প্রকাশিত: ২৭/১০/২০১৮ ৮:০৩ এএম


উখিয়া নিউজ ডটকম::
বহুল প্রতীক্ষিত সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশ-মিয়ানমার চার লেন মৈত্রী সড়ক ক্রমে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। এ সড়কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে অর্থনৈতিক করিডোরের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত সংশ্লিষ্ঠরা। দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত দুই দেশের মধ্যকার মৈত্রী সড়কটি আগামী ২০১৯সালের শুরুর দিকে উদ্বোধন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ অংশে সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পথে হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা উভয় দেশের মধ্যে চালু করা নিয়ে সংশয় কাটছে না।
জানা গেছে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমার বা বিসিআইএম এর মধ্যে অর্থনৈতিক করিডোর বিনির্মাণে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে বাংলাদেশ এ চার দেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপনের কথা বলে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকে বিসিআইএম এর অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চার লেনের মৈত্রী সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় ২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে ২৫০ মিটার মিয়ানমার অংশে এবং বাকি এক হাজার ৭০০ মিটার বাংলাদেশ অংশে। বাংলাদেশ অংশের এক হাজার ৭০০ মিটার সড়কের নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে শুরু হওয়া এ মৈত্রী সড়কটির নির্মাণ কাজ নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশন-এসডাব্লিউও এস এ অধীন কক্সবাজার-১৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটলিয়ান-ইসিবি। উখিয়ার বালুখালী থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের জিরো লাইন পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক বা বর্ডার রোড নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্নের পথে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে বাংলাদেশের ঘুমধুম ও মিয়ানমারের তুমব্রু ঢেকিবনিয়ার এলাকার ভূমি কাঠামো প্রায় একই ধরনের।
প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার রোড নির্মানে প্রায় ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তিন লক্ষ ঘনমিটার মাটি ও দেড় লক্ষ ঘনমিটার বালি ভরাটের প্রাক্কলন রয়েছে। দুই কি. মিটার ফেক্রিবল পেভমেট নির্মাণের মধ্যে উভয় দেশের সীমানা তুমব্রু খাল পর্যন্ত প্রায় ১শ মিটার কাজ বাকি রয়েছে। উভয় দেশের জিরো লাইন বিভেদকারী তুমব্রু খালের উপর ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজও বাকি রয়েছে। ২৪ মিটার দৈর্ঘ্যের চারটি কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রায় ১২২মিটার সাইড ড্রেন নির্মাণ, ৪০ মিটার আরসিসি রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, ৫৪ মিটার ব্রিক মেশনারি রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ কাজও শেষের দিকে।
উল্লেখ্য সড়কটি প্রাক্কলনের প্রথম দিকে দুই লেনের ডিজাইন করা হলেও পরে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ও নির্দেশে এটি সংশোধন করে চার লেনে উন্নীত করা হয়। চার লেনের দু’পাশে সার্ভিস লেন, ফুটপাতসহ হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা সুযোগ সুবিধা সম্বলিত আধুনিক ডিজাইনের সড়কটি অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ও সময়ও বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, সড়কটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন নির্মাণ ও তদারক করছে। এখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তিনি জানান
অপরদিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজা মিয়া ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করে বলেন, উভয় দেশে সড়কের কাজ শেষ হলে একটি অভাবনীয় উন্নতি এবং দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো অগ্রসর হতো। কিন্তু গত বছরের ২৫ আগষ্টের পর মিয়ানমারে অভ্যান্তরিণ সমস্যার কারনে ৭লাখের অধিক রোহিঙ্গা মুসলিম এদেশে পালিয়ে আসে। যার কারনে দু’দেশের মধ্যে কিছুটা সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আশাকরি এটি বর্তমানে নমনীয় হয়ে এসেছে। তিনি দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের কুটনৈতিক প্রচেষ্টায় সীমান্ত বাণিজ্যসহ সব ধরনের সম্পর্ক সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহনের অনুরোধ জানান।

পাঠকের মতামত