকরণ, সুশাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ, এককথায় সর্বোপরি পিছিয়ে পড়া বাঙালিদের নিজস্ব সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার একটা পরিকল্পনার উদ্দীপনা।’

* রাষ্ট্র পরিচালনায় শাসক হিসেবে জিয়াউর রহমানকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

অলি আহমদ: শহিদ জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সাহায্য করেছি। তিনি খুবই সৎ, ধৈর্যশীল, দক্ষ প্রশাসক এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়তে আগ্রহী ছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে সাহায্য করেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ভারত থেকে নিয়ে আসতে ড. কামাল হোসেন সাহেবকে অনুমতি দিয়েছিলেন। তার (জিয়াউর রহমান) সময় সর্বপ্রথম খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যদিও সেই (খাল খনন) কর্মসূচি শতকরা ১০০ ভাগ আমারই ছিল।

১৯৭৫-এর শেষ দিক থেকে ৭৬, ৭৭ সালে দেশে চরম অরাজকতা বিরাজ করছিল। সামরিক বাহিনীতে ১৯টি বিদ্রোহ হয়েছিল। তবে আমরা সুপরিকল্পিতভাবে ধীরে-সুস্থে ঠান্ডা মাথায় সবকিছু আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করেছিলাম। কারণ সমাজের দক্ষ ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরাই জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন, যাদের অনেকের বয়স ৭০-এর ঊর্ধ্বে ছিল। যেমন: ইঞ্জিনিয়ার রশীদ, এম এম হুদা, আনোয়ারুল হক।

জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন অলি আহমদ। সংগৃহীত ফাইল ছবি

*একজন সেনা কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে এবং কী উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়েছেন?

অলি আহমদ: আমি ১৯৭৯ সালের ১৪ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের অনুরোধে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করি। তখনো আমার চাকরির ১৩ বছর বাকি ছিল। পরবর্তীতে তারই অনুরোধে বিএনপির রাজনীতিতে যোগদান। উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই।

তৎকালীন সময়ে চট্টগ্রাম-১৩ (বর্তমান চট্টগ্রাম-১৪) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই এবং যুব মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের সামরিক শাসন জারি পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল ছিলাম। সেই এরশাদই ছিল শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।

* অভিযোগ করছেন, অথচ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেননি কেন?

অলি আহমদ: আপনার (প্রতিবেদক) পরিবারের ইনচার্জ কে? যদি হয় বাবা, তাহলে সেই বাবা যদি কিছু না করে তাহলে কী করার থাকে?

* বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে নিজে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। উদ্দেশ্য কতটুকু অর্জন করতে পেরেছেন বলে মনে করেন?

অলি আহমদ: বিএনপিতে ছিলাম না, বিএনপি সৃষ্টি করেছি। বিএনপি জিয়াউর রহমানের দল নয়। বিএনপির নাম দেওয়া আমার, বিএনপি আমার হাতে গড়া, প্রেসিডেন্ট জিয়া আমার হাতে গড়া। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, এ নিয়ে একটি বই লিখেছি, সেখানে যা দেখেছি, যা হয়েছে সবকিছুই লিপিবদ্ধ রয়েছে।

* আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই নিজেদের মুক্তিযোদ্ধাদের দল হিসেবে দাবি করে আসছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনায় বেশি থেকেছে। অথচ তারপরও আমরা কতটুকু মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি?

অলি আহমদ: মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সবাই। তবে অনেকে তালি বাজানো মুক্তিযোদ্ধা, অনেকে হিন্দুস্থানের আশ্রয় শিবিরে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৮১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত অস্ত্রধারী (রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছে) কোনো মুক্তিযোদ্ধা এ দেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হননি।

জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যশোরে খাল খনন কর্মসূচিতে অলি আহমদ। সংগৃহীত ফাইল ছবি

* নির্বাচনকালীন কিংবা সহায়ক সরকারের মন্ত্রিপরিষদে আপনাকে স্থান দেওয়া হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে একটি গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য?

