প্রকাশিত: ১৬/০১/২০১৭ ৮:২১ এএম

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে সৌদি আরবের বহুজাতিক কোম্পানি আল রাজি, আল বাওয়ানি এবং আল জামিল গ্রুপের মতো বিশ্বখ্যাত শিল্প গ্রুপের বিনিয়োগ আনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। বিনিয়োগে আগ্রহ রয়েছে সৌদি শিল্প গ্রুপগুলোরও। দরকষাকষি চলছে উপযুক্ত জমি ও অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়ে দিয়েছে, বিনিয়োগের জন্য জমির সমস্যা হবে না। চাইলে শুধু সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য এক বা একাধিক অর্থনৈতিক জোন বরাদ্দ দিতে প্রস্তুত রয়েছে সরকার।

সরকারের সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরের পর দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়। সেখানকার বেসরকারি খাতের পাশাপাশি দেশটির সরকারও এখন বাংলাদেশের বড় প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। পরবর্তিত পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের যে টানাপড়েন চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে সৌদি সরকার বিনিয়োগ স্থানান্তরের বিষয়ে ভাবছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ ছাড়া সৌদি আরবের নেতৃত্বে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জোটে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়টিও সৌদি সরকারকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আস্থা জোগাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের

সূত্রগুলো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। সব কিছু মিলে গেলে সৌদিরা এখানে বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ নিশ্চিত করবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নির্মাণ শিল্প, সার, সিমেন্ট এবং তথ্য প্রযুক্তি খাত রয়েছে তাদের আগ্রহের তালিকায়। জানা গেছে, বাংলাদেশ যেমন সৌদি বিনিয়োগ টানতে চাইছে তেমনি দেশটিরও একাধিক বৃহত্তম শিল্প গ্রুপ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত আল রাজি গ্রুপ বিনিয়োগের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)ও সই করেছে। আল জামিল গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদল গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। সরকারি সূত্রগুলো জানায়, সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আল রাজি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসিফ আল রাজি গত অক্টোবরে ঢাকা সফর করে গেছেন। ওই সময় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে সৌদি জিসিসি আইটি ব্লক স্থাপনের জন্য ১০ একর ভূমি বরাদ্দ চেয়েছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি এমওইউ সই হয়েছে।

এ ছাড়া তারা বেসামরিক বিমান কার্গো খাতে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ও ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতেও যৌথ বিনিয়োগে এমওইউ করেছে শিল্প গ্রুপটি। সৌদি আরবের আরেক বৃহৎ শিল্প গ্রুপ আল-জামিল ইন্ডাস্ট্রিজ নির্মাণ শিল্পে আগ্রহী। তারা আধুনিক প্রযুক্তিতে স্টিল কাঠামোর বাড়ি বানাতে চায়। এ নিয়ে বাংলাদেশের স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে গ্রুপটির। এ ছাড়া গত আগস্টে আল বাওয়ানি গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে গেছে। এ সফরকালে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এবং সেনাকল্যাণ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সূত্রগুলো জানায়, সৌদি আরবের বিনিয়োগের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেশটির বিনিয়োগকারীদের জন্য এক বা একাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের জন্য বেজা (বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি)-কে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ওই নির্দেশনা অনুসারে বেজা রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে এরই মধ্যে প্রস্তাবপত্র পাঠিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সৌদি বিনিয়োগ নিয়ে দুই পক্ষের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। একটি বা দুটো বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল শুধু সৌদি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে সৌদি সরকারের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এখন তাদের দিক থেকে সাড়া পেলেই জোন নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বেজার কর্মকর্তারা জানান, চীন, জাপান ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিশেষ বিশেষ শিল্প গ্রুপকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে যেভাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সৌদি শিল্প গ্রুপগুলোকেও সেভাবেই বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...