অলি আহমদ: মন্ত্রিপরিষদে যাচ্ছি–বিষয়টি নিয়ে আমিও পত্র-পত্রিকায় লেখা দেখেছি। আমার অভিমত জানতে চেয়ে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এ বিষয়ে অনেক ফোন-কল পেয়েছি। অথচ এই ধরনের বিষয়ে আমার সাথে কারো কখনো আলোচনা হয়নি। এমনকি আমার কাছে কেউ প্রস্তাব দেয়নি, প্রস্তাব পাইনিও।

* একাদশ নির্বাচনে অংশ নেওয়া, না-নেওয়া প্রসঙ্গে এলডিপির ভাবনা কী?

অলি আহমদ: খালেদা জিয়ার কারামুক্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন ইস্যুতে ২০-দলীয় জোটগতভাবে বিশেষ করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপির) কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আলোচনা করা হয়নি। তাই নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা না নেওয়ার বিষয়ে আমার দল বা ২০-দলীয় জোটের কেউ যদি কোনো মন্তব্য করে থাকেন, তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

* একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে আসন ভাগাভাগি বা আসন চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আছে কি? থাকলে কোন পর্যায়ের দ্বন্দ্ব?

অলি আহমদ: নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হোক, সময় বলে দেবে। তবে যে বা যারা নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে আসন সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্যে দিয়ে আসছেন। তারা ২০-দল ও এলডিপির ক্ষতি করছেন। কেননা আপাতদৃষ্টিতে এই সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির আওয়াজ অবান্তর। খালেদা জিয়া কারামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে ২০-দলীয় জোট বা এলডিপির কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য নাই।

* রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

অলি আহমদ: শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যে যতই বলুক, তিনি বিশাল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেক ভুল ছিল, ভুলও করেছেন। কারণ এ বিষয়ে তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এইচ টি ইমাম, তৌফিক ইলাহী-এরা ছিল ডিসি, এদেরকে নিয়ে শেখ মুজিব রাষ্ট্র চালাবে, যেখানে অভিজ্ঞ একজন সচিব নাই, মন্ত্রী নাই। লেবার লাগবে ইয়াং, যেমন বর্তমান মন্ত্রিসভা। তবে তিনি যদি তখন কিছু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোককে নিয়ে আসতেন, দায়িত্ব ভাগ করে দিতেন, তাহলে হয়তো রাষ্ট্র ভালোই চালাত।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অলি আহমদের একটি ছবি। সংগৃহীত ফাইল ছবি

* একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সর্ম্পকে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

অলি আহমদ: আপনি (প্রতিবেদক) যদি আমার পরিবার ও দল সর্ম্পকে জানতে চান, তাহলে বলতে পারি। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে পারব না। পত্র-পত্রিকায় যতটুকু উঠে আসছে, ততটুকুই অবগত আছি। কারণ আমি খুব একটা কোথাও বের হই না।

এককথায় বললে, দেশের অবস্থা ভালো না। কখন কী হয়, বলা যায় না। তবে বহুদিন পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রেখেছেন, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ– ‘আপনারা ভোট দিলে, আল্লাহ চাইলে আমি ক্ষমতায় আসব অন্যথায় নয়’। আমিত্ব থেকে এই প্রথম বের হতে দেখলাম।

* একাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য বা বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে আপনার পরামর্শ, অভিমত বা অভিপ্রায় কী?

অলি আহমদ: জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলতে পারবেন। এটা উনাকে জিজ্ঞাসা করলে ভালো হয়। কারণ এই বিষয়ের সঙ্গে আমি যুক্ত নই।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও চীনের ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন?

অলি আহমদ: সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বলেছেন, ‘আমরা (ভারত) বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি’, যা ভারত কখনো বলে নাই। ভারত ২০১৩ সালেও আমাদের ঘরে এসে বলেছে, ‘তোমরা নির্বাচনে যেতে পারো, না গেলে ওরা (আওয়ামী লীগ) একাই নির্বাচন করবে’। এবার কিন্তু তারা এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে না; বরং প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনার) বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে।

আর চীন বলেছে, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তর চাই। প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে? অথচ চীন ইতোপূর্বে কখনো অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্টেটমেন্ট দেয়নি। এখন শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, মিয়ানমার, বাংলাদেশ সবই চীনের এবং পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে টিকিয়ে রাখছে চীন।

  1. * রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আপনার পরামর্শ কী?

অলি আহমদ: ১৯৯৩ সালে আমি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করেছি। আমি জেনারেলকে (মিয়ানমারের) হুমকি দিয়েছিলাম এই বলে যে, দুই সপ্তাহের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই। নতুবা বোমিং (বোমা মারা) করা হবে, খবরদার!’ আমার পাশে ছিল আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ ফারুক। তাকে উদ্দেশ করে আমি বলেছিলাম, ‘একদম চুপ থাকো, আমি ডিপ্লোমেসি করতে আসি নাই, যুদ্ধ করতে এসেছি।’

* ক্ষমতাসীন সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বা কর্মকাণ্ডকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

অলি আহমদ: সরকারের উন্নয়নগুলো হচ্ছে সুপারফিশিয়াল (ভাসাভাসা), যার কোনো ব্যাকআপ ফেসিলিটি নাই। এই উন্নয়নটা সাসটেইনেবল (টেকসই) না। কোনো দেশ অন্য দেশকে একটাও দেবে না স্বার্থ ছাড়া। কারণ পৃথিবীটা হলো গিভ অ্যান্ড টেক, দেওয়া এবং নেওয়ার। তবে এই দেশ গরিব দেশ নয়, এই দেশ ধনী দেশ, বিরাট সম্ভাবনার একটি দেশ। এই দেশের মানুষ দিন-রাত পরিশ্রম করতে পারে, যাদের খুব একটা চাহিদা নাই। ৫০, ১০০ টাকা দিলেই খুশি।

১৯৭৭ সালে খাল খনন কর্মসূচি উদ্বোধনকালে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে অলি আহমেদ। সংগৃহীত ফাইল ছবি

* একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে বলে মনে করছেন?

অলি আহমদ: নির্বাচন কবে হবে, সেটা বলতে পারব না, আমি নির্বাচন কমিশন না। আর নির্বাচন কমিশন হলেও লাভ নাই। কারণ নির্বাচন কমিশনও যা, সরকারও তা। তবে জানুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই।

বর্তমান বিচারব্যবস্থা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

অলি আহমদ: দেশে সকল বিচারপতি, আপ-টু-বটম পলিটিশিয়ান। নন-পলিটিশিয়ান নাই। অবশ্য এটা বিএনপির শাসনামলেও ছিল।

* একাদশ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যত দৌড়-ঝাঁপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আপনাদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না কেন? নাকি ভেতরে ভেতরে অগ্রসর হচ্ছেন?

অলি আহমদ: একাত্তরে আমি সেনাবাহিনীর মাত্র একজন ক্যাপ্টেন ছিলাম, একজন ক্যাপ্টেনের কি বিদ্রোহ করার কথা?কত বড় মেজর জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার পালিয়ে চকির নিচে ঢুকেছে। পরবর্তীতে অনেক বড় মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে!

*১৯৭১ সালে আপনি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের সময় কাছাকাছি ছিলেন?

অলি আহমদ: শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই ঘোষণার ড্রাফট আমি ও উনি (জিয়াউর রহমান) দুজনে মিলে করেছি। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছেন, আর আমি তখন পাশে বসে ছিলাম।

জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও অন্যদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় শ্রীনগরে অলি আহমদ। সংগৃহীত ফাইল ছবি

প্রিয়.কম: ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আপনারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় পর্যায়ের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করছেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা কতটুকু যৌক্তিক বলে মনে করছেন?

অলি আহমদ: ক্ষমতাসীনরা এখন ছায়া দেখলেও ভয় পায়। তারপরও আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি, যাতে করে জনগণ আমাদের বলতে না পারে, ‘আপনারা তো নির্বাচনে অংশ নেন না, ভোটও চান না’। বিদেশিরা যাতে বলতে না পারে, ‘নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আমাদের ডেকে শুধু শুধু প্রতিবেদন দিচ্ছেন’। তবে আমার বিশ্বাস, দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে ব্যক্তি নয়, প্রতীক দেখে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।

* একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে অটোবায়োগ্রাফি লিখছেন কি?

অলি আহমদ: অটোবায়োগ্রাফি লিখছি না, লিখলে অনেকে আমাকে মেরে ফেলবে। কারণ আমি প্রায় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অনেক নেতার ব্যক্তিগত বিষয়ে আদি-অন্ত জানি। তাই আল্লাহ যদি হুকুম করে লিখব, নতুবা লিখব না।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...